ফ্যাসিস্টের সহযোগী ও সরকারের সমালোচনা, অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি ঢাবি শিক্ষককে

ড. নীলিমা আখতার
ড. নীলিমা আখতার  © সংগৃহীত ছবি

অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ড ও নেতৃত্বের তীব্র সমালোচনার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নীলিমা আখতারকে সব ধরনের অ্যাকাডেমিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তদন্তে নিরপেক্ষ ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং কমিটিও গঠন করা হয়েছে। সম্প্রতি ফেসবুকে সরকারের সমালোচনা আগে গত বছরের জুলাই আন্দোলনে তার ফ্যাসিস্টের সহযোগী হিসেবে ভূমিকার জন্যও এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

সম্প্রতি ড. নীলিমা আখতার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একাধিক পোস্টে অভিযোগ করেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘লাশের রাজনীতি’ করছেন। একই সঙ্গে তিনি জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের অনুসারীদের ‘মব সন্ত্রাস’-এর জন্য দায়ী করেছেন।

এর প্রেক্ষিতে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা তার ‘বিতর্কিত কর্মকাণ্ড’, ‘স্বৈরাচারের সহযোগী ভূমিকা’, জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে ‘মব’ আখ্যা দেওয়া এবং ‘গণহত্যার পক্ষে অবস্থান’ নেওয়ার অভিযোগ এনে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন।

আজ শুক্রবার (৮ আগস্ট) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘ড. নীলিমা আখতারের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি করার পাশাপাশি অ্যাকাডেমিক কাজ থেকে বিরত রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুসারে এটা হয়েছে। তবে তাকে সাসপেন্ড করা হয়নি, ডিসমিসও বেতনও বন্ধ করা হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে আমরা তাকে (ড. নীলিমা আখতার) অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতেও এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে ড. নীলিমা আখতার বলেছেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার প্রিয় প্রতিষ্ঠান। কিন্তু আমাকে সব প্রশাসনিক ও অ্যাকাডেমিক দায়িত্ব থেকে বিরত করা হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ কোনো প্রশাসনিক বা অ্যাকাডেমিক অপরাধের ভিত্তিতে নেওয়া হয়নি। আমার অপরাধ আমি ফেসবুকে মত প্রকাশ করেছি! আমি ২০ বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছি! আমার বিরুদ্ধে কোনো দিন একটি ছোট্ট অভিযোগও ওঠেনি। শুধু একটি ফেসবুক পোস্টের কারণে আমাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।’

স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার সবারই সাংবিধানিক অধিকার, এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনেও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উল্লেখ আছে জানিয়ে ড. নীলিমা আরও বলেছেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী শিক্ষকদের রাজনৈতিক মতপ্রকাশের অধিকার এবং এমনকি রাজনীতিতে অংশগ্রহণের অধিকার রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রতিনিয়ত রাজনৈতিক বিশ্লেষণ করে থাকেন! ১৯৭৩ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ শিক্ষকদের পেশাগত স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। অথচ একটি ফেসবুক পোস্টের কারণে আমাকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়েছে!’

এটা বাক স্বাধীনতার ওপর আঘাত হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমার আসল অপরাধ আমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী! ২০২৪ সালের আজকের দিনে প্রোফাইল পিকচারে লাল রং না রেখে আমি শোকের মাসের কালো রং ধারণ করেছিলাম, বঙ্গবন্ধুর ছবি দিয়েছিলাম। ২০২৪-এর ১৭ জুলাই আন্দোলনকে প্রতিক্রিয়াশীলদের আন্দোলন হিসেবে আখ্যায়িত করে বক্তব্য দিয়েছিলাম! বলেছিলাম মৌলবাদী শক্তি তরুণদের ব্যবহার করছে। ১৯৯৫ সালে এসএসসি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জনের পর ভোরের কাগজের সঙ্গে সাক্ষাৎকারেই বলেছিলাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমার প্রিয় ব্যক্তিত্ব। আমার অপরাধ—আমি মধ্যপন্থী এবং প্রগতিশীল বাংলাদেশে বিশ্বাস করি, যেখানে মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে! আমার অপরাধ — আমি দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে কথা বলি।’

এর আগে গত (২২ জুলাই) ড. নীলিমা আখতার তার ফেসবুকে পোস্টে লিখেছিলেন,  ‘কোনো ইস্যু নেই, তবু ইস্যু তৈরি করে গত বছর যারা ছোট ছোট ছেলেদের গুলির মুখে ঠেলে দিয়েছিল, তারা এবার বিমান ‘দুর্ঘটনায়’ মৃত মানুষের সংখ্যা নিয়েও অসততা করেছে!’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘তার আগে তারা বঙ্গবন্ধুর জন্মভূমিতে আক্রমণ চালিয়েছে, গোপালগঞ্জের মানুষকে কুকুরের মতো হত্যা করেছে। আজ তারা ছোট ছোট ছেলেদের উপর চড়াও হয়েছে! গত বছর থেকে আজ পর্যন্ত যত লাশ, যত ক্ষত, যত ব্রেইনওয়াশ—তার জন্য দায়ী জামায়াত, নাহিদ গং এবং ড. ইউনূস।’

ড. নীলিমা আক্ষেপ করে বলেন, ‘তরুণরা যাদের দেশ গড়ার কারিগর ভেবেছিল, এখন বুঝতে পারছে—জামায়াত, নাহিদ গং এবং ড. ইউনূস আসলে লাশের কারিগর! এরা দেশনাশের কারিগর!’


সর্বশেষ সংবাদ