রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নোটিশে ৫৬ ভুল

রাবি লোগো
রাবি লোগো   © ফাইল ফটো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ‘ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল' সম্প্রতি একটি বিজনেস আইডিয়া কমপিটিশন আয়োজন করতে যাচ্ছে। সেই উপলক্ষ্যে জারিকৃত ছোট্ট একটি নোটিশে ৫৬টি ভুল বানান ও অসংগতি শনাক্ত করেছে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস। এমন ভুল চরম উদাসীনতার ইঙ্গিত দেয়। মাত্র ৩৩ লাইনের একটি বিজ্ঞপ্তি—কিন্তু তাতে এত সংখ্যক ভুল যেন ভাষার গায়ে চপেটাঘাত!

নোটিশে থাকা ভুলগুলো হলো- ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের Quality Assurance Cell’, ছাত্র ছাত্রী দের, উদ্দোক্তা, সবোচ্চ, ছাত্র ছাত্রীর, রেজিষ্ট্রেশনক্রিত, ২০ শে জুন, পরজন্ত, প্লান, ওয়াকশপে, অংশগ্রহনের, সূযোগ, নিরদিষ্ট, অনুযায়ি, ৩০ শে জুন ২০২৫ এর, ইমেইলে, কোন, গ্রহনযোগ্য, স্থাপনের  বাস্তবসম্মতা, ভিত্তি করে  শ্রেষ্ঠ, ১০ টি, ১৪-১৫ ই জুন, ১০ টি, প্রেজেন্টেশন এর, প্রস্তাব কে, ঘোষনা, পুরষ্কার, পুরষ্কার, টাক, রাবি তে, অনুষ্ঠিতব্য, Foundation সহ, অরগানাইজেশান এর, সূযোগ, Funding  পেতো, ছাত্র ছাত্রীদের, অংশগ্রহনের। 

উপর্যুক্ত ভুলগুলোর সংগত ও শুদ্ধ বানান নিম্নে দেওয়া হলো- ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের Quality Assurance Cell’, ছাত্রছাত্রীদের, উদ্যোক্তা, সর্বোচ্চ, ছাত্রছাত্রীদের, রেজিস্ট্রেশনকৃত, ২০শে জুন, পর্যন্ত, প্ল্যান, ওয়ার্কশপে, অংশগ্রহণের, সুযোগ, নির্দিষ্ট, অনুযায়ী, ৩০শে জুন ২০২৫-এর, ই-মেইলে, কোনো, গ্রহণযোগ্য, স্থাপনের বাস্তবতার, ভিত্তি করে শ্রেষ্ঠ, ১০টি, ১৪-১৫ই জুন, ১০টি, প্রেজেন্টেশন-এর, প্রস্তাবকে, ঘোষণা, পুরস্কার, পুরস্কার, টাকা, রাবিতে, অনুষ্ঠাতব্য, Foundation-সহ, অর্গানাইজেশান-এর, সুযোগ, Funding পেত, ছাত্রছাত্রীদের, অংশগ্রহণের।

এছাড়া ১০ জায়গায় বাক্যের শেষে দাঁড়ি দেওয়া হয়নি। সব জায়গায় ইংরেজিতে লিখলেও শুরুতে বাংলায় (১) লেখা হয়েছে। পরপর দুইবার 4 লেখা হয়েছে। 

উপর্যুক্ত নোটিশে যে ভুলগুলো হয়েছে তার মধ্যে কিছু ভুলের ব্যাখ্যা নিচে দেওয়া হলো-

বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানের পরিশিষ্ট ‘গ’-এ বাংলা তারিখ ও সময় লেখার নিয়ম বিধৃত। বিশেষ দ্রষ্টব্যে বলা হয়েছে: অ্যাক বৈশাখ, অ্যাগারো জ্যৈষ্ঠ, শোলো ডিসেম্বর, পোঁচিশ বৈশাখ প্রভৃতি উচ্চারণ অশুদ্ধ। শুদ্ধ ও মান্য রীতি: পয়লা বৈশাখ, অ্যাগারোই জ্যৈষ্ঠ, ষোলোই ডিসেম্বর, পোঁচিশে বৈশাখ প্রভৃতি। অর্থাৎ তারিখের পর লা, রা, ঠা, শে, ই সেঁটে বসার কথা। তবে নোটিশে তা স্বতন্ত্রভাবে লেখা হয়েছে। 

সংখ্যার সাথে নির্দেশক অব্যয় ‘টা’ সেঁটে বসে। সর্বনাম ব্যতীত ‘এর’ পূর্ববর্তী শব্দের সাথে সেঁটে বসে। এছাড়া ‘কে’, ‘তে’ বিভক্তি ও ‘সহ’ শব্দের সাথে সেঁটে বসে। তবে এ নিয়মের বাইরে গিয়ে ১২ জায়গায় ভুল লেখা হয়েছে। 

বাংলা একাডেমি প্রণীত আধুনিক বাংলা অভিধানে ‘অনুষ্ঠিতব্য’ বলে কোনো শব্দ নেই। শব্দটি ব্যাকরণগতভাবে অশুদ্ধ। শব্দটির সন্ধিবিচ্ছেদ করলে দাঁড়ায় অনু+স্থা+তব্য=অনুষ্ঠাতব্য। তাই ভবিষ্যতে অনুষ্ঠিত হবে অর্থে ‘অনুষ্ঠাতব্য’ অথবা ‘অনুষ্ঠেয়’ লিখতে হবে; ‘অনুষ্ঠিতব্য’ নয়। 

পাশাপাশি অবস্থিত দুটো শব্দের মাঝে একবর্ণ ফাঁক হয়। তবে কয়েক জায়গায় দুই বর্ণ ফাঁক রাখা হয়েছে। যা অসংগতি। 

‘কোন’ যখন সর্বনাম হিসেবে ব্যবহৃত হয় তখন এর অর্থ: কী, কে, কোনটি (কোন দিন, কোনটি চাই, কোন জন)। ক্রিয়াবিশেষণ হিসেবে অর্থ: কী প্রকারে, কীভাবে, কীসে (তুমিই বা কোন ভালো শুটার)। এটি কোনো বা কোনও শব্দের সমার্থক নয়। ‘কোনো’ অর্থ: অনির্দিষ্ট বা অনির্ধারিত একজন লোক বিষয় বা বস্তু, কে বা কী (কোনো বিষয়), বহুর মধ্যে একটি বা একজন।

এ বিষয়ে সমালোচনা করে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আবিদ হাসান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ভাষা শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এটি আমাদের পরিচয়, সংস্কৃতি ও মর্যাদার প্রতিচ্ছবি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যদি নোটিশে ৫৬টি ভুল থাকে, তাহলে সেটি নিছক অবহেলা নয়—বরং এটি এক ধরনের দায়িত্বহীনতা। আমরা যারা ভাষা নিয়ে পড়াশোনা করছি, তাদের জন্য এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ও লজ্জাজনক।

আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল গফফার বলেন, একটি ছোট নোটিশে এতগুলো বানান ভুল থাকা সত্ত্বেও কীভাবে প্রকাশের অনুমোদন পেল, সেটিই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। তাছাড়া এমন কিছু বানান ভুল করা হয়েছে যা অবাক করার মতো। অতি সহজ শব্দও ভুল বানানে লেখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দপ্তরগুলোতে ভাষার প্রতি সম্মান এবং দায়িত্বশীলতা না থাকলে শিক্ষার্থীদের কাছেও ভাষা গুরুত্ব হারাবে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান খান, বাংলা ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা যথেষ্ট সচেতন না। ফলে মাতৃভাষা অবহেলিতই রয়ে গেছে। বাংলা ভাষা ব্যবহারে আমাদের শিক্ষকদের মধ্যে ও একটা নাক উঁচু ভাব দেখা গেছে।  মাতৃভাষা বাংলা এটা যে ভুল লেখা উচিত নয়, সেটাই আমাদের মধ্যে নাই। আমরা সেনসিটিভ না। বাংলা একাডেমির যে অভিধান আছে সেটা যদি সবার টেবিলে রাখা যায়। অন্তত যারা মুদ্রণে কাজ করেন তারা যদি সবাই একটু দেখে নেন সেক্ষেত্রে বানান কিছুটা নিয়ে নির্ভুল হতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেলের পরিচালক ড. মো. আবু রেজা বলেন, ‘বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল, তবে আমরা সেটিকে আপডেট করেছি। আর যে টাইপ করেছিল, সে হয়ত-বা বাংলা লেখায় ততটা পারদর্শী নন, তবে মেইন ফোকাস পোস্টারে সেখানে কোনো ভুল নেই।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence