সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি, প্রো-ভিসি ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগে ‘পুল’ চায় ইউজিসি
- খাঁন মুহাম্মদ মামুন
- প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৫:৪৪ PM , আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:২৬ PM
দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মানসম্মত শিক্ষা, উচ্চতর গবেষণা, উদ্ভাবন, নতুন জ্ঞান সৃজন ও উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে একগুচ্ছ প্রস্তাবনা জানিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। বৃহস্পতিবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) দেশের উচ্চশিক্ষার এ তদারক সংস্থার বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব প্রস্তাবনা জানিয়েছে কমিশন। এর মধ্যে—দেশীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জাতীয় র্যাংকিং, গবেষণা বৃদ্ধি, উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়ন এবং ইন্ড্রাস্ট্রি অ্যাকাডেমিয়ার কোলাবরেশন, দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, গবেষণায় নকল বা চুরি বন্ধ এবং কমিশনের অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ মোট ১৪টি সুপারিশ রয়েছে।
কমিশনের সুপারিশমালায় বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের প্রশাসনিক ও আর্থিকসহ প্রয়োজনীয় কাজের দক্ষতাসম্পন্ন উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং ট্রেজারার না থাকার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা সম্ভব হয় না। ১৯৭৩ সালের আদেশ বা আইনে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ ব্যতীত অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে উল্লিখিত তিনটি পদে নিয়োগের কোনো সুস্পষ্ট নীতিমালা ও পদ্ধতি নেই। উক্ত তিনটি পদে যথোপযুক্ত ব্যক্তিকে নিয়োগ প্রদানের নিমিত্ত নীতিমালা প্রণয়নপূর্বক কমিশনের সুপারিশের আলোকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের প্রয়োজনীয় যোগ্যতাসম্পন্ন খ্যাতনামা শিক্ষকগণের একটি পুল গঠন করা।
দেশে বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৬৯টি। এর মধ্যে ৫৫টি সরকারি ও ১১৪টি বেসরকারি। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭৩ সালের আদেশ বা আইনে পরিচালিত হচ্ছে। ফলে বাকী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিয়োগের কোনো সুস্পষ্ট নীতিমালা ও পদ্ধতি নেই।
আরও পড়ুন: সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জাতীয় র্যাঙ্কিংয়ের সুপারিশ ইউজিসির
এছাড়াও দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণার গুণগতমান কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আর্থিক যোগান বাড়াতে কমিশন কর্তৃক প্রণীত এবং সরকার কর্তৃক অনুমোদিত স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান ফর হায়ার এডুকেশন: ২০১৮-২০৩০ অনুযায়ী উচ্চশিক্ষায় বরাদ্দ বৃদ্ধিতে সরকার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ, গুণগত এবং মানসম্মত আন্তর্জাতিক মানের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের র্যাঙ্কিংয়ের উদ্যোগ গ্রহণের সুপারিশও জানানো হয়েছে কমিশনের পক্ষ থেকে।
জাতীয় পর্যায়ে এ র্যাঙ্কিং প্রবর্তনে আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিং ব্যবস্থার কাঠামো এবং বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষিত বিবেচনার পাশাপাশি কমিশনের সুপারিশ জানানো হয়েছে, আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিং ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে শিক্ষা, গবেষণা, পেটেন্ট, সাইটেশন, রেপুটেশন ও বৈশ্বিক সহযোগিতা ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে উক্ত র্যাঙ্কিং পদ্ধতি প্রবর্তিত হতে পারে। এ বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্য সরকার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করতে পারে।
একই সাথে চলমান চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার লক্ষ্যে উন্নত বিশ্বের আদলে বাংলাদেশের জন্য নীতি ও কৌশল প্রণয়ন, ইন্ডাস্ট্রি-বিশ্ববিদ্যালয় যৌথ গবেষণা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের আয়ের একটি নির্দিষ্ট অংশ শিক্ষা, গবেষণা, উদ্ভাবন, স্টার্ট-আপ ও পণ্যের বাণিজ্যিকীকরণের বিধান রেখে সরকার নীতিমালা প্রণয়ন এবং ইন্ডাস্ট্রির কাজে অভিজ্ঞ পেশাজীবীদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সুযোগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরকে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের সুযোগ সৃষ্টির প্রস্তাবও রয়েছে কমিশনের প্রস্তাবনায়।
দেশের উচ্চশিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন, গবেষণা বৃদ্ধি এবং দক্ষ জনসম্পদ সৃষ্টিতে কমিশনের সুপারিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, এবারের প্রস্তাবনায় নতুন বেশ কিছু সুপারিশ জানানো হয়েছে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে উচ্চশিক্ষার কাঙ্ক্ষিত মান অর্জন করা সম্ভব হবে।