ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুদের জন্য উপাচার্যের পরামর্শ
- ফরাজি এম ইসমাঈল
- প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২০, ০২:০১ PM , আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২০, ০৩:১২ PM
সম্প্রতি সশরীরে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরীক্ষা পদ্ধতিতেও এনেছে ব্যাপক পরিবর্তন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এবারই প্রথম ৫০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা হতে যাচ্ছে। এমসিকিউ হবে ৩০ নম্বরের। বাকি ২০ নম্বর থাকবে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ভিত্তিতে। সবমিলিয়ে ২০০ নম্বরের পরিবর্তে ১০০’র মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে এই পরীক্ষা।
কিন্তু নতুন এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের শঙ্কা কেমন? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চান্স পাওয়ার কৌশলই বা কী? এসব বিষয়ে জানতে চাইলে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের মাধ্যমে ভর্তিচ্ছুদের পরামর্শ দিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্বিগ্ন না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা পাঠ্যপুস্তকভিত্তিক হবে। আর এটা হলে শহর কিংবা গ্রাম— সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্যই পরীক্ষা কমন। বৈষম্য থাকে না।
উপাচার্য বলেন, শিক্ষার্থীরা যেন কোনোক্রমেই উদ্বিগ্ন না হয়ে পড়ে। তারা যেন কারো শরণাপন্ন না হয়। তাদেরকে পরামর্শ দেব— শিক্ষক যা পড়িয়েছেন, যতটুকু তারা পড়েছেন; সেই সাথে তাদের যে পাঠ্যপুস্তক, তার সাথে যেন তাদের সম্পর্ক নিবিড় হয়। তাহলে তাদের আশঙ্কা করার কোনো কারণ নেই যে, অন্যজন জিতে যাবে আর আমি হেরে যাব।
অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিটা থাকবে শিক্ষার্থীদের বয়স, তাদের শিক্ষার স্তর এবং তাদের পাঠ্যপুস্তকের ওপর। এগুলোকে বিবেচনায় রেখেই বিশ্ববিদ্যালয় যেকোনো যাচাই-বাচাই প্রক্রিয়া বা স্ক্রিনিংয়ের উদ্যোগগুলো নিয়ে থাকে। শিক্ষার্থীদের প্রতি আমাদের পরামর্শ হলো— তাদের যে পাঠ্যবই ছিল, যে কোর্সগুলো তাদের ছিল এবং বিশেষ করে তার বোর্ড অনুমোদিত এবং বোর্ড প্রণীত পাঠবইগুলোর সাথে তারা যদি পরিচিতি লাভ করতে পারে, তাহলে তার কোনো হতাশার কারণ নেই।
উপাচার্য আরো বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়তো আসন সংখ্যা কম, সে কারণে অনেকেই সুযোগ পাবে না— সেটা ভিন্ন কথা। আসন সংখ্যা কম হওয়ার মানে এই নয় যে, যতজন ভর্তি হলো তারাই সেরা। অন্যরা নয়। এটা বলার কোনো কারণ নেই।
অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, অন্যের হেল্প নেয়া, কোচিং নির্ভরশীলতা শিক্ষার্থীকে দীর্ঘমেয়াদে পঙ্গু করে ফেলে। আর যারা পাঠ্যবই নির্ভরশীল তারা খুবই শক্তিশালী, তাদের শিখণ প্রক্রিয়াও খুব মজবুত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিতে কোচিংয়ের প্রয়োজন নেই জানিয়ে উপাচার্য বলেন, শিক্ষার্থীরা যদি তাদের বইয়ের পড়াগুলো সঠিকভাবে অধ্যয়ন করে এবং তাদের শিক্ষকরা যে কথাগুলো বলেছে সেগুলো মন দিয়ে গ্রহণ করে কিংবা নিজে নিজে পড়ে সামগ্রিক বিষয়গুলো অধ্যয়ন করে; তাহলে তো কোচিংয়ের প্রশ্নই উঠে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কোচিং ভর্তি হওয়ার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক সময় যারা কোচিং করতো, ধরেই নেয়া হতো তারা ভালো ছাত্র না। এ কারণে অনেকে গোপনে কোচিং করত।
উপাচার্য বলেন, একজন ভালো ছাত্র যদি তার পাঠ্যবই ও শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে পাঠ্যবইয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জানতে পারে; তবেই তার দক্ষতা অর্জিত হয়। তুলনামূলকভাবে যারা ক্লাসে ভালো না কিংবা নিয়মিত না, যারা বাড়িতে সুযোগ পায় না; তাদেরকে এক সময় কোচিং করানো হতো এবং সেটিকে কোনোক্রমেই সম্মানজনকভাবে দেখা হত না। অভিভাবকরাও সেটা গোপন রাখতো। এ কারণে যে, ওই ছেলে প্রাইভেট পড়ে কিংবা কোচিং করে। এর মানে হলো— সে তুলনামূলকভাবে দুর্বল।
এই ধরনের একটি ধারণা দীর্ঘদিন ছিলো, সেই মূল্যবোধটা ফিরে আসা দরকার। ওটা একটা ভালো মূল্যবোধ ছিলো। তখন শিক্ষকরা পড়াবেন, শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাসে থাকবে এবং পাঠ্যবইয়ের ওপরে তার দখল থাকবে এবং সে ভালো বুঝবে, ভালো জানবে। তাহলে তার আর বাড়তি বিষয় লাগবে না।
মফস্বল বা সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে পরিসংখ্যান, শিক্ষার্থীদের ভর্তির ব্যাপারে একটা আশাব্যঞ্জক দিক হলো— আমরা এমনকি আমাদের অনেকের পূর্বপুরুষ বিভিন্ন প্রতিকূলতা জয় করে গ্রাম থেকে উঠে আসা। তাদের অনেকের কাছেই কিন্তু এই আধুনিক সুযোগ-সুবিধা, কোচিং, টিউশনি, প্রাইভেট এই সুযোগগুলো ছিল না। কিন্তু তারা ভালো করেছে।
এর পেছনে মূল কারণ সম্ভবত একটাই। তা হলো— আমাদের যে পাঠ্যক্রম তার সাথে আমাদের যোগসূত্রতা গভীর ছিল। প্রত্যেক শিক্ষার্থী তাদের মাধ্যমিক স্তরের এবং তার নিচের স্তরের যে পাঠ্যক্রম এগুলোর সাথে তাদের সম্পর্ক ভালো ছিল। এরা কিন্তু লেখাপড়ায় ভালো ছিল। তারা কোচিং সুবিধা পেয়ে ভালো করেছে, সেটা কিন্তু আমি বলি না। তাহলে আমরা কেউ এখানে আসতে পারতাম না।
সুতরাং শিক্ষার্থীরা এখান থেকেও একটা ‘লেসন’ (শিক্ষা) নিতে পারবে। যারা ভালোভাবে অধ্যয়ন করবে, শিক্ষকরা কী পড়িয়েছিলেন, সেটা ‘রিভিজিট’ করেন, বই পুস্তকগুলো উল্টে-পাল্টে দেখে; তাহলে পরীক্ষার্থীদের সমস্যা হওয়ার কথা নয়।