ক্ষমা চেয়ে পার পেলেন চবির ‘বহিষ্কৃত’ ৬ ছাত্রী, শাস্তির মেয়াদ কমল ৩ জনের
- চবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২১ মে ২০২৫, ১০:৪০ PM , আপডেট: ২৫ মে ২০২৫, ১২:৫৬ PM

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) দর্শন বিভাগের শিক্ষক ও সহকারী প্রক্টর কোরবান আলীকে লাঞ্ছিত, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের ওপর হামলার অভিযোগে ৯ ছাত্রী বহিষ্কারের ঘটনায় ৬ জনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার ও ৩ জনের ছয় মাসের বহিষ্কারাদেশ বহাল রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় স্থায়ী বহিষ্কার হওয়া আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আফসানা এনায়েত এমির স্থায়ী বহিষ্কার বহাল রয়েছে। আজ বুধবার (২১ মে) বোর্ড অব রেসিডেন্স হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বহিষ্কারাদেশ বাতিল হওয়া ৬ শিক্ষার্থী হলেন- ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের মেরিন সায়েন্সেস ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী এলিসা স্বর্ণা চৌধুরী, ২০১৮-১৯ সেশনের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ফৌজিয়া আহমেদ পল্লী মজুমদার, একই সেশনের ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্সস বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা বৃষ্টি, ২০১৯-২০ সেশনের ব্যাংকিং এন্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের শিক্ষার্থী ফারজানা ইয়াসমিন পুতুল, ২০২২-২৩ সেশনের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ফাতেমাতুজ আশফিয়া নাহার এশা ও একই সেশনের ওশানোগ্রাফি বিভাগের শিক্ষার্থী মাইসারা জাহান ইশা।
অন্যদিকে ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্সস বিভাগের শিক্ষার্থী রওজাতুল জান্নাত নিশা, ২০২০-২১ সেশনের ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্সস বিভাগের শিক্ষার্থী জান্নাতুল মাওয়া মিথিলা এবং ২০২১-২২ সেশনের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী মোসা. সুমাইয়ার (সুমাইয়া সিকদার) বহিষ্কারাদেশ ২ বছর থেকে কমিয়ে ৬ মাস করা হয়েছে।
এর আগে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ৫৫৯তম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় যেসব ছাত্রীদের বহিষ্কার করা হয়েছিল তাদেরকে ১৫ দিনের মধ্যে আত্মপক্ষ সমর্থনের সময় দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আত্মপক্ষ সমর্থনের পর বিষয়গুলো পূনরায় তদন্ত করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে জানানো হয়, শিক্ষকের গায়ে হাত তোলা ছাত্রীর স্থায়ী বহিষ্কারাদেশ বহাল থাকবে। এছাড়া ৯ জনের মধ্যে ৬ জন ক্ষমা চাওয়ায় তাদের বহিষ্কারাদেশ বাতিল করা হয়েছে এবং বাকি ৩ জনের বিষয় বিবেচনা করে তাদের বহিষ্কার দেড় বছর কমিয়ে ৬ মাস করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, সিনিয়র প্রক্টর অধ্যাপক ড. কোরবান আলীর গায়ে আঘাত করার কারণে একজনের স্থায়ী বহিষ্কার বহাল রয়েছে। বাকি বহিষ্কৃত ৯ জনের মধ্যে নিজ ভুলের লিখিত ও মৌখিক ক্ষমা চাওয়ায় ৬ জনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। আর ক্ষমা না চাওয়ায় ৩ জনের ৬ মাসের বহিষ্কারাদেশ বহাল রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা আমাদের সন্তানের মতো। তারা অনেকসময় অনেক ভুল করে। শিক্ষার্থীরা ভুলের ক্ষমা চাইলে আমরা সেটি ইতিবাচকভাবেই দেখি। শিক্ষার্থীদের কাছে অনুরোধ, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পরিবেশ বজায় রাখার জন্য আমাদের সার্বিক সহযোগিতা করবে। শিক্ষার্থীদের সাথে আমাদের কোন বৈরিতা নেই। তবুও কেউ যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে, সেক্ষেত্রে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শাস্তি দিতে হয়।
উল্লেখ্য, গত ৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জননেত্রী শেখ হাসিনা হলের (পরিবর্তিত নাম 'বিজয় ২৪ হল') নামফলক ও হলের সামনে কংক্রিট দিয়ে নির্মিত নৌকা ভাঙতে গেলে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সাংবাদিকদের সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন ওই হলের শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে সেখানে উপস্থিত আফসানা এনায়েত এমি শিক্ষক কোরবান আলীকে থাপ্পড় দেন। এ ঘটনায় এমিকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়া শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় নয়জনকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। পরবর্তীতে এ বহিষ্কারাদেশ প্রহসনমূলক বলে দাবি করে আন্দোলন করেন বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা।