ঢাবির শামসুন নাহার হলে কী ঘটেছিল ২০০২ সালের ২৩ জুলাই

ভিসি আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরীর লেখা থেকে

ঢাবির সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী
ঢাবির সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী  © টিডিসি সম্পাদিত

আজ ২৩ জুলাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শামসুন নাহার হল নির্যাতন দিবস। ২০০২ সালের এইদিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন নাহার হলের সাধারণ ছাত্রীদের ওপর রাতের অন্ধকারে পুলিশ নির্মম নির্যাতন চালায়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে এই হামলায় বহু ছাত্রী আহত হন। এর প্রতিবাদে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। আন্দোলনের মুখে টিকতে না পেরে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তৎকালীন ভিসি অধ্যাপক ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী। দিনটির স্মরণে প্রতিবছরের ২৩ জুলাই ‘কালো দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। তবে এবার হল এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কর্মসূচি পালন করা হয়নি।

অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়র ২৪তম উপাচার্য ছিলেন। ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী লাভের পর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ওই বছরের শেষে অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী দায়িত্ব নেন। পরের বছর ২৩ জুলাই শামসুন নাহার হলের এ ঘটনার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অনুরোধে তিনি ৩১ তারিখে পদত্যাগ করেন। এরপর তিনি বাহারাইনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদুতের দায়িত্ব পালন করেন।

২০০২ সালের ২৩ জুলাই শামসুন নাহার হলের আলোচিত এই ঘটনা নিয়ে ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন থেকে প্রকাশিত ‘সৌরভে গৌরবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ গ্রন্থে স্মৃতিচারণমূলক এক লেখা লেখেন অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী।

‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: আমার অস্তিত্বের অংশ’ শীর্ষক ওই লেখায় স্মৃতিচারণ করে তিনি লেখেন, ২০০২ সালের ২৩ জুলাই রাতের শেষ প্রহরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন নাহার হলে পলিশ কয়েকজন ছাত্রীকে গ্রেফতার করলে একটি দুঃখজনক ঘটনার সূত্রপাত হয়। তা দেখে মনে হয় ঘটনাসমূহ সম্ভবত বিচ্ছিন্নভাবে ঘটেনি, খুবই পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে। বলা বাহুল্য সেদিন রাতের পুলিশ অ্যাকশন সম্পর্কে সে মুহূর্তে আমি একেবারেই অবহিত ছিলাম না। ঘটনা সম্পর্কে অবহিত হওয়ার পরপরই আমি ছাত্রীদের রমনা থানা থেকে মুক্ত করে নিয়ে আসি। ঘটনাটি প্রথমে ছাত্রী নির্যাতনের আন্দোলনে সীমিত থাকলেও অল্প সময়ের মধ্যে রাজনৈতিক চরিত্র নেয়।

আরও পড়ুন: ঢাবির শামসুন নাহার হল নির্যাতন দিবস আজ, প্রশাসনের নেই কোনো কর্মসূচি

তিনি লেখেন, এ ঘটনার নেপথ্যে ছিল পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফের আগমনের ঘটনা। তিনি ছিলেন পাকিস্তানের গণতন্ত্র হত্যাকারী সেনাশাসক। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর ভূমিকা ছিল জঘন্য, সেজন্য অনেকে তাকে যুদ্ধাপরাধী বলে অভিহিত করেন। তার আগমনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নানা কর্মসূচি ঘোষণা করে। অনেকের ধারণা প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশররফের ভিজিটকে কেন্দ্র করে পক্ষ-বিপক্ষের মধ্যে সংঘাতময় পটভূমি রচিত হয়, যার আংশিক প্রতিফলন শামসুন নাহার সে রাতের ঘটনা। উল্লেখ্য যে শিক্ষক সমিতির দাবি নামায় আমার পদত্যাগ ছিল না। শামসুন নাহার হলের ছাত্রী, আবাসিক শিক্ষিকা বা শিক্ষক সমিতি কারও দাবি নামায় আমার পদত্যাগ ছিল না। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসছিল, নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষা হচি ছাত্রাবাসগুলো থেকে মাস্তান ও ক্যাডাররা সরে পড়েছিল। অস্ত্রধারীদের বহিষ্কার করা হয়েছিল।

তৎকালীন গণমাধ্যমের সমালোচনা করে তিনি লেখেন, শামসুন নাহার হলের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পত্রপত্রিকায় সত্য-মিথ্যা নানা খবর প্রচারিত হতে থাকে। যার সুবিধামতো খবর প্রচার করেন। এর বেশিরভাগই ছিল দূরভিসন্ধিমূলক। কয়েকটি বস্তুনিষ্ঠ লেখা মধ্য থেকে ড. সাঈদ-উর রহমানের কালে কালান্তরে গ্রন্থ থেকে কয়েকটি লাইন উদ্ধৃত করলাম:

'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তিনি মুখে মুখে আওড়াতেন না, মনের গভীরে লালনও করতেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর যারা এই পদ অলঙ্কৃত করেছিলেন তাদের মধ্যে মাত্র তিনজন ছিলেন সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী। আগের দুজন অধ্যাপক মোজাফফর আহস চৌধুরী ও অধ্যাপক শামসুল হক প্রসন্ন মনে বিদায় নিতে পারেননি। তৃতীয় মুক্তিযোদ্ধ ভিসি অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরীকেও অনুরূপ ভাগ্যবরণ করতে হলো। সেটা। তার দুর্ভাগ্য, না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ভাগ্য তা এই মুহূর্তে বলা যাবে না।'


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!