রাতে ঘুম না এলে যেসব কাজ করতে নেই

জীবনের কোনো না কোনো সময় অনিদ্রার সমস্যায় ভোগেন অনেকেই
জীবনের কোনো না কোনো সময় অনিদ্রার সমস্যায় ভোগেন অনেকেই  © সংগৃহীত

বিছানায় এপাশ-ওপাশ করছেন, কিন্তু ঘুম আসছে না? মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল, এরপর আর চোখের পাতা এক হচ্ছে না? নিদ্রাহীনতা বা অনিদ্রা এমন এক সমস্যা, যে সমস্যায় অনেকেই জীবনের কোনো না কোনো সময় ভুগেছেন বা এখনো ভুগে চলেছেন। অনিদ্রা কারও কারও জন্য প্রবল সমস্যা হিসেবেও আবির্ভূত হয় কোনো কোনো ক্ষেত্রে।

মানুষ কেন অনিদ্রায় ভোগে––এর পেছনে বেশকিছু কারণ থাকে। বার্ধক্যের প্রভাব, রাতে বারবার প্রস্রাব, মেনোপজ বা রজোনিবৃত্তি বা রাতের পালার কাজ––এ রকম নানা বিষয় অনিদ্রা সৃষ্টির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। এসব সমস্যার ক্ষেত্রে কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে সেটাও জানা থাকা জরুরি।

অনিদ্রায় বিশেষজ্ঞরা নিজেরা কী করেন?
‘আমি ঘুমাতে পারছি না, এর খুব স্বাভাবিক কারণ হতে পারে আমার মস্তিস্ক কোনো কারণে বিরক্ত হয়ে আছে অথবা আমি খুব দুশ্চিন্তা করছি। এ রকম হলে আমি একটি বই নিয়ে পড়তে শুরু করি এবং একটু হালকা অনুভব করার আগ পর্যন্ত পড়তে থাকি।’ কথাগুলো বলছিলেন সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ড. ফেইথ অর্চার্ড।

লন্ডনের রয়াল ব্রম্পটন হাসপাতালের স্লিপ মেডিসিন বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং ব্রিটিশ স্লিপ সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ড. অ্যালি হায়ার বলেন, ‘আমি যখনই অনিদ্রায় ভুগি এর প্রধান কারণ হয় আমার স্বামী বিছানায় বার বার পাশ ফিরছে বা জোরে জোরে নাক ডাকছে। তাই আমি 'স্লিপ ডিভোর্স' পদ্ধতি বেছে নেই এবং অন্য একটি ঘরে ঘুমাতে চলে যাই।’

আরও পড়ুন: ঢাবিতে জুলাই হামলায় ৭০ শিক্ষক শনাক্তের তথ্য ঠিক নয়

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্লিপ মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক কলিন ইসপি বলেন, ‘ঘুম না আসলে আমি বিছনা ছেড়ে উঠে যাই এবং আবার নতুন করে এসে শুই। এটা একটা রিবুট সিস্টেমের মতো কাজ করে। সাধারণত মাথায় কোনো চিন্তা ঘোরাফেরা করার কারণেই অনিদ্রা দেখা দেয় এবং এটা বেশিরভাগ লোকের ক্ষেত্রেই সত্যি।’

অনিদ্রার উপসর্গ কী?
মিজ ইসপির মতে, ‘যদি ঘুম না আসার সমস্যা এক রাতের পর কয়েক দিন ধরে হতে থাকে এবং এরপর কয়েক সপ্তাহে গড়ায়, এভাবে তিন মাস বা তার বেশি সময় পার হয়ে যায়, তাহলে আমরা এই অবস্থাকে অনিদ্রা বা ইনসমনিয়া বলি।’ অনিদ্রার সমস্যাটি কয়েক ধরনের হতে পারে বলে ব্যাখ্যা করেছেন ড. অর্চার্ড।

তিনি বলছেন, ‘ঘুম না আসা প্রাথমিক উপসর্গ। কিন্তু বাস্তবে আরও কিছু লক্ষণ রয়েছে। মাঝরাত পর্যন্ত জেগে থাকা, এক বার ঘুম ভাঙলে আর ঘুম না আসা, ভোর পর্যন্ত জেগে থাকার পর আর ঘুম না আসা এগুলোও অনেকের জন্য অনিদ্রা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।’ ড. হেয়ারের মতে, অনিদ্রার লক্ষণগুলো খুবই সাধারণ এবং ৫০ শতাংশ মানুষের জন্য তা একইরকম।

সপ্তাহে যদি তিন রাত ঘুমানোর ক্ষেত্রে কারও সমস্যা হয় এবং তিন মাসের বেশি সময় ধরে এটা চলে, আর রাতে ঘুম না আসার কারণে দিনের কাজে প্রভাব পড়লে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।

অনিদ্রা সৃষ্টির আগে মস্তিষ্কে কী ঘটে?
ঘুমে ঢলে পড়া ও ঘুম থেকে জেগে ওঠার পেছনে দুটি প্রক্রিয়া কাজ করে। ড. অর্চার্ড বলেন, যে হরমোনের কারণে ঘুম সৃষ্টি হয় এবং সারা দিনের কর্মযজ্ঞের ফলে শরীরে যে চাপের তৈরি হয়–– এই দুটি প্রক্রিয়ারই পাশাপাশি চলা উচিত। এর মধ্যে কোনো একটার ব্যতিক্রম ঘটলে সমস্যা হতে পারে।

আরও পড়ুন: দাখিলের পর আলিমে আগ্রহ নেই মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, দিনের বেলায় বা বিকেলে এক দফা ঘুমিয়ে নিলে রাতের বেলায় ঘুম আসা কঠিনও হতে পারে। 
‘এর বাইরেও অনিদ্রার পেছনে বাহ্যিক যেসব কারণ কাজ করে তার মধ্যে অন্যতম হলো দুশ্চিন্তা।’

অধ্যাপক ইসপি বলেন, ‘ঘুমের ওপর আমরা দারুণভাবে নির্ভরশীল। নানা কিছুর বিবর্তন ঘটলেও ঘুমের ওপর নির্ভরতার পরিবর্তন হয়নি। বরং বলা চলে মানুষ হিসেবে আমাদের মস্তিষ্ক অপেক্ষাকৃত বড় ও জটিল প্রকৃতির, এর বিশ্রামের জন্যই তুলনামূলক বেশি ঘুমের প্রয়োজন। বিপদ বা যে কোনো ধরনের হুমকির জন্য আমাদের মস্তিষ্কে যে এক ধরনের সতর্কতা তৈরি হয়, যেটা আমাদের ঘুমকে তাড়ানোর কাজ করে, এই প্রবণতাও বিবর্তনের সঙ্গে পাল্টায়নি। দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগ আমাদের মস্তিষ্কে এমন একটা অনুভূতি তৈরি করে, যা আমাদের মনে করতে বাধ্য করায়–– জেগে না থাকলেই বিপদ!’

ড. হেয়ার বলছেন, ‘আমি এটা বলব, না যে নির্দিষ্ট প্রকৃতির লোকেরাই অনিদ্রায় ভোগেন, তবে এটাও ঠিক যে দুরারোগ্য ব্যাধি বা মারাত্মক ব্যাথা রয়েছে এমন ব্যক্তিদের ঘুমের সমস্যা হয়। এ ছাড়া দুশ্চিন্তা, হতাশা, উদ্বেগসহ অন্যান্য মানসিক সমস্যার মিথস্ক্রিযার কারণেও অনিদ্রা সৃষ্টি হতে পারে।’

ঘুমের পেছনে মানুষের বয়সও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে জানান অধ্যাপক ইসপি।

‘বয়সের সাথে সাথে দেহঘড়িও পাল্টে যায়। কত সময় ধরে ঘুম হবে এবং তা কতটা গভীর হবে তা এই দেহঘড়ির ওপরও নির্ভর করে। বয়স বাড়তে থাকলে স্বাভাবিকভাবেই ঘুমে ব্যঘাত ঘটতে থাকে। একজন কিশোরের জন্য দেরি করে ঘুমিয়ে দেরি করে ওঠায় যতটা না সমস্যা হয়, কিন্তু একজন বয়স্ক মানুষের জন্য আগে আগে ঘুমিয়েও একবার তা ভেঙে গেলে হয়তো আবার ঘুমানোর জন্য বেগ পেতে হয়।

আরও পড়ুন: ঢাবিতে ড. আরেফিন সিদ্দিকের জানাজার জন্য পরিবার থেকে আগ্রহ পায়নি প্রশাসন

