রাবিতে শিক্ষক লাঞ্ছনার অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলছে প্রশাসন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়  © লোগো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মো. আমিনুল ইসলাম কর্তৃক আনিত ‘শিক্ষক লাঞ্ছনার’ অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রফেসর ইফতিখারুল আলম মাসউদ, প্রক্টর প্রফেসর মো. মাহবুবর রহমান ও জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক প্রফেসর মো. আখতার হোসেন মজুমদারসহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা।

তাদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বিতর্কের মধ্যে ফেলতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে ভুক্তভোগী শিক্ষকের দাবি, তিনি লাঞ্ছিত হয়েছেন।

সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মোছা. সায়মা হোসেনের অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদন ৩০ অক্টোবর দুপুর ২টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে উপস্থাপন করা হয়। প্রতিবেদন উপস্থাপন শেষে সভায় উপস্থিত প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও শিক্ষকরা সিনেট ভবন থেকে বের হচ্ছিলেন। সেই সময় ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের আরও কয়েকজন শিক্ষকসহ অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম সিনেট ভবনের উত্তর-পশ্চিম গেট দিয়ে বের হন।

আরও জানা যায়, ভবন থেকে বের হওয়ার পর জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক ও প্রফেসর আমিনুল ইসলাম খোশমেজাজে গল্প করছিলেন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক তাদের এ আলোচনায় যুক্ত হন। এক পর্যায়ে অধ্যাপক আমিনুল তদন্তের বিষয়ে কিছুটা উত্তেজিত হয়ে হাত নাড়িয়ে উঁচ্চস্বরে প্রক্টরকে উদ্দেশ করে কথা বলতে থাকেন।

এদিকে, এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শিক্ষক লাঞ্ছিতের অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে আন্দোলনে নামেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরাও এ আন্দোলনে অংশ নেন। এদিকে ভিডিওতে দেখা যায় তাদের মধ্যে শুধু বাকবিতন্ডা হয়েছে, এছাড়া আর কিছু নয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান বলেন, কথোপকথনের সময় প্রফেসর আমিনুল ইসলাম কয়েকবার আমার দিকে তেড়ে আসেন। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক প্রফেসর আখতার হোসেন মজুমদার প্রফেসর আমিনুলের কাঁধে হাত রেখে তাকে শান্ত করে প্যারিস রোডে কিছুদূর এগিয়ে দিয়ে আসেন। এরপর প্রফেসর আমিনুল নিজ বিভাগে চলে যান এবং ঘটনাটি সেখানেই সমাপ্ত হয়।

আরও পড়ুন: জাবি শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগে ৭টি সেলফি বাস আটকে রেখেছে শিক্ষার্থীরা

তিনি আরও বলেন, পুরো সময়ের মধ্যে কেউ কারও গায়ে হাত তোলেননি, ধাক্কাধাক্কি বা শারীরিক লাঞ্ছনার কোনো ঘটনাও ঘটেনি। শিক্ষকদের ভেতরে যে কোন বিষয়ে মতামত, যুক্তি-পাল্টাযুক্তি প্রদান খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় জনসংযোগ প্রশাসক অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন মজুমদার বলেন, আলোচনা শেষে আমি ও প্রফেসর আমিনুল ইসলাম কথা বলতে বলতে একসাথেই বের হয়েছি। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ও রেজিস্ট্রারও আমাদের আলাপে অংশ নেন। এসময় সায়মার তদন্ত নিয়ে কথার কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে আমি প্রফেসর আমিনুলকে কিছুটা এগিয়ে দিয়ে আসি যা এখানেই শেষ। কিন্তু পরে জানতে পারি বিষয়টি শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনা পর্যন্ত রুপ নিয়েছে। শিক্ষকদের মধ্যে এমন কথার কাটাকাটি হয়েই থাকে তবে বিষয়টিকে শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনায় নিয়ে যাওয়া ঠিক নয় বলে জানান তিনি।

শিক্ষক লাঞ্ছিতের অভিযোগ অসত্য ও ভিত্তিহীন দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. ইফতিখারুল আলম মাসউদ বলেন, সম্পূর্ণ অসত্য তথ্যের ভিত্তিতে কিছু ব্যক্তি ঘটনাটিকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অযথা উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করেন। এছাড়াও আমি সহ কয়েকজন শিক্ষকের সম্মানহানি করে বিভিন্ন বক্তব্য ও স্লোগান প্রদান করা হয়, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। সকলের কাছে ঘটনার সত্য জেনে মন্তব্য করার আহবান জানান তিনি।

ভুক্তভোগী শিক্ষক অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘লাঞ্ছিত’ বড় একটা টার্ম। এর সংজ্ঞা ও পরিধি বিস্তৃত। সেদিন সিনেটের ভেতরে একটা মন্তব্য করার কারণে তারা আমার সঙ্গে বাগ‌্‌বিতণ্ডা করেছিলেন; তখন আমি তাদের কিছু বলিনি। কিন্তু বাইরে আসার পরও আমার সঙ্গে উচ্চসরে কথা বলেছেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, রেজিস্ট্রার যেভাবে আমার উপর তেড়ে আসলেন সেসময় লোকজন তাদের না থামালে তারা আমার গায়ে হাত তুলতেন। এটা কি লাঞ্ছনা নয়? মানুষকে শুধু শারিরীক আঘাতকেই কি লাঞ্ছনা বলে?


সর্বশেষ সংবাদ