তুলনামূলক ধর্মচর্চায় রাবি অধ্যাপক ড. বেলালের অবদান

রাবি অধ্যাপক ড. বেলাল
রাবি অধ্যাপক ড. বেলাল  © সংগৃহীত

ধর্মের নামে বিভেদ বাড়ছে। ঘৃণা ছড়াচ্ছে চরমপন্থা। শান্তি হারিয়ে যাচ্ছে সমাজ থেকে। এই প্রেক্ষাপটে জরুরি সত্যভিত্তিক ধর্মচর্চা। প্রয়োজন সহিষ্ণুতা ও আন্তঃধর্মীয় বোঝাপড়া। এ কাজে অসাধারণ অবদান রেখে চলেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ও কলা অনুষদের ডিন ড. মোহাম্মদ বেলাল হোসেন।  তুলনামূলক ধর্মচর্চার ক্ষেত্রে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অসামান্য অবদান আছে তাঁর। ধর্মীয় সম্প্রীতি, সহিষ্ণুতা এবং আন্তঃধর্মীয় বোঝাপড়ার প্রসারে তিনি যেমন একাধিক গবেষণাধর্মী গ্রন্থ রচনা করেছেন, তেমনি গবেষণা, সেমিনার এবং আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশনার মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন এক অনন্য পাঠ ও গবেষণার ধারা।

ড. বেলাল হোসেন এখন পর্যন্ত তুলনামূলক ধর্ম বিষয়ক ৪টি গ্রন্থ রচনা করেছেন—যার মধ্যে ১টি বাংলা ভাষায়, আর ৩টি আরবি ভাষায় প্রকাশিত। তাঁর আরবি ভাষায় রচিত বইগুলো মধ্যপ্রাচ্যের স্বনামধন্য প্রকাশনা সংস্থা লেবাননের দারুল কুতুব আল-‘ইলমিয়্যাহ এবং মিসরের দারুল আকিদাহ থেকে প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমান বিশ্বে ধর্মীয় বিভাজন ও চরমপন্থা যখন নানা সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক সেই প্রেক্ষাপটে ড. বেলালের গবেষণা ও লেখনী মুসলিম সমাজসহ সব ধর্মাবলম্বীর মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়ার সুযোগ তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, “তুলনামূলক ধর্মচর্চা কেবল অ্যাকাডেমিক বিষয় নয়, বরং এটা একটি সময়োপযোগী চিন্তাচর্চা—যা পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সহাবস্থান ও সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক। মোহাম্মদ বেলাল হোসেন সম্পর্কে সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হলো। 

ড. বেলাল একজন বাংলাদেশি ইসলামি ব্যক্তিত্ব, অধ্যাপক, গবেষক ও লেখক। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন এবং ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের একজন প্রফেসর ও প্রাক্তন সভাপতি। তাঁর রচিত উলূমুল হাদীস গ্রন্থটি বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিষয়ের পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত।  এছাড়া তুলনামূলক ধর্ম, বিশ্বে প্রচলিত ধর্মমত, ইসলামে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, উলূমুত তাফসীর ইত্যাদি গ্রন্থসমূহও বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ও মাস্টার্স পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত। তিনি অধ্যাপনার পাশাপাশি অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করেছেন। এছাড়া তাঁর অধীনে ২৪ জন পিএইচডি, ২ জন এমফিল এবং ২০ জন মাস্টার্স থিসিস গবেষণা করেন।

সংক্ষিপ্ত শিক্ষাজীবন
ড. বেলাল ১৯৭০ সালের এপ্রিল মাসে বগুড়া জেলার অন্তর্গত কাহালু থানাধীন কচুয়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ড. বেলাল যখন ৪ বছর বয়সে উপনীত হন তখন নিজ গৃহে তাঁর শিক্ষা শুরু হয়। তাঁর মামা মো. রইছ উদ্দীন তাঁকে সর্ব প্রথম আল-কুরআন পাঠদান করেন। এরপর তিনি তাঁর নানা আলহাজ মুহাম্মাদ বাইতুল্লাহর হাতে কুরআন মাজিদ খতম করেন। এরপর তিনি গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হন। তিনি প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ করেন। 

ড. বেলাল প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার পর কাহালু উপজেলায় অবস্থিত কাহালু সিদ্দিকিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় ৫ম শ্রেণিতে ভর্তি হন। এরপর তিনি ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত দাখিল পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন এবং বাংলাদেশের মধ্যে সম্মিলিত মেধা তালিকায় স্থান লাভ করেন। তিনি ঐ একই মাদ্রাসা থেকে ১৯৮৫ সালে মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত আলিম পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় স্থানসহ প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। অতঃপর ঐ একই মাদ্রাসা থেকে ফাজিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন এবং মেধা তালিকায় স্থান লাভ করেন।

ড. বেলাল দেশের ঐতিহ্যবাহী এবং উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ বগুড়া সরকারি মুস্তাফাবিয়া আলিয়া মাদ্রাসায় কামিল শ্রেণিতে ভর্তি হন। তিনি এ মাদ্রাসা থেকে কামিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। তিনি এ পরীক্ষায় অনেক নম্বর নিয়ে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন এবং সমগ্র সম্মিলিত মেধা তালিকায় স্থান লাভ করেন।  ড. বেলাল ১৯৮৭ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে বিএ অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি হন। ৩ বছর অধ্যয়ন শেষে ১৯৯০ সালে বিএ অনার্স পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম এবং সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম হন। এরপর তিনি ঐ একই বিভাগ থেকে ১৯৯১ সালে এমএ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। তিনি এ পরীক্ষায় ৯২% নম্বর পেয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিষয়ের পূর্ববর্তী সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেন।

পুরষ্কার ও সম্মাননা
ড. বেলাল বিএ অনার্স এবং এমএ পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখায় ইউজিসি পুরস্কারসহ দুটি স্বর্ণপদক ও বিশ্ববিদ্যালয় পুরস্কার লাভ করেন।

কর্মজীবন
তিনি ১৯৯৬ সালে জানুয়ারি মাসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৯ সালে তিনি একই বিভাগে সহকারী অধ্যাপক এবং ২০০২ সালে সহযোগী অধ্যাপক এবং ২০০৭ সালে প্রফেসর পদে উন্নীত হন। তিনি সুনাম ও সুখ্যাতির সাথে এ বিভাগে অদ্যাবধি পাঠদানরত। ড. বেলাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার পাশাপাশি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, রাজশাহী শাখাতে কিছুদিন খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। 

এছাড়া কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি বিভাগে ২বার ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে অধ্যাপনা করেন। ড. বেলাল ১৯৯৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাফসির বিষয়ে অভিসন্দর্ভ রচনা করে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর ২০০৭ সালে মিসরের বিশ্ববিখ্যাত আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ নিয়ে গমন করেন এবং সেখানে তিনি উসুলুদ্‌দ্বীন অনুষদের অধীনে পোস্ট ডক্টরাল গবেষণাকর্ম সম্পন্ন করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল 'ইলমু মুকারানাতিল আদইয়ান ওয়া মুসাহামাতু 'উলামায়িল মুসলিমিন ফীহি। 

ড. বেলাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদানের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক দায়িত্বও সুখ্যাতির সাথে পালন করেন। ড. বেলাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে বিএ অনার্স সম্মান শ্রেণিতে আরবি সাহিত্য, তাফসির, হাদিস বিষয় পাঠদান করেন এবং মাস্টার্স লেভেলে তাফসির, হাদিস ও তুলনামূলক ধর্ম বিষয়ে পাঠদান অব্যাহত রেখেছেন। এছাড়া তিনি ২৫ বছর ধরে সহিহুল বুখারি পাঠদানে নিয়োজিত রয়েছেন।

পাঠদান ও গবেষণা
ড. বেলাল হোসেন পাঠদানের পাশাপাশি অনেক গবেষণাকর্মের তত্ত্বাবধায়ন করেন। এ পর্যন্ত তিনি ২০টি মাস্টার্স থিসিস এবং ২৪টি পিএইচডি থিসিস তত্ত্বাবধায়ন করেছেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ, মিসর, মালয়েশিয়া, ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি থিসিসের পরীক্ষক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। 

তিনি গবেষণাকর্মের তত্ত্বাবধায়নের পাশাপাশি দেশ-বিদেশের অনেক সেমিনারেও অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি বাংলাদেশসহ ভারত, মিসর, সৌদি আরব, লেবানন ও তুরস্কে অনুষ্ঠিত অনেক সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে অংশগ্রহণ করেন। তিনি বৈরূতের ইমাম আওযা'ঈ বিশ্ববিদ্যালয়ে একবার ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে পাঠদান করেন। ড. বেলাল ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে অনেক গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ রচনা করেন।

বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মিসর, সৌদি আরব, লেবানন ও ইরানের বিভিন্ন রিসার্চ জার্নালে তাঁর অসংখ্য প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর প্রকাশিত মোট প্রবন্ধের সংখ্যা ৬০ ঊর্ধ্ব। এছাড়া তিনি ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে অনেক গবেষণামূলক গ্রন্থও রচনা করেন। তাঁর রচিত গ্রন্থের সংখ্যা ৪০টি। তুলনামূলক ধর্মচর্চায় তাঁর অবদান ড. বেলাল তুলনামূলক ধর্ম বিষয়ে ৪টি গ্রন্থ রচনা করেন। এর মধ্যে ১টি গ্রন্থ বাংলা ভাষায় রচিত এবং ৩টি গ্রন্থ আরবি ভাষায় রচিত হয়েছে। লেবাননের বৈরূতের বিখ্যাত প্রকাশনালয় দারুল কুতুব আল-'ইলমিয়্যাহ ও মিসরের দারুল আকিদাহ্ থেকে তাঁর আরবি ভাষায় রচিত গ্রন্থ দু'টি প্রকাশিত হয়। তুলনামূলক ধর্ম বিষয়ে তাঁর এ গ্রন্থগুলো সুবৃহৎ। বর্তমান যুগে বিশ্বব্যাপী আন্তঃধর্মীয় অসহিষ্ণুতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে দেশে দেশে দেখা দিয়েছে ধর্মীয় সংঘাত।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে ইহুদি-খ্রিষ্টান প্রভাবিত মিডিয়াগুলো মুসলমানদের ওপর ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও চরমপন্থার দায় চাপাচ্ছে। অথচ অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তিবলে ইহুদি-খ্রিষ্টান, বুদ্ধিস্ট ও পৌত্তলিক শক্তি বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের মধ্যে বিরোধ উসকে দিয়ে সমৃদ্ধ মুসলিম জনপদগুলোকে বিরান ভূমিতে পরিণত করেছে। বর্তমান ফিলিস্তিন, সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেনের জ্বলন্ত উদাহরণ। এর ফলে একদল মুসলিমও যে বিভ্রান্তির শিকার হয়ে নানা প্ররোচনায় উগ্রপন্থি হয়ে উঠছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

এমতাবস্থায় ড. বেলাল রচিত তুলনামূলক ধর্ম গ্রন্থটি মুসলমানদের বিভ্রান্তির হাত থেকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কেননা তুলনামূলক ধর্মের অধ্যয়ন একজন মুসলিমকে অপর ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সহিষ্ণু করে এবং ইসলামের বস্তুনিষ্ঠতা অমুসলিমদের কাছে যৌক্তিক ও দালিলিকভাবে উপস্থাপন করে। ফলে সকল ধর্মাবলম্বীদের সহাবস্থান সুসংহত হয় এবং সামাজিক সম্প্রীতি ও শান্তি বজায় থাকে।

