রাবিতে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির প্রতিবাদে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক প্রত্যাখ্যান

জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নূরুল হুদা
জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নূরুল হুদা  © টিডিসি ফটো

দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক প্রত্যাখ্যান করার ঘোষণা দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মো. নূরুল হুদা। শনিবার (১৩ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই কথা জানান।

মো. নূরুল হুদা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১০-১১ সেশনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০১৪ সালে এলএলবি (সম্মান) পরীক্ষায় সিজিপিএ-৩.৬৫৪ ও ২০১৫ সালে এলএলএম (মাস্টার্স) পরীক্ষায় সিজিপিএ-৩.৬০ নিয়ে উচ্চশিক্ষা শেষ করেন তিনি।

এরপর এলএল.বি (সম্মান) পরীক্ষার ফলাফলে আইন অনুষদে প্রথম স্থান অর্জন করায় ২০১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণপদক এবং ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক পান নূরুল হুদা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮ সালের ০৭/২০১৮ নং শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে আইন বিভাগে আবেদন করার পর থেকেই বিভিন্ন অনিয়মের শিকার হচ্ছেন।

নূরুল হুদা বলেন, ২০১৮ সালের ১৩ জানুয়ারি আইন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড সম্পন্ন হয় এবং উক্ত নিয়োগ ১৭ নভেম্বর ৪৮৫তম সিন্ডিকেটে পাশ হয়। নিয়োগ বোর্ডের পূর্ব মুহুর্তে ৮ জানুয়ারি নিয়োগ বোর্ডের অন্যতম সদস্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপ-উপাচার্য চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়া আমার স্ত্রীকে অবৈধ অর্থিক লেনদেনের প্রয়াস দেন। তবে আমি রাজি না হওয়ায়।

তিনি বলেন, পরে উপ-উপাচার্য তার ভাগনে ও ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক গাজী তৌরিদুর রহমান কৌশলে আমার কাছে বিভিন্ন অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করেন এবং নিয়োগ বোর্ডের আরেক সদস্য ও আইন বিভাগের তৎকালীন সভাপতি প্রফেসর আব্দুল হান্নান আমার কাছ থেকে ২ লাখ টাকা ধার নেন।

‘‘নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য আব্দুস সোবাহানকে নিয়োগ বোর্ড এবং সিন্ডিকেটের আগে আমার কাছে প্রফেসর আব্দুল হান্নানের ধারের বিষয়ে এবং আমার স্ত্রীর কাছে উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়ার অবৈধ আর্থিক লেনদেনের প্রস্তাবের বিষয়ে জানানো হলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি।’’

মো. নূরুল হুদা বলেন, ‘আমার চাকরি না হওয়ার প্রায় ১০ মাস পর স্ত্রীর কাছে উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়ার অবৈধ আর্থিক লেনদেনের প্রস্তাবের অডিও রেকর্ড বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফাঁস হয়। এরপর সারাদেশে তোলপাড় শুরু হলে উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো.  জাকারিয়া ও উপাচার্য আব্দুস সোবাহান আমার কাছে নিজের ভুল স্বীকার করেন। চাকরি ও ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব দিয়ে বিষয়টি নিয়ে চুপ থাকতে বলেন। কিন্তু আমি উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়া ও উপাচার্য আব্দুস সোবাহানের চাকরি ও ক্ষতিপূরণের অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি হইনি।’ 

তিনি বলেন, ‘পরবর্তীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর এবং শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে গঠিত বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) তদন্ত কমিটির কাছে ২০২০ সালের ১৭ ও ১৮ সেপ্টেম্বর তারিখে উপস্থিত হয়ে আমি ও আমার স্ত্রী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য এবং বিভিন্ন অনিয়মের যাবতীয় তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করি। ইউজিসির তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ১ ও ২ নম্বর পর্যবেক্ষণে ২০১৮ সালের ৭/২০১৮ নম্বর শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে পঠিত আইন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আব্দুস সোবাহান, নিয়োগ বোর্ডের অন্যতম সদস্য ও উপ-উপাচার্য চৌধুরী মেগ্র জাকারিয়া, উপ- উপাচার্য জাকারিয়ার ভাগনে গাজী তৌহিদুর রহমান এবং, আইন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডের আরেক সদস্য ও আইন বিভাগের সভাপতি প্রফেসর আব্দুল হান্নানের বিরুদ্ধে আনীত শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগের জন্য প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক প্রাপ্ত প্রার্থীদেরকেও শিক্ষকদের পিছনে ধর্ণা ধরতে হয় কিংবা অর্থ লেনদেন করতে হয়। প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক প্রাপ্ত হয়েও নিয়োগের জন্য শিক্ষকদের পিছনে ধর্ণা ধরা কিংবা অর্থ লেনদেন করা পক্ষান্তরে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদকের অবমাননার শামিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক প্রত্যাখ্যান করছি।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence