রাবি শিক্ষার্থীদের ভাবনায় ঈদুল আজহা

  © টিডিসি ফটো

মুসলমানদের দুটি প্রধান ধর্মীয় উৎসবের অন্যতম একটি হলো পবিত্র ঈদুল আজহা। আত্মত্যাগের মহিমায় পরিশুদ্ধ হওয়ার উৎসবে আনন্দের বার্তা নিয়ে আমাদের মধ্যে সমাগত হয় পবিত্র ঈদ। উৎসর্গ, ত্যাগ, দান এবং মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটানো পবিত্র ঈদ সবার মাঝেই বয়ে নিয়ে আসে আনন্দের জোয়ার। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মাঝে ঈদকে ঘিরে বিরাজ করে নানা জল্পনা-কল্পনা। এবারের ঈদুল আজহা উদযাপন নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের ভাবনা ও মতামত তুলে ধরেছেন মারুফ হোসেন মিশন—


ঈদ  মানে শুধু নিজের মুখেই না, অন্যের মুখেও হাসি ফুটান ‘
ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই খুশি। কিন্তু আমার মনে হয় পৃথিবীর অনেক মানুষের কাছে এই ঈদ উৎসব আনন্দ বয়ে নিয়ে আসে না। কিছু মানুষের জীবনে হতাশা, দুঃখ-বেদনা আর আক্ষেপের মহাসমুদ্র বয়ে নিয়ে আসে। আমাদের প্রচেষ্টা হোক তাদের পাশে দাঁড়িয়ে দু'ফোটা চোখের জল মোছার। দুঃস্থ মানুষের হাতে হাত রেখে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করার। ঈদ মানে শুধু নিজের মুখেই না, অন্যের মুখেও হাসি ফুটানো। এই ঈদুল আজহাতে একটি কামনাই থাকবে, সকলের ঈদ উদযাপন যেন নিরাপদ হয়, সুখের হয়, হয় আনন্দে মুখরিত। মনে রাখা জরুরি, ইদ মানে শুধু নিজের মুখেই না, অন্যের মুখেও হাসি ফুটানো। ঈদ মোবারক।

[মো. মাজিদুল ইসলাম, শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ]


‘ধনী-গরীব সকলের মাঝে ঈদের আনন্দ সমানভাবে ছড়িয়ে দেওয়া উচিত’
ইসলাম ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ উৎসবগুলোর মধ্যে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা অন্যতম। সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মাঝে ঈদুল ফিতরের আনন্দ-অনুভূতি সমানভাবে প্রসারিত হলেও ঈদ-উল আজহার আনন্দ-অনুভূতি সমানভাবে প্রসারিত হতে পারে না। কারণ ঈদুল আজহার আনন্দটা ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে এ ধরণীতে আগমন ঘটে। সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের ত্যাগের সুযোগটা সমানভাবে হয়ে ওঠে না। সকলের সমানভাবে ত্যাগে অংশগ্রহণ করতে না পারাটাই আনন্দের মাঝে অসম দেয়াল হয়ে দাঁড়ায়।

তাই একই দিনে কারো হৃদয়জুড়ে নেমে আসে আনন্দের ঢল, আবার কারো হৃদয় জায়গা করে নেয় অবারিত অশ্রুধারা। তবে আমাদের উচিত ধনী-গরীব নির্বিশেষে সকলের মাঝে এই ইদের আনন্দ সমানভাবে ছড়িয়ে দেওয়া। হৃদয়ের সকল দুঃখ বেদনার স্মৃতি মুছে দিয়ে একইসাথে আনন্দে মেতে ওঠা। আমরা যদি পশু কুরবানির মধ্য দিয়ে আমাদের হৃদয়ের অহংকার, হিংসা-বিদ্বেষ ইত্যাদি ত্যাগ করতে পারি তাহলেই পরস্পরের প্রতি স্নেহ ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে। আমাদের প্রতিটা দিন হয়ে উঠবে ঈদের দিনের মতোই মনোরম। পরিশেষে সকলের জন্য রইলো ঈদুল আজহার হাজার হাজার ফুলেল শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ। ঈদ মোবারক।

[মো. বায়েজিদ খান, শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ]


‘ঈদে অন্যের মুখে হাসি ফোটানোর মাঝেই নিজের আনন্দ খুঁজি’ 
ঈদ মানে আনন্দ। ঈদুল আজহাতে এই আনন্দ হাতে-কলমে পাওয়া যায়। অনুভব করা যায় কাছ থেকেই। প্রতি বছরই আমাদের বাসায় কুরবানি দেওয়া হয় এবং সে গোস্তগুলো নিজ হাতে বন্টন করার মাঝে মানসিক শান্তি খুঁজে পাই। সাথে মানুষগুলোর মুখে প্রশান্তির হাসি যেন অন্তরাত্মার হাজারো খুশির কারণ হয়ে ধরা দেয়। ছোটবেলায় গোস্ত, রুটি, সেমাই, মিষ্টি নিয়ে পাড়ার সমবয়সী ভাই-বোনের মাঝে পৌঁছে দিয়ে আনন্দমুখর হয়ে উঠত এ দিনটি। প্রায় সাতদিন ধরে একে অন্যের বাসায় দাওয়াত খাওয়ার মাঝে কেটে যেত এ উৎসব। তবে এখন দিনটির অধিকাংশ সময় কাটে আতিথেয়তার মাঝেই। পরিচিত লোকদের মাঝে আপ্যায়ন করে তাদের মুখের হাসি ফোটানোর মাঝেই খুঁজে নিতে শুরু করি নিজের ইদ আনন্দকে। 

তবে সময়ের সাথে সাথে আমাদের শহর কেন্দ্রিক ঈদ যেন আমার হৃদয়কে আগের মত উচ্ছ্বাস যোগাতে পারছে না। এককেন্দ্রিক সমাজব্যবস্থায় আমরা আমাদের প্রতিবেশীর সাথেই ঠিকঠাক পরিচিত নয়। সুন্দর মিলনমেলার এ অভাব যেন ঈদের সেই আগের সৌন্দর্যের মাঝে কালো দাগ হয়ে ধরা দিয়েছে। তবে এখন ইদ উদযাপনে প্রতিবেশী না থাকলেও আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধু-বান্ধবের মাঝে উদযাপন করা হয়।বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুবাদে নিজ জেলা থেকে বহু দূরে থাকি। অনেকদিন পর তাদের মুখ দেখলেই আবেগ ঘনভূত হয়ে ওঠে এবং বাড়িতে থাকা প্রত্যেকটি দিনই আমার কাছে ইদের দিন অনুভব হয়। ঈদ আনন্দে ভরে উঠুক সবার জীবন। সকলের জন্য রইল ঈদের উষ্ণ শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ। ঈদ মোবারক।

[জেরিন তাসনীম রাইসা, শিক্ষার্থী, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ]

‘সাম্প্রদায়িকতার এক জ্বলন্ত উদাহরণ ঈদ উৎসব’

ইসলাম হচ্ছে একটি সার্বজনীন ধর্ম। এখানে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, পারিবারিকসহ সকল কিছুই একটি সুশৃংখল সূচিত ধারায় পরিচালিত। ঈদ-উল আজহা ইসলামের সেই সুশৃংখল সামাজিক সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রণের অন্যতম একটি মাধ্যম। মহান রবের নৈকট্য লাভের পাশাপাশি সামাজিক সম্প্রীতি, মমত্ববোধ এবং মেলবন্ধনের জন্য এক ঐতিহাসিক উদাহরণ হচ্ছে কুরবানি। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কুরবানি হচ্ছে আত্মত্যাগের মাধ্যমে রবের সান্নিধ্য লাভ করা। সেই সাথে সমাজের ধনী-গরীব সকলের সাথে মিলে মিশে এক ভাতৃত্বের সেতুবন্ধন রচনা করা। ত্যাগের মহিমায় নিজেকে রাঙিয়ে সুবিধাবঞ্চিত সকলের মাঝে ভালোবাসা আদান প্রদান করে একটু আনন্দ খুঁজে পাওয়ার মাঝেই কুরবানির স্বার্থকতা। কী চমৎকার রূপে মহান আল্লাহ ইসলামে এমন একটি সামাজিক উৎসব লিপিবদ্ধ করেছেন। অসাম্প্রদায়িকতার এক জ্বলন্ত উদাহরণ এই উৎসব। 

আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী (হোক সে অমুসলিম) সকলের মাঝে কুরবানির ভালবাসা বিতরণের মাধ্যমে অনন্য সামাজিক কাঠামো ও ভ্রাতৃত্বের সূচি সাধিত হয়। প্রকৃত পক্ষে ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয় নিজের প্রিয় জিনিসগুলো সবার মাঝে বিলিয়ে একসাথে জীবনের ক্ষণমঞ্চ রাঙিয়ে তুলতে। তাই আমাদেরও উচিত হিংসা বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে রবের শানে ত্যাগের নজরানা পেশ করা। রবের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে আর্থিক, মানসিক, বুদ্ধিবৃত্তিক কুরবানির মাধ্যমে সমাজের দু:স্থ, অবহেলিত, আত্মমর্যাদা সম্পন্ন মুসলিম, অমুসলিম সকলের সাথে প্রীতির সৃষ্টি করা। 

আত্মগরিমা ভেঙে চুরমার করে সামাজিক বন্ধন তৈরিতে আত্মনিয়োগ করা। হিংসা, বিদ্বেষ, ক্রোধ, লালসা অভিমান আর সব মন্দের বিলীন সাধন করে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রবের সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যে কুরবানির মর্মার্থ বুকে ধারণ করা। পরিশেষে পবিত্র কুরআনের সূরা হজ্জের ৩৭ নম্বর আয়াতের স্বরণ করিয়ে দিয়ে বলতে চাই, আমাদের কুরবানির পশুর রক্ত, মাংশ কিছুই আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না। পৌঁছায় শুধু আমাদের তাকওয়া। তাই লৌকিকতা পরিহার করে আমাদের সকল ত্যাগ হোক আল্লাহর জন্য। সকলের প্রতি রইল ইদের অনেক অনেক প্রীতি ও শুভেচ্ছা। ইদ মোবারক।

[তানভীর আহমাদ, শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ]

‘এখনো ঈদ আসে কিন্তু অনুভূতির জগতে ভাটা পড়েছে’
মনে পড়ে সেই সোনালী অতীতের কথা। এখনো ঈদ আসে কিন্তু ওই অনুভূতিগুলো আর নেই। বড় হওয়ার সাথে সাথে কেন জানি সব ভালো লাগার জগতে ভাটা পড়তে শুরু করেছে। এখনো নতুন কাপড় কেনা হয়, হয় ভোরে উঠে প্রস্তুত হওয়া, একসাথে নামাজে যাওয়াটাও আগেই মতই আছে সাথে সালামী পাওয়াটাও। কোলাকুলির রেওয়াজটা আজও শেষ হয়নি; শুধু ঝরে গেছে অনুভূতির বাগানে সাজানো হাজারো গোলাপের সুরভিত পাপড়ি আর সাথে করে নিয়ে গেছে ঈদ আনন্দ, ভালোলাগা, উৎকন্ঠা, উচ্ছ্বাস আর অন্তর গহিনে গেঁথে থাকা চিনচিনে সুখটুক। তবুও চলছে চলুক অনবরত সময় সূচিত হোক স্মৃতির ফল্গুধারা। হৃদয়ের গহীন থেকে সবাইকে জানাই ইদের শুভেচ্ছা। ইদ মোবারক।

[মো. শামীম আক্তার, শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ]

‘ত্যাগই হোক ইদের মর্মকথা’
ত্যাগেই প্রকৃত সুখ। পবিত্র ঈদুল আজহা আমাদের ত্যাগ করতে শেখায়। ঈদুল আজহা অর্থ ত্যাগের উৎসব অর্থাৎ এর মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ত্যাগ করা। গরীব-দুঃখীদের সাথে নিজেদের মাংস ভাগাভাগি করার মাঝেই থাকে প্রকৃত ঈদ আনন্দ। এই একটা ঈদ যখন মাংস দেওয়ার মাধ্যমে সবার সাথে কুশল বিনিময় করা হয় এবং দিনটা ভালো কাটে। গ্রামের বাইরে থেকে এসে পুরোনো বন্ধুদের সাথে দেখা হওয়া, আড্ডা দেওয়া, ঘুরাঘুরি করা বিষয়গুলো ঈদের আমেজকে নতুন উদ্দীপনায় জাগিয়ে তুলে।আসুন সবাই প্রতিটা দিন, ইদের দিন উপভোগ করি আনন্দের সাথে। সবাইকে ঈদ মোবারক।

[মো. পলাশ হোসেন, শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ]


সর্বশেষ সংবাদ