ড. বেলাল রচিত তুলনামূলক ধর্ম গ্রন্থে এ শাস্ত্র অধ্যয়নে গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে লিখেছেন যে, ধর্মের ইতিহাস বড়ই বিচিত্র। আবহমানকাল থেকেই ধর্মকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষ হয়েছে। বর্তমান বিশ্বও ধর্মজনিত দ্বন্দ্ব-কলহ, হিংসা-বিদ্বেষ ও সংঘাত-সংঘর্ষ থেকে মুক্ত হতে পারেনি। এহেন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ধর্মকে যদি সার্বিকভাবে অনুধাবন না করা হয় হয় এবং ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে পারস্পরিক সদ্ভাব ও সম্প্রীতি স্থাপন করা না যায়; তাহলে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। তাই বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের পরস্পরকে জানা ও তাদের মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির পরিবেশ গড়ে তোলা সময়ের অপরিহার্য দাবি। 

আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা এবং কলহ-সংঘাত নিরসনের পরিপ্রেক্ষিতেই একটি স্বতন্ত্র বিষয় হিসেবে তুলনামূলক ধর্মের উদ্ভব ঘটেছে। এটি এমন একটি অভিজ্ঞান, যার মাধ্যমে প্রাচীন, আধুনিক এবং ঐতিহাসিক ও প্রাগৈতিহাসিক সব রকম ধর্মের বস্তুনিষ্ঠ ও তুলনামূলক পর্যালোচনা করা হয়। এর মূল উদ্দেশ্য হলো বিভিন্ন ধর্মের রীতিনীতি ও বিশ্বাসসমূহকে পর্যালোচনা করে এগুলোর বৈশিষ্ট্য খুঁজে বের করা এবং সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যগুলোকে চিহ্নিত করে পারস্পরিক বিরোধ মীমাংসা করা এবং ধর্মগুলোর মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন স্থাপন করা। এ অভিজ্ঞানের মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রচলিত ধর্মগুলোকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়ে থাকে যেখানে প্রত্যেক ধর্মের অনুসারীরা নিজেদের স্থান খুঁজে পায়। এখানে কোনো ধর্মকে অবমূল্যায়ন করা হয় না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ড. মোহাম্মদ বেলাল হোসেন বলেন, বাংলাদেশে আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতির সুদীর্ঘ ঐতিহ্য থাকলেও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চক্রান্ত ও ধর্মীয়-জাতিগত দ্বন্দ্ব-সংঘাত একেবারেই যে হয়নি, তা বলা বাহুল্য। ইসলাম ধর্মকে যখন মানুষ মানবতার সেবার পরিবর্তে ব্যক্তিস্বার্থ বা দল-গোষ্ঠীগত ফায়দা হাসিল অথবা ক্ষমতার বস্তু হিসেবে ব্যবহার করেছে, তখনই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই দেশে ধর্মীয় ও জাতিগত সংঘাতের সৃষ্টি হয়েছে।

"রাজনীতি ও ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে অমুসলিম সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নির্যাতন করা হয়েছে, তাদের উপাসনালয় আক্রমণের শিকার হয়েছে। এজন্য বাংলাদেশে 'তুলনামূলক ধর্ম' চর্চা করা এবং এ বিষয়ে গবেষণা করা খুবই প্রয়োজন। যদি আমরা তুলনামূলক ধর্মচর্চার মাধ্যমে ধর্মগুলোর পারস্পরিক দূরত্ব কমিয়ে এনে কাছাকাছি করতে পারি তাহলে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বৃদ্ধি পাবে।", ড. বেলাল যোগ করেন।

তিনি আরো বলেন, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও অসহিষ্ণুতা হ্রাস পাবে এবং আধুনিক যুক্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠবে, যা ধর্মীয় বিষয়ে ভুল বোঝাবুঝি ও বিদ্বেষকে প্রতিহত করবে। তাই তুলনামূলক ধর্মের চর্চা ও গবেষণা আমাদের মাঝে সত্যিকার অর্থে ঐক্য এনে দিতে পারে। সাথে সাথে এটি সবার মাঝে সম্প্রীতি স্থাপনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে, যাতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ে উঠে।


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!