কিশোর গ্যাং বন্ধে করণীয়

প্রতীকী
প্রতীকী

দেশজুড়ে দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠছে উঠতি কিশোরদের গ্যাং কালচার। এই কালচারের সাথে জড়িয়ে আছে স্কুল পড়ুয়া কিশোরদের মধ্যকার সিনিয়র-জুনিয়রদের দ্বন্দ্ব, আধিপত্য বিস্তারের মানসিকতা, মাদক, নারী নির্যাতন। এমনকি খুন খারাবির প্রবণতাও রয়েছে এদের মধ্যে। টিকটক লাইকিসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সস্তা জনপ্রিয়তা পেতে গিয়ে এসব অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা।

২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে উত্তরায় ডিসকো বয়েজ ও নাইন স্টার গ্রুপের অন্তর্দ্বন্দ্বে খুন হয় ট্রাস্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র আদনান কবির। আদনান হত্যাকাণ্ডের মধ্যে দিয়েই আলোচনায় আসে কিশোর গ্যাং।

অন্যদিকে রাজধানীসহ জেলা শহরগুলিতেও বেরিয়ে আসে কিশোরদের ‘গ্যাং কালচার’ এবং তাদের সংঘবদ্ধ অপরাধের ভয়ঙ্কর সব চিত্র। এ সকল গ্যাং সমাজে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করে উদ্বেগ ও আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পুলিশের ক্রাইম অ্যানালাইসিস বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানী ঢাকাতেই গত কয়েক বছরে কিশোর গ্যাং গ্রুপের সন্ধান মিলেছে অন্তত ৫০টি। তা ক্রমান্বয়ে বাড়ছেই। বিভিন্ন জেলা শহরের কিশোররাও জড়িয়ে পড়ছে পাড়া বা মহল্লাভিত্তিক নানারকম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কিশোরদের মধ্য এডভেঞ্চার ফিলিং বা হিরোইজম ভাব বেশি দেখা যায়।কিশোর বয়সে বেড়ে উঠার পরিবেশ তাকে অপরাধী হয়ে উঠতে সহায়তা করে। কিশোর বয়সে ইতিবাচক চর্চার দিকে না গিয়ে, নেতিবাচক চর্চার দিকে চলে যায়। আবার যখন তারা দেখে যে, অপরাধ যারা করছে তারা সমাজে বেশি লাভবান হচ্ছে, সেটা কিশোররা অনুসরণ করে। তাদের উপর পারিবারিক ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণ থাকে না।

লক্ষণীয় বিষয় আমাদের সমাজে নানা অসংগতি রয়েছে। নিজেদের সংস্কৃতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে ও সময়ের অনেক কিশোর, তাদের আচরণ পরিবর্তন হচ্ছে। অনলাইন সোশাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন নানা লোমহর্ষক ও ভিনদেশি সংস্কৃতি ইচ্ছা মতো তাদের আয়ত্তে চলে যাওয়ায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এ ছাড়া কিশোরদের রাজনৈতিক ব্যবহার করার কারণে তাদের মধ্য গ্যাং কালচার গড়ে উঠার সুযোগ তৈরি হচ্ছে।

সম্প্রতি ঢাকার উত্তরায় ‘অপু ভাই’ নামে খ্যাত টিকটক ভিডিও নির্মাতা একটি রাস্তা অবরোধ করে ৭০-৮০ জন কিশোর মিলে টিকটক ভিডিও তৈরি করছিল। সেই মুহূর্তে রবিন নামক একজন প্রকৌশলী গাড়ি নিয়ে রাস্তা পার হতে গেলে অপু ভাইসহ তার দল মিলে মারপিট করে উক্ত ব্যক্তির মাথা ফাটিয়ে দেয়। কিশোরদের গ্যাং কালচার এবং কিশোর অপরাধ বর্তমান সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তাই এই সমস্যা নিরসনে দরকার সর্বসম্মতিক্রমে সামাজিক আন্দোলন। এক্ষেত্রে পরিবারকে সচেতন থাকতে হবে বেশি। কারণ তাদের ছেলেমেয়ে কার সাথে মিশছে, কিভাবে বড় হচ্ছে তা খতিয়ে দেখতে হবে। কেননা পরিবার মানুষের আদি সংগঠন এবং সমাজ জীবনের মূলভিত্তি। পরিবারের সাথে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকেও নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধে কিশোরদের গড়ে তুলতে সচেষ্ট হতে হবে। শিশু কিশোরদের জন্য কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা এবং তাদের সংশোধনের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার থাকতে হবে। কিশোরদের সমাজের ইতিবাচক কাজে সম্পৃক্ত রাখতে হবে। তাই এর জন্য সমাজ ও দেশের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা রাখা চাই।

আগামী প্রজন্মের কিশোরদের সুস্থ ও স্বাভাবিক বিকাশ এবং কলুষযুক্ত ও সুস্থ সমাজ গঠনে এখন থেকেই এই বিষয়ে সকলকে বিশেষ করে এর সাথে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তৎপর এবং যথেষ্ট সজাগ থাকতে হবে। তাহলেই গ্যাং কালচারের এই বিপথগামী তরুণদের অপরাধমুক্ত রাখা সম্ভবপর হবে এবং আগামী প্রজন্ম রক্ষা পাবে এক অসুস্থ সমাজ থেকে।

জীবনের অতি মূল্যবান অংশের নাম তারুণ্য। স্বপ্ন ও সম্ভাবনার, উদ্যম ও গঠনের এ এক সতেজ অধ্যায়। আর তাই সমাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে তরুণ-সমাজ। এরাই তো নতুন সূর্য- সমাজের স্বপ্ন ও সম্ভাবনার। এই সূর্য ক্ষয় ও অবক্ষয়ের কালো মেঘে ঢাকা পড়ে যাওয়ার মানে, সমাজের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাওয়া। কাজেই আমাদের কিশোর-তরুণদের অবক্ষয়ের রাহু-গ্রাসে পতিত হওয়া থেকে অবশ্যই ফেরাতে হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence