চাকরি করেন দুবাইয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে, বেতন-ভাতা তোলেন চবি থেকেও

ড. ইদ্রিস আলম
ড. ইদ্রিস আলম  © সংগৃহীত

টানা প্রায় চার বছর ধরে একাডেমিক কোনো দায়িত্ব পালন না করেও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেতন-ভাতা, ভাতা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ইদ্রিস আলম। একই সময়ে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে তিনি পূর্ণকালীন চাকরি করেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাইয়ের রাবাদান একাডেমিতে। দেশের বাইরে কর্মরত থাকলেও তাঁকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণে সহায়তার অভিযোগ রয়েছে বিভাগটির দু’জন চেয়ারম্যান এবং আরও দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। তবে সম্প্রতি অধ্যাপক ড. ইদ্রিস আলমের এ ধরনের অনৈতিক সুবিধা স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিগত ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যের লন্ডন সাউথ ব্যাংক ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডিত্তোর (পোস্ট ডক্টরাল) ফেলোশিপ নিয়ে এক বছরের ছুটি নেন অধ্যাপক ড. ইদ্রিস আলম। যদিও এজন্য প্রয়োজনীয় সঠিক কাগজপত্র দেখাতে পারেননি তিনি। শুধুমাত্র একটি চিঠি দিয়ে তিনি এ ছুটি নিয়েছেন বলে নথিতে দেখা গেছে। ফেলোশিপের অধীনে ছুটি নিলেও তিনি তখন সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) রাবাদান একাডেমিতে চাকরি নেন। পরবর্তীতে বিষয়টি জানাজানি পরও তিনি আরও এক বছর ছুটি বাড়ানোর আবেদন করেন। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তার ছুটি না বাড়িয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। 

ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইদ্রিস আলমের বিষয়ে বিভাগটির চেয়ারম্যানকে বিস্তারিত জানাতে বলেছি। বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমরা আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবঅধ্যাপক ড. আবু তাহের, উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

পরবর্তীতে তিনি সে চিঠির কোনো জবাব না দিয়ে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) রাবাদান একাডেমিতেই কাজ করতে থাকেন এবং মাঝে মধ্যে চবি আসতেন। ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত প্রায় ৪০ মাসের মতো সময় তিনি কোনো ছুটি ছাড়াই তার কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। এরপরও তার বেতন-ভাতাতি এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন উচ্চশিক্ষালয়টির শিক্ষকরা।

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে চবির এক অধ্যাপক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, অধ্যাপক ড. ইদ্রিস আলম ছুটি ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত রয়েছেন। এছাড়াও তার একটি অস্ট্রেলিয়ান পাসপোর্ট রয়েছে বলে শুনেছি এবং তিনি সে পাসপোর্ট দিয়েই রাবাদান একাডেমিতে চাকরি নিয়েছেন। নিয়ম ভেঙ্গে তিনি কীভাবে চবি থেকে বেতন-ভাতা  এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ তা তদন্ত করে দেখা উচিত।

রাবাদান একাডেমির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ড. ইদ্রিস আলমের সম্পর্কে তথ্যাবলি। ছবি: ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত।

চবি শিক্ষকরা বলছেন, অধ্যাপক ড. ইদ্রিস আলম ছুটি ছাড়াই কীভাবে এতো সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছেন তা খতিয়ে দেখা দরকার। এর সাথে যারা জড়িত রয়েছেন তাদেরও বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। এছাড়াও সরকারি বিধি অনুযায়ী, ছুটি ছাড়াই ১০ কর্মদিবস কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে তার চাকরি থাকার সুযোগ নেই। সেখানে কীভাবে এতোদিন অনুপস্থিত থাকার পরও এতো সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছেন তিনি—তা তদন্ত করে বের করা এবং প্রয়োজনে তা ফেরত আনা উচিত।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত নথি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অধ্যাপক ড. ইদ্রিস আলম চবিতে না থাকলেও তিনি বেতন-ভাতা এবং উৎসব ভাতা গ্রহণ করেছেন নিয়মিতই। তিনি গ্রেড-০৩ এর অধীনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছেন বাংলাদেশে না থেকেও। হিসেব বলছে, তিনি প্রতি মাসেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক লাখেরও বেশি অর্থ গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে আগস্ট ২০২২ সালে তার বেতন ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাবলি মিলিয়ে ১ লাখ ১৩ হাজার গ্রহণ করেছেন অধ্যাপক ড. ইদ্রিস। এভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে গেলেও তিনি সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছেন নিয়মিতই। 

আরও পড়ুন: নিয়ম ভেঙে চবির ‘নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি’ অনিবন্ধিত অনলাইন পত্রিকায়

২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে গেলেও এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় ৪০-৪৫ লাখেরও বেশি টাকা গ্রহণ করেছেন অধ্যাপক ড. ইদ্রিস আলম। এছাড়াও একই সময়ের মধ্যে বিভিন্ন উৎসবেও নিয়মিত ভাতাও পেয়েছেন তিনি। এর মধ্যে ২০২৩ সালের এপ্রিলে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে তিনি বোনাস হিসেবে নেন ৭৪ হাজার ৪০০ টাকা। এভাবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে না থাকলেও প্রতিনিয়তই সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন আরব-আমিরাতে থাকা এই অধ্যাপক।

অন্যদিকে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) রাবাদান অ্যাকাডেমির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা গেছে, উচ্চশিক্ষালয়টির ইন্টিগ্রেটেড ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং সহযোগী গবেষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন তিনি। একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে তার প্রোফাইলে দীর্ঘ কর্ম অভিজ্ঞতা এবং গবেষণাসহ সংশ্লিষ্ট সব তথ্য প্রদর্শন করা হচ্ছে।

বিষয়টি এখন উচ্চ আদালতের এখতিয়ারের অধীনে। আমি এটা মন্তব্য করতে পারছি না। আমি আমার যুক্তি উচ্চ আদালতে পেশ করেছিড. ইদ্রিস আলম, সহযোগী অধ্যাপক, রাবাদান একাডেমি। 

আর প্রভাব খাটিয়ে এবং আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করে অধ্যাপক ড. ইদ্রিস আলমকে দেশের বাইরের আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করতে সুযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চবির ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ আরেক সাবেক চেয়ারম্যান ড. মো. আলী হায়দারের কাছে। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, এরকম কোনো কিছুই হয়নি এবং হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। একই সাথে ড. ইদ্রিস আলমের ছুটি এবং তার থেকে আর্থিক সুবিধা গ্রহণের বিষয়ে নিজের সম্পৃক্ত থাকার সব অভিযোগ অস্বীকারও করেন তিনি।

দায়িত্ব পালনকালে কোনো অনিয়ম হয়নি জানিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমি দায়িত্বে থাকাকালে অধ্যাপক ড. ইদ্রিস আলম শুরুতে ছুটি নিয়েছেন এবং ফেরত এসেছেন। পরবর্তীতে তিনি রাবাদান একাডেমিতে চাকরি নেওয়ার পর আর ফেতর আসেননি। এ বিষয়ে তখন আমরা প্রয়োজনীয় কর্তৃপক্ষকে দু’বার জানিয়েছিলাম।

আরও পড়ুন: মাভাবিপ্রবির নিয়োগে প্রথম-দ্বিতীয়কে ছাপিয়ে শিক্ষক হয়েছেন ১১তম প্রার্থী

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কে এম নূর আহমদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, অধ্যাপক ইদ্রিস আলম অবৈধভাবে সুযোগ সুবিধা নেওয়ার কথা না। তবে তিনি অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকলে বেতন-ভাতা ও অন্য কোনো সুযোগ সুবিধা পাবেন না। তবে এগুলো ফাইলপত্র দেখে বিস্তারিত বলতে হবে; এছাড়া বলা সম্ভব না। 

তবে বিষয়টি নিয়ে জানতে একাধিকবার চেষ্টা করেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মাহবুব মোর্শেদের কোনো বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। এছাড়াও ড. ইদ্রিস আলমকে এ কাজে বিভিন্ন সময়ে বিভাগীয় প্লানিং ও একাডেমিক কমিটির সভা থেকে এজেন্ডা প্রত‍্যাহারসহ নানাভাবে সহায়তা করার অভিযোগ থাকলেও এ বিষয়ে বিভাগটির অধ্যাপক ড. অলক পালেরও কোনো বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।

আরও পড়ুন: নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন ভেঙে পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ সৌমিত্র শেখরের 

তবে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বর্তমানে রাবাদান একাডেমিতে থাকা ড. ইদ্রিস আলম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, বিষয়টি এখন উচ্চ আদালতের এখতিয়ারের অধীনে। আমি এটা মন্তব্য করতে পারছি না। আমি আমার যুক্তি উচ্চ আদালতে পেশ করেছি।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবু তাহের দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইদ্রিস আলমের বিষয়ে বিভাগটির চেয়ারম্যানকে বিস্তারিত জানাতে বলেছি। বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমরা আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence