পেছাবে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার তারিখ, ভয়াবহ সেশনজেটের কবলে উচ্চশিক্ষা

ভয়াবহ সেশন জটের কবলে পড়ছে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো
ভয়াবহ সেশন জটের কবলে পড়ছে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো  © ফাইল ফটো

করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে আগামী ২৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। ১৭ মে থেকে খুলবে হল। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টিকা দিয়ে ক্যাম্পাস খোলার কথা জানানো হয়। তবে সবাইকে টিকা দিতে না পারায় এবয় করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পেছাতে পারে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল খোলার তারিখ।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, এখন করোনার যে অবস্থা তা এ সময়ের মধ্যে তেমন উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বেশির ভাগ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী টিকা দিতে পারেননি। এজন্য হল ও বিশ্ববিদ্যালয় খোলার তারিখ পিছিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে এর মধ্যে অধিকসংখ্যককে টিকা দেওয়া গেলে বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে পারে। আজ বুধবার (৫ মে) উপাচার্যদের বৈঠকে বিষয়টি আলোচনা হবে।

এ প্রসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আগামী ১৭ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবাসিক হল খোলা হবে কিনা সে বিষয়ে আমরা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবো। আমাদের হাতে এখনো অনেক সময় রয়েছে। সিদ্ধান্ত হলে আপনাদের জানিয়ে দেয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের তালিকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। যারা জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দিয়েছে, এরমধ্যে অনেকেই টিকা নিয়েছে। কোভিড পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাচ্ছে, এটা আশার বিষয়। আরো এক সপ্তাহ পরিস্থিতি দেখব আমরা। এর মধ্যে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে থাকেন প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থী। শিক্ষক আছেন অন্তত ১৫ হাজার। তাদের মধ্যে কতজন টিকা পেয়েছেন, সে তথ্য নেই সংশ্লিষ্টদের হাতে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তথ্য সংগ্রহ করে গত এপ্রিলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর পাওয়া গেছে।

এদিকে গত ২৯ এপ্রিল প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে আগামী ১৭ মে থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল খোলার সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘কোভিড পরিস্থিতি এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের টিকাদানের বিষয়টি বিবেচনা করে হল খোলার কথা ভাবা হবে।’

অপরদিকে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় ভয়াবহ সেশনজটে পড়তে যাচ্ছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। বন্ধের মধ্যে অনলাইন ক্লাস চললেও পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। অনেকের অনলাইনেও আগ্রহ নেই। প্রয়োজনীয় ডিভাইসের অভাব, দুর্বল ইন্টারনেটও এতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবমিলিয়ে বড় সঙ্কটে পড়ে গেছে উচ্চশিক্ষা। সীমিত হয়ে এসেছে গবেষণা ও প্রকাশনা কার্যক্রমও।

এ পরিস্থিতিতে অনলাইনে পরীক্ষা আয়োজনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আজ বুধবার (৫ মে) বিকালে জরুরি বৈঠকে বসছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমিটি। বৈঠকে অনলাইনে পরীক্ষা আয়োজনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানা গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের আর কতদিন ঘরে বসিয়ে রাখব। এভাবে শুধু সময় নষ্ট হচ্ছে। তাই অনলাইনে পরীক্ষা আয়োজনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আগামীকাল আমাদের জরুরি বৈঠক রয়েছে। ডিনস কমিটির বৈঠক শেষে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের উদ্যোগে ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় কীভাবে অনলাইনে পরীক্ষা নেয়া যায় সে বিষয়ে এটুআইয়ের একজন প্রশিক্ষক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেবেন।’

ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, উচ্চশিক্ষার প্রায় ৪১ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা প্রায় তিন লাখ। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রায় চার লাখ। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রায় ২৮ লাখ। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে আরও প্রায় পাঁচ লাখ। অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রয়েছেন আরো অন্তত এক লাখ শিক্ষার্থী। করোনার কারণে ১৪ মাস বন্ধ থাকায় এসব প্রতিষ্ঠান সেশনজট আবার ফিরে এসেছে।

এ প্রসঙ্গে ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাস হলেও সফল হওয়া যায়নি। অনলাইন ক্লাসে ব্যাবহারিকেরও সুযোগ নেই। এ সময়ে গবেষণা ও প্রকাশনার যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে। উচ্চশিক্ষার যে ক্ষতি, তা হয়তো আমরা প্রকাশ্যে দেখতে পারছি না। কিন্তু এটা একটা বিশাল ক্ষতি, যা পোষানো কষ্টকর হবে।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence