বিসিএস পরীক্ষার ‘মাস্টার প্ল্যান’

২ ঘণ্টায় ২০০ এমসিকিউ, প্রশ্নপ্রতি সময় ৩৬ সেকেন্ড, যেভাবে সামলাবেন বিসিএস প্রিলির হল

শাকিল আল-আমিন
শাকিল আল-আমিন  © টিডিসি সম্পাদিত

৪৮তম (বিশেষ) বিসিএসের লিখিত (MCQ) ১৮ জুলাই এবং ৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিযোগিতামূলক এ পরীক্ষায় পাস করতে হলে ভালো প্রস্তুতির বিকল্প নেই। যারা প্রথমবারের মতো প্রিলি দিবেন তাদের জন্য পরীক্ষার হলের ২ ঘন্টার একটা মাস্টার প্লান শেয়ার করেছেন ক্যারিয়ার পরামর্শক,  টানা ৪ বার প্রিলি পাশ ও বিসিএস ক্যাডার শাকিল আল-আমিন

বিসিএস প্রিলিমিনারি ২০০ নম্বরের হয়ে থাকে, সময় ১২০ মিনিট বা ৭২০০ সেকেন্ড।। অর্থাৎ প্রতি প্রশ্নের জন্য পাবেন- ৩৬ সেকেন্ড। ঘাবড়ে গেলেন? কীভাবে সম্ভব ২০০টা প্রশ্ন রিডিং পড়তেও ১৫-২০ মিনিট সময় লাগে। আসুন সমাধান দিচ্ছি।

প্রথম রাউন্ড : ২০০ প্রশ্নের মধ্যে এমন ৪০ টা খুব সহজ প্রশ্ন পাবেন যেগুলো দাগাতে আপনার সময় লাগবে প্রায় ২২ সেকেন্ড করে মোট ১৫ মিনিট। আর ৪০ টা পাবেন একটু ট্রিকি, ভেবে দাগাতে হবে ৪০✕৪৫ সেকেন্ড =১৮০০ সেকেন্ড বা ৩০ মিনিট। আর ২০ টা পাবেন মাচ কনফিউজিং অপশন গুলো বাদ দিয়ে দিয়ে  উত্তর করতে হবে ২০✕১.৫ মিনিট = ৩০ মিনিট। এখন আপনি ৭৫ মিনিটে ১০০ টা কনফার্ম করে ফেললেন। মনের ধুকধুকানি কিছুটা কমবে। এই পর্যন্ত জানা প্রশ্ন ভুল করলে আপনার প্রিলি পাশ কঠিন হয়ে যাবে। তাই সাবধান।

এখন সো মাচ কনফিউজিং প্রশ্ন পাবেন ১৫/২০।  যেগুলোর উত্তর টোপের মতো। একটু গভীরভাবে চিন্তা করে, ঠান্ডা মাথায় ভেবে দাগান, যেন ভুল উত্তর না হয়। ২০টার মধ্যে আপনি ৯০% কনফার্ম ১৫টা দাগান। ২/৩ টা ভুল হতে পারে। ব্যাপার না। আপনি এখানে মাইনাস খেয়ে ৮-১০ পেতে পারেন। সময় নিন ১৫ মিনিট।

আরও পড়ুন: ডিগ্রিতে পড়ে প্রথম বিসিএসেই প্রশাসন ক্যাডার

২য় রাউন্ড : আসুন বাকী ৩০ মিনিটের মধ্যে গণিত বাকি অংশ  আর নৈতিকতা ধরুন। যদি আপনি গণিতে স্ট্রং হলে সময় নিন ২০মিনিট আর দুর্বল হলে নিন ১০/১৫ মিনিট। খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে যেটা আপনি একদম ই পারবেন না সেটা চেষ্টা করে সময় নষ্ট করার দরকার নেই। বাদ দিন। নৈতিকতা অংশে সব অপশনই সঠিক মনে হয়। সাবধানে দাগান। ৫ মিনিট ভাবুন। আপনার হাতে আছে আর ১৫/২০ মিনিট। একজন প্রার্থী শেষ ১৫/২০ মিনিট এ ফেল করে। চোখ বন্ধ করে ২০/২৫ টা দাগিয়ে ফেলে। সাবধান! সাবধান! ইতিমধ্যে আপনি ১৩৫-১৪০ টি দাগিয়েছেন। যেখান থেকে ১০-১২ ভুল হতে পারে। ১২টা ভুল হলে ১৮ মাইনাস। (এই হিসাবটা অনেকেই ভুল বুঝে, প্লিজ সতর্ক থাকবেন ) প্রতি ভুল উত্তর এর জন্য ০.৫ নাম্বার + ভুল উত্তরসহ=১.৫ থাকল ১৪০-১৮=১২২।

আরও পড়ুন: এসএসসিতে ৩.৩৮ পেয়েছিলেন, আল-আমিন এখন বিসিএস ক্যাডার

৩য় রাউন্ড : শেষ ১০ মিনিট OMR দেখে( ভরাট না করা প্রশ্নে সরাসরি যাবেন) পারার মতো ১০০শতাংশ ৫ প্রশ্ন কনফার্ম করুন। না পারলে দরকার নেই। 

পরীক্ষার হলে করণীয়
ডারউইন এর বিখ্যাত উক্তিটি হচ্ছে only the fittest will survive for existence পরীক্ষার হলটাও তাই, পরীক্ষা দিবে সাড়ে তিন থেকে চার লাখ, টিকে থাকবে সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২০ হাজার! মাথায় রাখবেন! 

পরীক্ষার হলে ২ ঘন্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ! আপনার এত্তদিনের সাধনা ভেস্তে যেতে পারে! প্রথমেই বলবো লোভ সামলান, হ্যাঁ লোভ সামলাতে বলছি! পিএসসি আপনাকে কিছু কনফিউজড প্রশ্নের লোভ দেখাবে, ফাঁদে পরেছেন তো মরেছেন! অনুমানের শিল্প দেখানোর দরকার নাই! অনেকেই মনে করেন আরে ১৬০ গোল্লা ভরাট করি সর্বোচ্চ ২০ টাই ভুল হলো, তাও তো ১৩০ পাচ্ছি! পরে হিসাব করে দেখা গেল নেগেটিভ মার্কিংয়ে পিএসসি উনার কাছে ২০ পায়! সাধু সাবধান শুধু নেগেটিভ এর জন্য আপনি ধরা খাবেন!আসুন প্রিলিতে টিকার জন্য কি দরকার একটু বিশ্লেষণ করি! ৩৫ তম থেকেই নতুন ধাচের বিসিএস শুরু হয়েছে,  কি প্রিলি, কি লিখিত! 

আরও পড়ুন: টিউশনির টাকায় প্রস্তুতি: ৪৩-এ শিক্ষা, ৪৪-এ পররাষ্ট্র ক্যাডার

বিগত কয়েকটি বিসিএস এর কাট মার্ক্স ১২০ ক্রস করেনি। প্রশ্নের ধরন অনুযায়ী কাটমার্কস ভিন্ন ভিন্ন হয়। তাহলে প্রিলিতে ২০০ তে আপনার ১৫০ পাওয়ার দরকার নাই, ১২০-১২৫-ই সেভ জোন! প্রিলি ফেলের অন্যতম একটা কারণ অনেক প্রার্থী আছেন দুর্দান্ত প্রস্তুতি নিয়েও প্রিলিতে কাছাকাছি গিয়ে ফেল করেন। বিসিএস প্রিলিমিনারি  পাশ না করার সবচে বড় কারন পরীক্ষার হলে ২ ঘন্টার জন্য মাস্টারপ্লান না করা। 

উদাহরণ - অনেকেই গণিত খুব ভালো পারেন। পরীক্ষা শুরু করলেন গণিত দিয়ে। খুব করে আপনি ১৫টা ম্যাথের মধ্যে ১২/১৩ কনফার্ম করে ফেললেন। কিন্তু ঘড়িতে দেখলেন ৩৫/৪০ মিনিট চলে গেছে। আপনি এখানেই ফেল করে বসে আছেন। বাকি ১৮৫ টা প্রশ্নের রিডিং ই পড়তে পারলেন না। আর তাড়াহুড়ো করে জানা প্রশ্নগুলো কনফিউজড উত্তর দিলেন। শেষ। 

কিছু পরামর্শ

* প্রথমেই আপনার কাছে যেটা সহজ অংশ সেটা দিয়ে শুরু করুন। যেমন- বাংলা, বাংলাদেশ বিষয়াবলী ইত্যাদি। গণিত দিয়ে শুরু না করাই উত্তম।। 

*প্রশ্নের ধরন দেখে বুঝতে হবে কঠিন, সহজ নাকি স্ট্যান্ডার্ড। সেভাবেই দাগাবেন। যেমন ৩৫ তম বিসিএসে আমি ১০৯ পাব ভেবে চরম হতাশাগ্রস্ত হয়ে     পড়েছিলাম। কিন্তু টিকালো ৮৮/৯০ এ। আবার ৩৬ এ ১২০+ নিয়েও টেনশন এ ছিলাম। কিন্তু নিল ১১০/১১২ তে। 

* হলে মাথা ঠাণ্ডা রাখা জরুরী।

লেখক: ক্যারিয়ার পরামর্শক ও ৩৬তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে কর্মরত।


সর্বশেষ সংবাদ