আইনি জটিলতায় বিভাগে ফিরতে পারছেন না রুশাদ ফরিদী
- মোতাহার হোসেন, ঢাবি
- প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০১৯, ০৫:২৪ PM , আপডেট: ০৩ মে ২০২১, ১১:৩৪ AM
আইনি জটিলতার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. রুশাদ ফরিদী নিজ বিভাগে ফিরতে পারছেন না বলে দাবি করেছেন কর্তৃপক্ষ। ফলে ও্ শিক্ষককে বিভাগের সব ধরণের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে হচ্ছে। তবে ড. রুশাদি ফরিদীর দাবি, ঢাবি কর্তৃপক্ষের অনীহা ও অসহযোগিতা কারণেই তিনি বিভাগে ফিরতে পারছেন না।
জানা যায়, ২০১৭ সালে জুলাই মাসে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ড. রুশাদ ফরিদীকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়। সে সময় ড. রুশাদ ফরিদীর বিরুদ্ধে নিজ বিভাগের ৩১ জন শিক্ষক অভিযোগ দিয়েছিলেন। যাতে বলা হয়েছিল, ড. রুশাদ ফরিদীর সঙ্গে তারা কাজ করবেন না। এরপর তাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়। পরে উপাচার্যসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছিলেন সেই শিক্ষক। ঢাবির উপাচার্য, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা), উপ-উপাচার্য (প্রশাসন), রেজিস্টার, বিভাগের সভাপতি বরাবর এই নোটিশ পাঠানো হয়েছিল।
এদিকে, মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে ড. রুশাদ ফরিদীকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে অভিযোগ করে আদালতে মামলা করেন ড. রুশাদ ফরিদী। গত ২৫ আগস্ট উচ্চ আদালত ড. রুশাদ ফরিদীর বিরুদ্ধে সিন্ডিকেটের দেয়া জবরদস্তিমূলক ছুটির আদেশ অবৈধ ঘোষণা করেছে। একইসঙ্গে তাকে কাজে যোগদান করারও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তবে আদালতের রায় হলেও আইনি জটিলতার কারণে সদ্য রায়ের কোন পূর্ণাঙ্গ কপি বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দিতে পারেননি ড. রুশাদ ফরিদী।
এদিকে, তার বিরুদ্ধে দেয়া শাস্তিমূলক আদেশ প্রত্যাহার করে ক্লাসে যাওয়ার ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন তিনি। তবে, গত সোমবার যোগদানের কাগজপত্র বিভাগের অফিসে জমা দিতে গেলে অফিসের কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা জানিয়েছেন, ‘চেয়ারম্যান স্যার জানিয়েছেন উনার অনুমতি ছাড়া কোন চিঠি রিসিভ করা যাবে না’। তখন তিনি চেয়ারম্যান সাথে দেখা করলে চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি ব্যতীত এ ব্যাপারে কোন চিঠি গ্রহণ করতে পারবেন না। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, বিষয়টিকে আইনি প্রক্রিয়া। যদি রায়ের কপি আসে তারা তা বিবেচনা করবেন। রায়ের কপি না আসা পর্যন্ত তারা কিছু করতে পারবেন না।
এদিকে রুশাদ ফরিদীর অভিযোগ, আদালতের রায় হয়েছে কিন্তু রায়ের কপি এখনো হাতে আসেনি। তবে তিনি তার আইজীবীর সাক্ষরিত একটি কপি বিশ্ববিদ্যালয় ও তার বিভাগে জমা দিয়েছেন। যাতে উল্লেখ্য রয়েছে তিনি নির্দোষ। তিনি আরো জানিয়েছেন, যদি বিভাগ বা বিশ্ববিদ্যালয় এ ব্যাপারে আদালতে খোঁজ নিতে চায় তারা নিতে পারে কিন্তু তাকে যেন বিভাগের কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু বিভাগের চেয়ারম্যান চিঠি গ্রহণ না করার কারনে তিনি ক্লাসে ফিরতে পারছেন না। যার প্রতিবাদস্বরূপ তিনি গত দুদিন ধরে ক্লাসে ফেরার দাবিতে অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে একটি প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। প্ল্যাকার্ডে লেখা আছে, ‘আমি শিক্ষক, আমাকে ক্লাসে যেতে দিন’।
বিষয়টি নিয়ে ড. রুশাদ ফরিদী বলেন, রায় হওয়ার পরে আমি বিভাগের চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দেই যে, এ মামলার রায় হয়েছে। আমি নির্দোষ প্রমাণ হওয়ায় আমাকে দয়া করে বিভাগের কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দিন। তখন তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোন কিছু না জানানো পর্যন্ত তারা চিঠি গ্রহণ করতে পারবেন না। এরপর আমি ভিসি বরাবর আরেকটা চিঠি দিয়েছি কিন্তু তার উত্তর এখনো পাইনি।
তিনি আরো বলেন, এটা ক্লিয়ার-কাট আমার সাথে অন্যায় করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী ৯০ দিনের বেশি বাধ্যতামূলক ছুটিতে রাখা যায়না। তারপরেও আমি ৭০০ থেকে ৮০০ দিনের বেশি ছুটিতে আছি। আমি নির্দোষ। আমাকে অন্যায় ভাবে দু’বছর ধরে হেনস্থা করা হচ্ছে। কিন্তু মামলার রায় হওয়ার পরও তাদের এখনো বিন্দুমাত্র সহানুভূতি নাই। তাই রায় হওয়ার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করতে চেয়েছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে যোগদান করতে দিচ্ছে না। আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি আসতে সাময়সাপেক্ষ বিষয় কিন্তু তারা যদি আমাকে কাজ করার সুযোগ না দেয় তাহলে আমাকে আরো পাঁচ থেকে ছয় মাস বসে থাকতে হবে। যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আদালতের রায়ের ব্যাপারে খোঁজ নেয় তা হলে তারা খোঁজ নিতে পারে। তবে পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে আসতে আইনি জটিলতার কারণে একটু সময় লাগবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাচ্ছেন না আমি ফিরে আসি। যেহেতু রায় হয়ে গেছে তারা ইচ্ছা করলে আমাকে নিতে পারে।
বিষয়টি নিয়ে অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপিক ড. শফিকুজ্জামান বলেন, মামলা চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে, আমাদের সাথে নয়। মামলার রায়ের কোন কাগজ আমরা এখনো হাতে পাইনি। মামলার রায় হয়েছে দাবি করে তিনি একটি প্রত্যয়ন পত্র ও পত্রিকার একটি নিউজ অফিস বরাবর জমা দিয়েছেন। কিন্তু আমরাই কাগজ গ্রহণ করিনি। কারণ এটিতো মামলার রায় নয়। আর যদি কোন কাগজ গ্রহণ করতে হয় তাহলে গ্রহণ করবে বিশ্ববিদ্যালয়। কারণ মামলা চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে। উনি বলছেন মামলার রায় হয়েছে অথচ তিনি দেখাচ্ছেন উনার আইনজীবীর একটি প্রত্যয়ন পত্র।
তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের যা বলে আমরা তাই করব। সে ক্লাসে ফেরার বিষয়ে আমাদের কোনো ক্ষমতা নেই। আমাদের আইনের বিরুদ্ধে যাওয়ার কোন ক্ষমতা নাই। আইনের মীমাংসা না হলে আমাদের কিছু করার নাই।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘এই বিষয়টি একটি আইনি প্রক্রিয়া। যা করতে হবে আইনের মধ্য দিয়ে করতে হবে। তবে আমরা বিষয়টি দেখছি।’