ঢাবির হলে চোর সন্দেহে বহিরাগত নারী আটক

রোকেয়া হলে চুরি করতে আসা নারীকে আটক করেন শিক্ষার্থীরা
রোকেয়া হলে চুরি করতে আসা নারীকে আটক করেন শিক্ষার্থীরা  © টিডিসি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রোকেয়া হলে চোর সন্দেহে এক নারীকে আটক করেছেন হলটির শিক্ষার্থীরা। আজ রবিবার (১ জুন) সকালে প্রক্টরিয়াল টিমের সহায়তায় শিক্ষার্থীরা এই নারীকে পুলিশে সোপর্দ করেন। এর আগেও ২০২৩ সালে ব‌ঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল থেকে চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েন এই নারী।

শিক্ষার্থীরা জানান, আজ তার চলাফেরা সন্দেহজনক ছিল এবং কথাবার্তায় অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। যার কারণে, তাকে আটক করা হয়। এর আগেও গতকাল (শনিবার) দু‌ইটি ল্যাপটপ চুরি হয় এবং এই নারীই বোরকা পড়ে হলে ঢুকেছিল বলে নিশ্চিত করেছে হল প্রশাসন। তবে পুলিশ জানিয়েছে, তার মানসিক সমস্যা থাকতে পারে।

রোকেয়া হলের শিক্ষার্থী হুরে জান্নাত মেধা বলেন, এর আগেও ২০১৮ সাথে আমাদের হল থেকে এই মহিলা ধরা পড়েছিল। আবার ২০২৩ সাথে বঙ্গমাতা হল থেকেও এই চোরকে ধরা হয়েছিল। কনটিনিয়াসলি যে এতগুলো ফোন ল্যাপটপ এত দক্ষতার সাথে রুম থেকে চুরি করে যেখানে রুম এ মানুষ ঘুমিয়েই থাকে, সে আর যাই হোক পাগল নয়।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে রোকেয়া হলের শিক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার বর্ষা বলেন, ঘটনাটি ঘটে সকাল সাড়ে ১০টায়। আমার সিনিয়র আপু রুম থেকে বের হচ্ছিলেন। তখন ওই মেয়েটি রুমের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলো। তার পুরো শরীর বোরখার অবয়বে ঢাকা ছিলো এবং সে অতি দ্রুত বেগে নিচে নামতেছিলো।কিন্তু আমাদের ফ্লোরে এমনভাবে চলাফেরা করে তেমন কেউ নেই। তাই আপুর প্রথমে সন্দেহ হয়। পরে আপু যখন লিফট দিয়ে নিচে নামলেন আর ওই মেয়েটি সিড়ি দিয়ে। সিড়ি দিয়ে নিচে নেমেই সে রিডিং রুমের পাশের রুমগুলোতে উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছিলো। তখন আপু ওর নাম আর রুম নাম্বার জানতে চায়। সে বলে যে সে ২১৩ তে থাকে। পরে আপু ওর রুমে যেতে চাইলে সে ২১৩ তে নিয়ে যায় এবং রুম বন্ধ পায়। পরে আপু ওর আইডি কার্ড চাইলে বলে যে, ওই মেয়ের বান্ধবী নিয়ে গেছে, বান্ধবীর নাম জানতে চাইলে বলে যে মারিয়া নাম। ওর নাম বলে মুরিয়া, ফ্লোর ম্যামের নাম বলে রুশভি। পরে আপুর সন্দেহ সঠিক মনে হয় এবং ওকে হাউস টিউটর অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। ওখানে গিয়ে সে অদ্ভুত তথ্য দেয় যে, সে গুলশান থাকে, বারে নাচে, আবার পতিতাবৃত্তির সাথে জড়িত এবং তার হাতে ট্যাটু করা। এর পর সবাই মিলে ওকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

আরও পড়ুন: এবার সা’দত কলেজে যোগদান করতে না দেওয়ার ঘোষণা শিক্ষার্থীদের

রোকেয়া হলের হাউজ টিউটর সামশাদ ন‌ওরীন বলেন, গতকালও হল থেকে দুইটি ল্যাপটপ চুরি হয়। কালকে উনাকে অনেকেই দেখছে কিন্তু ধরতে পারেনি। এর আগেও এমন চুরির ঘটনা ঘটেছে। এই মহিলাকেও একাধিক দিন হলে দেখা গেছে। আজকে যখন তিনি আসেন তার আচরণ অস্বাভাবিক থাকায় শিক্ষার্থীরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরবর্তীতে আমার প্রক্টরিয়াল টিমের সাহায্য পুলিশের কাছে সোপর্দ করি।

রোকেয়া হলের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার মিজানুর রহমান বলেন, অনেক দিন ধরেই হলে চুরি হচ্ছিল। এই নিয়ে শিক্ষার্থীরা থানায় জিডি‌ও করেছে। আজকে হলে একজন বহিরাগতকে সন্দেহ হলে পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরবর্তীতে পরিচয়ে অসঙ্গতি পাওয়ায় তাকে প্রক্টরিয়াল টিমের মাধ্যমে শাহবাগ থানা পুলিশের কাছে দেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর জানান, সেই নারীকে থানায় নিয়ে আসার পর অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে। থানায় এসে নিজের মাথা টেবিলের সাথে আঘাত করে মাথা ফাটিয়ে ফেলে। তাকে মেডিকেলে নেওয়া হলে চিকিৎসক সেই নারীকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে জানান। পরবর্তীতে তাকে চিকিৎসার জন্য শেরে বাংলা নগর জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে নেওয়া হয়।


সর্বশেষ সংবাদ