সনদ পরিবর্তন নয়, অধিভুক্তি বাতিলেই সমাধান দেখছে শিক্ষার্থীরা

লোগো
লোগো

শুধু সনদে পরিবর্তন এনে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় বরং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাত কলেজ শিক্ষার্থী উভয়ের কল্যাণে অধিভুক্তি বাতিলই উপযুক্ত সমাধান বলে মনে করছেন অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করা ঢাবি শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, সনদ পরিবর্তন আন্দোলনের সাময়িক ফলাফল হতে পারে। অধিভুক্তি বাতিল হবে উভয় পক্ষের জন্য কার্যকরী সমাধান। তবে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

অধিভুক্তি বাতিল আন্দোলনের সক্রিয়কর্মী ও ঢাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী আকরাম হোসাইন বলেন, দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আশ্বাসে আন্দোলন সাময়িক স্থগিত করেছিলাম। তবে এর বেশকিছু দিন পার হলেও প্রশাসন আমাদের দাবিকে যৌক্তিক বলে মনে করেছেন। এটাই তার প্রামাণ। আমরা এর জন্য প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই।

দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের পরামর্শ দিয়ে আকরাম হোসাইন বলেন, অধিভুক্তির ফলে উভয় পক্ষের শিক্ষার্থীরা ভুক্তভোগী; এটা সত্যি। আমরা যেভাবে ভুগছি একইভাবে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরাও একাডেমিক কার্যক্রমে পিছিয়ে যাচ্ছে। কেউ কারো কারণে ভুগবে এটা হতে পারে না। সকলের কল্যাণে অধিভুক্ত বাতিল হবে উপযুক্ত সমাধান। ক্যাম্পাস খোলার পর আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবো।

গত বছরের জুলাই থেকে অধিভুক্তি বাতিলের দাবি কয়েক দফায় আন্দোলন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের মুখে গত ২৪ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদকে আহ্বায়ক করে সাত কলেজ সমস্যা সমাধানে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশ দিতে বলা হয়েছিল। প্রশাসনের সমস্যা সমাধানের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করে দেয়।

সাত কলেজের অধিভুক্তির বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, ‘অবৈজ্ঞানিক’ পদ্ধতিতে রাজধানীর সাত সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল। সমস্যার ‘বৈজ্ঞানিক’ সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কাজ করছে।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ সমূহ এবং ঢাবির উপাদানকল্পে পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহের মূল সনদে পরিবর্তন এনেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এখন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মূল সনদ এবং অধিভুক্ত কলেজ ও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ভিন্ন সনদ দেয়া হবে। সম্প্রতি এ সিদ্ধান্ত কার্যকরের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর রীতিমত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সিদ্ধান্তকে ধন্যবাদ জানিয়ে অধিভুক্ত বাতিল আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র ব্যবস্থাপনা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শাকিল মিয়া বলেন, অধিভুক্ত কলেজের ভিন্ন সনদের সিদ্ধান্তকে শিক্ষার্থীরা স্বাগত জানিয়েছে। এটা আমাদের আন্দোলনের ফলাফল। অধিভুক্তি বাতিল আন্দোলন স্থগিত করা হলে আমরা মনে করেছিলাম সব শেষ হয়ে যাবে। এখন বলা যায়, আন্দোলন সম্পূর্ণভাবে বৃথা যায়নি। আংশিক হলেও সফল হয়েছে।

তবে সনদ পরিবর্তন নিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের মাঝে। সরকারি তিতুমীর কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহবুব হাসান রিপন বলেন, সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাদের অধিভুক্ত সাত কলেজের জন্য নতুন সার্টিফিকেট ডিজাইন করেছে। যেখানে আগের সার্টিফিকেটে শুধুমাত্র কলেজের নাম উল্লেখ থাকতো।

রিপন বলেন, এবার আরও একধাপ এগিয়ে আলাদাভাবে কলেজের নামের পাশে ছোট্ট করে ‘Affiliated’ কথা উল্লেখ করে দিয়েছে। তাও আবার ভিন্ন ফন্টে। কি আশ্চর্য! আমাদের বুদ্ধিজীবীদের বুদ্ধি। তাদের এই অকাজ একটি পক্ষকে খুশি করার জন্য করা হলেও সার্বিকভাবে ভালো কোন ফলাফল বয়ে আনবে না।

ঢাকা কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সাইদুর রহমান তানভীর ঢাবির নতুন সনদের ছবি শেয়ার করে ফেসবুকে লিখেছেন, নতুন সার্টিফিকেটের স্পষ্ট ছবি হয়তো অনেকেই দেখেন নি। আপনাদের জন্য কয়েকটি ছবি শেয়ার করলাম। আমার অভিযোগ এই বিষয়ে একটাই, ‘Affiliated/Constituent’ শব্দটা একই ফন্টে লিখতে পারতো। এমনভাবে লেখা হয়েছে, নতুন কেউ দেখলে মনে করবে এটি এডিট করে বসানো হয়েছে।

সাত কলেজের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নেতা ও ঢাকা কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী এ কে এম আবু বকর সনদ পরিবর্তনের বিষয়ে বলেন, সনদ পরিবর্তন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলাফল হলেও আমাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই; না হলেও নেই। ঢাকা কলেজ আমার গর্বের পরিচয়। সনদে এটা উল্লেখ থাকবে এটা এখানে খারাপ কিছু দেখছি না। তবে ভিন্ন ফন্টের বিষয়টি নিয়ে আমরা কথা বলবো।

ঢাবি প্রশাসনের উদ্দেশ্যে আবু বকর বলেন, আমরা কখনো অধিভুক্ত করা কিংবা বাতিলের জন্য আন্দোলন করিনি। তবে এখন শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে অধিভুক্তি বাতিলের যে কথা বলা হচ্ছে; সেটি বাস্তবায়ন পরে, আগে এ ধরনের কোন কথা চিন্তাভাবনা করলেও আমরা ঢাকা অচল কর্মসূচি ঘোষণা করবো। শিক্ষার্থীদের সাথে কোন প্রহসন চলবে না। অধিভুক্ত হওয়ার পর থেকে লাখ লাখ শিক্ষার্থী যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেটার আগে জবাব দিতে হবে।


সর্বশেষ সংবাদ