ঢাবির জগন্নাথ হলে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ

  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জগন্নাথ হলে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের দুই গ্রপের মধ্যে মারামারির অভিযোগ উঠেছে।  

গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান ও ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারীদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়।

হল ছাত্রলীগসূত্রে জানা যায়, হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিব বিশ্বাস ,সাংগঠনিক সম্পাদক গনেশ ঘোষ এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সবুজ কুমার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত এবং হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লিয়ন, সহ সভাপতি জয়ন্ত এবং উপ দপ্তর সম্পাদক ঋভু মন্ডল ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। 

হল শাখা ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, দুই গ্রুপের মধ্যে আগে থেকেই বিভিন্ন বিষয়ে দ্বন্দ্ব ছিলো। তার পরিপ্রেক্ষিতে, গতকাল রাতে তারা জগন্নাথ হলের গেস্ট রুমে নিজেরে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে চাইলে ও ব্যর্থ হন। ঘটনার এক পর্যায়ে তারা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি ও জগন্নাথ হল সংসদের সাবেক ভিপি উৎপল বিশ্বাসের শরণাপন্ন হন। মীমাংসায় ব্যর্থ হলে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে এবং একপর্যায়ে উৎপল বিশ্বাসের কক্ষ ভাংচুর করা হয়। এ ঘটনায় ঋভু মন্ডলসহ চার থেকে পাঁচজন আহত হয়েছেন বলে জানা যায়।

এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হল, জগন্নাথ হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজীব বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক গণেশ ঘোষ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সবুজ কুমার। তারা তিনজনেই হল ছাত্রলীগের শীর্ষ পদ প্রত্যাশী ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের অনুসারী।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় উৎপল বিশ্বাসের কক্ষের দরজার পাশের জানালা এবং ভেতরে বেলকনির পাশের জানালা ভাঙা হয়েছে।

এ বিষয়ে শেখ ইনানের অনুসারী জগন্নাথ হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজীব বিশ্বাস দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, জগন্নাথ হলে গণরুমে থাকা ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীদের সীট দেয়ার ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা বললে সবুজ কুমারের উপর প্রথমে উপর্যুপরি আঘাত করে উৎপল বিশ্বাস। রাজীব বিশ্বাস, গনেশ ঘোষ সহ পুরো হলের সাধারন শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদ করলে ভয়ে উৎপল বিশ্বাস এবং তার অনুসারীরা বারান্দা দিয়ে পালিয়ে যায়।

রাজীব বিশ্বাস আরো বলেন, উৎপল বিশ্বাস সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য ভবনের ৪০০২ নং রুমটি দীর্ঘ ৯ বছর যাবত একা দখল করে আছে। একই সাথে ৪০০১,৪০০৩,৪০০৪ নং রুমে বহিরাগতদের ভাড়া দিয়ে রাখে। যেখানে একই রুমে গাদাগাদি করে ৮ জন করে থাকে, গণরুমে ৩০ জনের অধিক শিক্ষার্থী কষ্ট করে থাকে সেখানে উৎপল বিশ্বাস ৯ বছর যাবত একটি রুম দখল করে আছে পাশাপাশি আরো ৩টি রুমে বহিরাগত ভাড়া দিয়ে আসছে। নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিয়মিতভাবে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করে আসছে উৎপল ও তার অনুসারীরা।

তিনি আরও জানান, শুধু রুম ভাড়াই নয়, ক্যান্টিনে ফাও খাওয়াসহ কিছু ব্যাক্তিগত অনুসারীদের দিয়ে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে ছিনতাই করিয়ে আসছে উৎপল বিশ্বাস দীর্ঘদিন যাবত। এর মধ্যে লিয়ন বালা, জয়ন্ত কুমার অন্যতম ছিনতাইকারী। লিয়ন বালা ছিনতাই মামলায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত। দীর্ঘদিন ধরে তারা ছিনতাইসহ অন্যান্য অনৈতিক কাজে তারা জড়িত। একই সাথে ৪০০৬ নাম্বার রুমটি জয়ন্ত কুমার একা দখল করে সেখানে মাদক সেবন এর নিয়মিত আড্ডা বসায় সে। সকল ছিনতাইকারী অনুসারীদের গতকাল রাতে গণরুমের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয় উৎপল বিশ্বাস। শিক্ষার্থীদের পক্ষে সবুজ কুমার সহ যারাই অবস্থান করেছে তাদের হত্যার হুমকি দেয়া হয়।এছাড়াও পুরো হলে নীরবে রাজনৈতিক ভাবে বিভক্তিকরনের কাজ করে যায় উৎপল বিশ্বাস। হলের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ থেকে চাঁদা গ্রহন তার নিত্যনৈমিত্তিক কাজ।

এ ঘটনায় মারধরের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করে তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী ঋভু মন্ডল বলেন, উৎপল বিশ্বাস এই ঝামেলার মধ্যে ছিলোই না। ঝামেলা মূলত আমাদের সাথে রাজীব বিশ্বাস, সবুজ কুমার ও গণেশ ঘোষের। তারা পূর্বপরিকল্পিতভাবেই আমাদের উপর আক্রমণ করেছে।

তিনি আরও জানান, রাজীব বিশ্বাসরা অন্যান্য গ্রুপ থেকে কর্মীদেরকে নিয়ে এসে আমাদের উপর হামলা চালায়। আমার ঘাড়ে রড দিয়ে আঘাত করেছে এবং কিল ঘুষি দিয়েছে এবং ইচ্ছাকৃত ভাবে তারা উৎপল বিশ্বাসের কক্ষ ভাংচুর করেছে।

রুম ভাংচুরের ব্যাপারে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি উৎপল বিশ্বাস দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, দুই গ্রুপ আগে একই সাথে শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের অনুসারী ছিলো। এখন তারা আলাদা হয়ে এক গ্রুপ তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী হিসেবে রাজনীতি করতে চায়। এটা নিয়ে তাদের মধ্যে আগে থেকেই দ্বন্দ্ব চলছিলো। রাতে দুই পক্ষই মীমাংসার জন্য আমার কাছে আসলে আমি তাদেরকে বলি পরের দিন মীমাংসা করবো। তারা বের হয়ে হাতাহাতি ও বাক বিতণ্ডায় জড়ায়। আমি সবাইকে চলে যেতে বললে এক পক্ষ রুমে চলে যায় এবং অন্যপক্ষ  রাজীব, গণেশ এবং সবুজের নেতৃত্বে একত্রিত হয়ে এসে হামলা চালায়।  হামলার একপর্যায়ে এক পক্ষ আমার রুমে আশ্রয় নিয়েছে ভেবে তারা আমার রুমের দরজা ও জানালা ভাংচুর করে।

এ বিষয়ে জগন্নাথ হলের প্রভোস্ট মিহির লাল সাহা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, আমি শুধু এতোটুকুই জানি যে রুম ভাংচুর হয়েছে। আমি রাতে সেখানে গিয়েছিলাম এবং সেখানে যাওয়ার পর সব শান্ত হয়েছে। কেন হয়েছে, কীভাবে হয়েছে সে ব্যাপারে আমার কোনো অভিযোগ আসেনি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence