মাসে একবার করে ফটকে তালা দিয়েছিল চবি ছাত্রলীগ
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০১:৫৭ PM , আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:১৭ AM
২০২২ সালের শুরু থেকে চলতি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাসে প্রায় একবার করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে আসছিল শাখা ছাত্রলীগ। ক্যাম্পাসের ভেতরে কিংবা বাইরে ঘটনা যেখানেই ঘটতো— প্রতিক্রিয়ায় মূল ফটকে এসে তালা ঝুলিয়ে দিতেন সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কিছু থেকে কিছু হলেই প্রধান ফটকে তালা দিয়ে বিক্ষোভ-টায়ার পুড়িয়ে অবরোধ করে রাখার মত বিষয়টি যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রধান ফটকে চলতি বছরের ৯ মাসে অন্তত ১০-১২ বারের বেশি তালা লাগানো হয়েছে। শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের এমন আচরণে বিরক্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার জানানো হয়েছে, এরপর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে তালা দিলেই শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসসহ দেশের গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত খবরের তথ্য অনুযায়ী, ছাত্রলীগ-শিক্ষার্থী পরিচয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে তালা দেওয়ায় এগিয়ে রয়েছে ছাত্রলীগ। চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি দুপুর দেড়টায় শাটল ট্রেন সংকট এবং নিয়মিত শিডিউলে ট্রেন চালুর দাবিতে প্রধান ফটকে তালা দেন শিক্ষার্থীরা।
এরপর ৫ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩৭তম সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করে শাখা ছাত্রলীগের উপ-গ্রুপ ভার্সিটি এক্সপ্রেস (ভিএক্স)। ২২ মার্চ সিএনজি চালকের সঙ্গে ভাড়া বিতর্কে মারধরের শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের এক শিক্ষার্থী।
এ ঘটনার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে তালা ও টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ করে শিক্ষার্থীরা। তবে আন্দোলনকারীরা নিজেদের সাধারণ শিক্ষার্থী দাবি করলেও সবাই ছাত্রলীগের উপ-গ্রুপ সিক্সটি নাইনের কর্মী বলে জানা যায়।
একই ঘটনা ঘটে ১১ এপ্রিল। ভাড়া বিতর্কে তিন শিক্ষার্থীকে স্থানীয় সিএনজি চালকরা মারধর করেন। এই তিন শিক্ষার্থী শাখা ছাত্রলীগের বিজয় এবং সিএফসি গ্রুপের কর্মী হিসেবে পরিচিত। ঘটনার প্রতিবাদে প্রধান ফটকে তালা দিয়ে অবরোধ করে ছাত্রলীগের অনুসারীরা।
পরে ১৪ এপ্রিল বিকেল ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর রেলক্রসিং এলাকায় সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী আরাফাত হোসেনের সঙ্গে সিএনজি চালকের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে আরাফাতকে মারধর করেন চালক। প্রতিবাদে প্রধান ফটকে তালা দেয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের অনুসারীরা।
আরও পড়ুন: মূল ফটকে তালা দিলেই ব্যবস্থা নেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
২৮ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী কফিল উদ্দিনের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় ৫-৬ জন। হামলাকারীরা শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপুর অনুসারী বলে জানা যায়। হামলার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে প্রধান ফটকে তালা দেয় কফিলের সহপাঠী ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
১ আগস্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটিকে অবৈধ উল্লেখ করে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধের ডাক দেয় শাখা ছাত্রলীগের বিজয় গ্রুপের একাংশ। এক দিনের বেশি সময় তাদের এই অবরোধ চলমান থাকে। পরে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরীর আশ্বাসে অবরোধ স্থগিত করে আন্দোলনকারীরা।
২১ আগস্ট সিএনজি চালক কর্তৃক সুমিত মণ্ডল নামে এক ছাত্রলীগ কর্মীকে মারধরের জের ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে তালা দেয় ছাত্রলীগের একাংশ। প্রায় আধ ঘণ্টা পরে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা উপস্থিত হলে তালা খুলে দেয়। চলতি মাসের ১১ সেপ্টেম্বর শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি বর্ধিত করে পদবঞ্চিদের মূল্যায়নের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করে শাখা ছাত্রলীগের একাংশ।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি সাবেক সভাপতি ও আইন বিভাগের অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন বলেন, দুই দিন পর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক তালা দেওয়া হয়। প্রথমত এটা তাদের কোনোভাবেই করা উচিত নয়। আর বঙ্গবন্ধুর ছাত্রলীগের রাজনীতি এমন ছিল না। এসব ঘটনা থেকে উত্তোরণের জন্য প্রশাসনের দায়িত্ব রয়েছে। আমরা বারবার সমঝোতার কথা শুনে থাকি। কিন্তু বন্ধ তো হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করে বিশ্ববিদ্যালয়ের (ভারপ্রাপ্ত) প্রক্টর স্বাক্ষিরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা যখন-তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক ও পরিবহন দপ্তরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অফিস বন্ধ করে দিচ্ছে। ফলে বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের পূর্বনির্ধারিত ক্লাস, পরীক্ষা ও সেমিনার আয়োজনে মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
পাশাপাশি একাডেমিক ও দাপ্তরিক কাজে ক্যাম্পাসে আসা শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং সেবাপ্রার্থীদের খুবই সমস্যায় পড়তে হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে সেশনজটমুক্ত করতে গৃহীত পদক্ষেপ বাধাগ্রস্ত হয়।
আরও পড়ুন: ঢাবির গার্হস্থ্য অর্থনীতির পরীক্ষা কাল, পরীক্ষার্থী ৬ হাজার
এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী কিংবা বহিরাগত কেউ যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটান অথবা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাবিরোধী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।