ঢাবির ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি প্রস্তুতি, পাশ করতে হয় ৬ ধাপে

ঢাবির ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি প্রস্তুতি
ঢাবির ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি প্রস্তুতি  © ফাইল ছবি

২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ‘ঘ’ ইউনিটের অধীনে এবারই শেষবার ভর্তি পরীক্ষা নেবে ঢাবি। তাই বলাই যাচ্ছে, ভর্তি পরীক্ষাটা সেভাবেই হবে। এজন্য উপযুক্ত প্রস্তুতির বিকল্প নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিট অনেক শিক্ষার্থীর প্রথম পছন্দের তালিকায় থাকে। বিভাগ পরিবর্তনের সুযোগ থাকায় বিশেষভাবে এই ইউনিট সাম্প্রতিক সময়ে বহুল আলোচিত হয়েছে। ঢাবির ‘ঘ’ ইউনিটের প্রস্তুতি নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলা, ইংরেজি এবং সাধারণ জ্ঞান সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরি।

পাশাপাশি ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ থেকে লিখিত অংশ থাকায় ঢাবির ‘ঘ’ ইউনিটে তীব্র প্রতিযোগিতা হয় একটি সিটের জন্য। বিজ্ঞান, কলা ও বাণিজ্য সকল বিভাগের শিক্ষার্থীরাই ‘ঘ’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে। তবে এসএসসি এবং এইচএসসিতে তাদের একটি নির্দিষ্ট পয়েন্ট অর্জন করে এই ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের যোগ্যতা লাভ করতে হয়।

আল তুরাগ হুসাইন

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমিটির মিটিংয়ে এইচএসসির সিলেবাসের আলোকে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তাই এইচএসসির সিলেবাস অনুযায়ী পড়ার কোনো বিকল্প নেই।

আরও পড়ুন: কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কবে কীভাবে ভর্তি পরীক্ষা—জেনে নিন

‘ঘ’ ইউনিটে প্রত্যেক বিষয়ে আলাদাভাবে পাশ করতে হয়। এক্ষেত্রে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের আলোকে, বহুনির্বাচনীর জন্য ৬০ নম্বর ও লিখিত অংশের জন্য ৪০ নম্বর বরাদ্দ থাকে। বহুনির্বাচনী অংশে বাংলায় ১৫ নম্বরের মধ্যে নূন্যতম ৫, ইংরেজিতে ১৫ নম্বরের মধ্যে নূন্যতম ৫ নম্বর ও সাধারণ জ্ঞানে পূর্ণমান ৩০ নম্বরের মধ্যে নূন্যতম ১০ নম্বর পেলে পাশ হয়।

এছাড়া বহুনির্বাচনী অংশে নূন্যতম ২৪ নম্বর পাশ মার্ক। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ মার্ক কাটা হয়। লিখিত অংশের পাশ মার্ক ১০। জিপিএ ব্যাতীত পূর্ণমান ১০০ নম্বরের মধ্যে পাশ নম্বর ৪০। দেখা যাচ্ছে, ‘ঘ’ ইউনিটের একটি পরীক্ষায় সর্বমোট ৬ ধাপে পাশ করতে হয়। যেকোনো একটি ধাপে ফেল করলে সম্পূর্ণ পরীক্ষাই ফেল।

এছাড়া বহুনির্বাচনী অংশে পাশকৃত পরীক্ষার্থীদের বিপরীতে আসনসংখ্যার পাঁচগুণ পরীক্ষার্থীর লিখিত অংশের খাতা মূল্যায়ন করা হয়। তাই বহুনির্বাচনী অংশে পাশ করলেও লিখিত খাতা মূল্যায়ন করা হবে কি না এর নিশ্চয়তা নেই। সুতরাং,যতবেশি মার্ক উঠবে ততই একজন পরীক্ষার্থীর জন্য ভালো। এছাড়া জিপিএর জন্য ২০ নম্বর থাকে। কিন্তু জিপিএ নম্বর বছর অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে।

বাংলা অংশের প্রস্তুতি

বহুনির্বাচনী অংশঃ বাংলা ১ম ও ২য় দুইটি পত্র থেকেই সাধারণত প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে উচ্চমাধ্যমিকের ‘সাহিত্য পাঠ’ বই থেকে সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত সকল গদ্য-পদ্যের মূলভাব বা মূলবাণীগুলো আয়ত্ত করতে হবে।

যেহেতু বানান, উচ্চারণ, সন্ধিবিচ্ছেদ ইত্যাদি প্রশ্ন সচরাচর এসে থাকে তাই এগুলো ভালো করে পড়তে হবে, বিশেষ করে ‘সাহিত্য পাঠ’ বইয়ের বিভিন্ন গদ্য ও পদ্যের শব্দগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। বাংলা ব্যাকরণের জন্য নবম-দশম শ্রেণির ‘বাংলা ভাষার ব্যাকরণ’ বইটি অত্যন্ত উপকারী। কারণ এই বইটি থেকেই সচরাচর অনেক প্রশ্ন কমন আসে।

বাংলা ব্যাকরণের জন্য যে টপিকগুলো দেখা উচিত তন্মধ্যে- ভাষা (কোনটি কোন ভাষার শব্দ), শুদ্ধিকরণ্‌, যতি বা ছেদচিহ্ন, বাচ্য, বাক্য রূপান্তর, বাক্য প্রকরণ, ক্রিয়ার কাল ও ভাব, পদ পরিবর্তন, সমাস, প্রকৃতি ও প্রত্যয়, ধ্বনিতত্ত্ব, যুক্ত ব্যঞ্জন বিশ্লেষণ, পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ ছাড়াও আরও বেশ কিছু টপিক খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

লিখিত অংশঃ রিটেন পার্টের জন্য বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে অনুচ্ছেদ পড়তে পারলে প্রস্তুতি জোরালো হয় এবং বিভিন্ন অনুচ্ছেদে বাংলা ভাষা অপপ্রয়োগের শুদ্ধকরণ দেখে নিলে পরীক্ষায় উপকৃত হওয়া যাবে।

ইংরেজি অংশের প্রস্তুতি

বহুনির্বাচনী অংশঃ Vocabulary-তে ভালো করার জন্য প্রতিদিন নতুন নতুন ইংরেজি শব্দ শেখার বিকল্প নেই। এটিতে ভালো করার জন্য ‘The Most Common 1000 SAT Words’ মুখস্থ করতে হবে। এর পাশাপাশি Cliffs TOEFL বা Barron's TOEFL বইটি পড়া যেতে পারে। মূলত ইংরেজির ক্ষেত্রে এই বইগুলো পড়লে ঢাবির আইবিএ ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিও অনেকাংশে হয়ে যায়।

এছাড়া কিছু গুরুত্বপূর্ণ টপিক হলো- Voice, Narration, Transformation, Right forms of verbs, Parts of speech, Phrase, Clause, Group verbs, Determiner সহ আরও বেশ কিছু টপিক দেখে নিতে হবে।

লিখিত অংশঃ ইন্টারমিডিয়েটের ‘English For Today’ বইয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ যেসকল টপিক আছে ওগুলো সম্পর্কিত Paragraph অবশ্যই পড়তে হবে। English For Today বইয়ের Poem Writer মুখস্থ করতে হবে। ইংরেজি লিখিত অংশে ভালো করার জন্য Free hand Writing-এর কোনো বিকল্প নেই।

সাধারণ জ্ঞান অংশের প্রস্তুতি

বহুনির্বাচনী অংশঃ ‘MP3 বাংলাদেশ’ এবং ‘MP3 আন্তর্জাতিক’, ‘জোবায়ের’স GK’,কারেন্ট এফেয়ার্স ও বাজারের মানসম্মত অন্যান্য যেকোনো বই থেকে প্রস্তুতি নেওয়া যেতে পারে। সাম্প্রতিক ইস্যু সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে

লিখিত অংশঃ সাধারণ জ্ঞানের লিখিত অংশটি খুবই মজার। একটু কৌশলী হলে ভালো মার্ক পাওয়া সম্ভব।বেসিক থেকে লিখতে হবে এবং নিজস্ব চিন্তা-চেতনার প্রতিফলন প্রকাশ করার দক্ষতা থাকতে হবে।

উল্লেখ্য, বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্ন সমাধান করলে ভালো হয়। ইংরেজি অংশ বিসিএসের আলোকে অনেকটা হয়ে থাকে। এছাড়া সাধারণ জ্ঞান কমন পাওয়া যেতে পারে। লিখিত অংশের ক্ষেত্রে সুন্দর হাতের লেখা অন্যদের চেয়ে একজন পরীক্ষার্থীকে অনেক এগিয়ে রাখে। সবার জন্য শুভকামনা।

লেখক: শিক্ষার্থী, অপরাধ তত্ত্ব ও পুলিশ বিজ্ঞান বিভাগ, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