ঘুমের ওপর জিনগত প্রভাবও কাজ করে। অধ্যাপক ইসপি যেমন বলছেন, ‘খুব সহজেই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়া বা উত্তেজিত হয়ে পড়ার মতো বংশগত উপসর্গ থাকে। এর সঙ্গে ঘুমের ব্যাঘাতের সম্পর্ক থাকতে পারে। এ ছাড়া আপনি সকাল সকাল উঠে কাজ শুরু করছেন এবং রাতে দ্রুত ঘমিয়ে পড়ছেন কিনা, বা বেলা করে উঠে কাজ শুরু করে শেষ রাত পর্যন্ত জেগে থাকছেন কিনা–– এরকম প্রত্যাহিত অভ্যাসও ঘুমের আলাদা প্যাটার্ন তৈরি করে।’

তবে অনিদ্রার পেছনে একাধিক ও নানা রকম কারণ থাকতে পারে বলেই তার অভিমত।

ঘুমাতে না পারলে কী করা উচিত?
মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে আমাদের কী করা উচিত? এ নিয়ে কিছু কুসংস্কার রয়েছে বলে জানান অধ্যাপক ইসপি। ‘সকালের দিকে আমাদের ঘুমের প্রবণতা কমে আসতে থাকে। আবার ঘুম ভেড়ে গেলে আমি আবার হয়তো ঘুমাতে পারবো না––এরকম একটা দুশ্চিন্তার আপনার ঘুম নষ্ট করতে পারে। আমার অভিজ্ঞতা বলে, জোর করে কেউ ঘুমাতে পারেন না। স্বাভাবিকভাবেই ঘুম এসে যায়, এর বাইরে যখনই আপনি ঘুমানোর জন্য জোর করে চেষ্টা করবেন- তখনই সমস্যার শুরু হয় বলে আমি সন্দেহ করি। বিশ্বাস করুন আর না করুন, সবচেয়ে ভালো উপায় হলো––ঘুম না আসলে জেগে থাকার সিদ্ধান্তই নেওয়া। ঘুমকে স্বাভাবিকভাবে আসতে দিতে পারেন আপনি।’

খুব সহজ কতগুলো নিয়ম অনুসরণ করে জীবনের একটি ভালো রুটিন করে নেওয়া সম্ভব বলে মনে করেন ড. অর্চার্ড।

একটি নির্দিষ্ট সময়েই শুতে যাওয়া এবং একটি নির্দিষ্ট সময়েই উঠে পড়ার ওপর মনোযোগ দেওয়া উচিত। একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ঘুমানোও গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্য দিয়ে মস্তিষ্ককে একটা বার্তা দেওয়া যায় যে এখানেই ঘুমাতে হবে। সোফায় বা চেয়ারে ঘুমিয়ে যাওয়া যেমন উচিত না, আবার বিছানায় বসে কাজ করাও ঠিক না, পরামর্শ এই বিশেষজ্ঞের। শোয়ার পর ঘুম না আসলে বিছানা ছেড়ে উঠে যাওয়া উচিত এবং আধা ঘণ্টার মতো অন্য কোনো কাজ করার পর আবার বিছানায় ফেরত যাওয়া যেতে পারে বলে মন করেন ড. হেয়ার।

ঘুমের ওষুধ খাওয়া কি ঠিক?
ড. হেয়ার বা অধ্যাপক ইসপি, এই দুইজনেরও কেউই ও ধরনের ওষুধ খাওয়ার পক্ষপাতি নন। বরং তারা পরামর্শ দিচ্ছেন এক ধরনের মনোবৈজ্ঞানিক থেরাপির যা মানুষকে তার চিন্তাধারা ও আচরণ পাল্টাতে সাহায্য করবে। এর ফলে অনিদ্রার সমস্যারও উপশম হবে। এ ধরনের থেরাপি (কগনেটিভ বিহেভিওরাল থেরাপি) ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষের ক্ষেত্রে সুফল বয়ে আনে এবং ৫০ শতাংশ মানুষ অনিদ্রা থেকে পুরোপুরি মুক্তি পান বলে জানান ড. হেয়ার।

আরও পড়ুন: ১৯ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি আবেদন শেষ হচ্ছে কাল

অধ্যাপক ইসপি বলছেন, এ রকম থেরাপি যে ওষুধের চেয়ে বেশ কাজে দেয় সেটা অনেক রোগীই বিশ্বাস করতে চান না। থেরাপির একটি অংশের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, স্লিপ রেস্ট্রিকশন থেরাপি নামে একটি পদ্ধতির পরামর্শ দেই আমরা। এর মাধ্যমে অনিদ্রার রোগীকে একটু দেরি করে ঘুমাতে যাওয়া এবং সকালে একটু আগে আগে ঘুম থেকে উঠতে বলা হয়। কিছু মানুষ অত্যন্ত জোর দিয়ে বলেন যে, শোয়ার আগে ম্যাগনেসিয়াম জাতীয় ওষুধ খেয়ে তারা ঘুমের ক্ষেত্রে সুফল পেয়ছেন। কিন্তু ড. অর্চার্ড বলছেন, এই বিষয়টি বড় কোনো গবেষণায় প্রমাণিত নয়, বরং ছোটো আকারের কিছু জরিপে এর কথা বলা হয়েছে।

মেলাটোনিনের বিষয়টা কী?
অনেক দেশে এ ধরনের হরমোনের ওষুধ ফার্মেসিতে গেলেই পাওয়া যায়, আবার কোথাও কোথাও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কেনা সম্ভব। এ বিষয়ে ড. হেয়ার বলছেন, এই বিষয়টাও অনেকটা ম্যাগনেসিয়ামের ব্যবহার ও তার প্রভাবের মতোই। অনেক সময় হয়তো রোগী মন রক্ষায় এসব ওষুধ লিখে দেন চিকিৎসকরা।

ঘুমের ওপর আরও যেসব বিষয় প্রভাব ফেলে
ঘুমের আগে কোনো স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকেন? টেলিভিশন, কম্পিউটার নাকি মোবাইল ফোন––কোনটার দিকে তাকিয়ে আছেন সেই যন্ত্রটা নয়, বরং কী রকম আলো আপনার চোখে প্রবেশ করছে এটাই এক্ষেত্রে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

ড. অর্ডার্ড বলছেন, আপনি স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে কী করছেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ। হয়তো আপনি ফোনের দিতে তাকিয়ে এমন কিছু দেখছেন যেটা আপনার মস্তিষ্ককে শান্ত করছে, এটায় ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে না।

কিন্তু এমন কিছু যদি দেখেন যা আপনার মধ্যে উত্তেজনা তৈরি করে, সেটা অবশ্যই ঘুম বিঘ্নিত করতে পারে।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের চলমান সংস্কারে জাতিসংঘ পাশে থাকবে: গুতেরেস

অনিদ্রার ওপর মেনোপজ, নাইট শিফট বা এলকোহলের কোনো প্রভাব আছে? থাকলে এগুলো কীভাবে প্রভাব ফেলে? ড. হেয়ার বলছেন, মেনোপজ বা রজোবিরতি নারীদের জন্য কঠিন সময় নিয়ে আসে এবং এর কারণে ঘুম বিঘ্নিত হতে পারে।

‘মেনোপজের কারণে হট ফ্ল্যাশ হয় এবং এটা ঘুম ব্যাহত করতে পারে। হরমোনের পরিবর্তন, বার বার মানসিক অবস্থার পরিবর্তন বা মুড চেঞ্জ এগুলো মেনোপজের সঙ্গেই আসে। তবে সংসার বা পরিবারিক চাপসহ অন্যান্য চাপও নারীর শরীরের ওপর এসময় প্রভাব ফেলে। অ্যালকোহলের বিষয়ে ড. অর্চার্ড বলেন, ঘুমের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রার গভীরতার যে প্যাটার্ন তৈরি হয়, এটা বদলে দিতে পারে অ্যালকোহল।’

‘এর আরও কয়েক ধরনের প্রভাব আছে। এলকোহল পান করার পর বারবার টয়লেটে যেতে হতে পারে; শরীরের পেশীগুলো শিথিল হয়ে নাক ডাকার প্রবণতা চলে আসছে পারে; হরমোনের ওপর এলকোহলের প্রভাব থাকায় আবার এটি ঘুম আসা না আসাকেও বদলে দিতে পারে,’ বলেন তিনি।

নাইট শিফটের ধকল কীভাবে সামলানো সম্ভব এ ব্যাপারে ড. হায়ার বলেন, এ ক্ষেত্রে যে দিন নাইট শিফট নেই, সেসব দিনগুলোতে স্বাভাবিক সময়ে ঘুমের চেষ্টা করতে হবে, পাশাপাশি ছোট ছোট ঘুম দিয়ে অভাবটা পূরণ করে নিতে হবে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence