একসেপ্ট অল’ না ‘রিজেক্ট অল’— ক্লিকেই ফাঁস হতে পারে আপনার গোপন তথ্য!

‘Accept all’ করবেন, না ‘Reject all’
‘Accept all’ করবেন, না ‘Reject all’  © সংগৃহীত

ইন্টারনেটে প্রবেশ করলেই প্রায় প্রতিটি ওয়েবসাইটে একটি পরিচিত পপ-আপ দেখা যায়—আপনি কি ‘Accept all’ করবেন, না ‘Reject all’? অনেকেই এটিকে নিছক একটি বিরক্তিকর ক্লিক ভেবে এড়িয়ে যান। কিন্তু এই ছোট্ট কুকি ফাইলগুলো আসলে আপনার অনলাইন অভিজ্ঞতা এবং ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

কুকি হলো ছোট ফাইল, এটি ওয়েবসাইট ব্রাউজ করার সময় আপনার কম্পিউটার বা মোবাইল ডিভাইসে সংরক্ষিত হয়। এগুলোর সাহায্যে ওয়েবসাইটগুলো আপনার লগইন তথ্য মনে রাখতে পারে, শপিং কার্টে রাখা পণ্য সংরক্ষণ করতে পারে কিংবা আপনার ভাষা পছন্দ মনে রাখতে পারে। এতে করে ব্রাউজিং অভিজ্ঞতা হয় অনেক সহজতর। তবে একইসঙ্গে এই কুকির মাধ্যমে তৃতীয় পক্ষ ও বিজ্ঞাপনদাতারা আপনার অনলাইন কার্যকলাপ নজরে রাখতে পারে এবং বিভিন্ন সাইট ও ডিভাইসে আপনার পছন্দ-অপছন্দ, অভ্যাস, এমনকি আচরণ বিশ্লেষণ করে বিস্তারিত প্রোফাইল তৈরি করতে পারে।

সব কুকি এক ধরনের নয়। কিছু কুকি ওয়েবসাইট চালাতে অপরিহার্য, যেমন লগইন বা শপিং কার্ট সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়। এই ‘প্রয়োজনীয় কুকি’গুলো সাধারণত প্রত্যাখ্যান করার সুযোগ থাকে না। তবে অন্যান্য অনেক কুকি থাকে, যেগুলো ওয়েবসাইটের পার্সোনালাইজড ফিচার চালু রাখে কিংবা বিজ্ঞাপন পরিবেশন করে। এসব কুকি গ্রহণ করলে ওয়েবসাইট আরও ব্যক্তিকেন্দ্রিক অভিজ্ঞতা দিতে পারে, কিন্তু একইসঙ্গে আপনার গোপনীয়তাও হুমকির মুখে পড়ে।

২০১৮ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের জেনারেল ডেটা প্রটেকশন রেগুলেশন (GDPR) চালু হওয়ার পর থেকে কুকি ব্যবহারে ওয়েবসাইটগুলোকে ব্যবহারকারীর অনুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়। ফলে এখন অধিকাংশ সাইটেই কুকি সম্মতির পপ-আপ দেখতে হয়। তবে অতিরিক্ত এই সম্মতির অনুরোধে অনেক ব্যবহারকারী ‘Consent Fatigue’ বা সম্মতি ক্লান্তির শিকার হন এবং না ভেবেই ‘Accept all’ বেছে নেন।

এ পরিস্থিতির বিকল্প হিসেবে কিছু ব্রাউজারে চালু হয়েছে ‘Global Privacy Control’ (GPC), যার মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওয়েবসাইটকে জানিয়ে দেওয়া যায় ব্যবহারকারীর গোপনীয়তার পছন্দ। যদিও এখনো এই প্রযুক্তির ব্যবহার সীমিত। তবুও সচেতন ব্যবহারকারী চাইলে নিজের ব্রাউজারের সেটিংস থেকে কুকি মুছে ফেলতে পারেন, নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে কুকির অনুমতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, কিংবা ‘Electronic Frontier Foundation’-এর ‘Cover Your Tracks’-এর মতো টুল ব্যবহার করে জানতে পারেন কোথা থেকে তাকে ট্র্যাক করা হচ্ছে।

সবশেষে বলা যায়, কুকি নিজে ক্ষতিকর নয়। বরং এটি ওয়েব অভিজ্ঞতা সহজ করে তোলে। কিন্তু এর মাধ্যমে যে গোপনীয়তা বিসর্জন দিতে হয়, সেটিও অস্বীকার করা যায় না। তাই প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে কুকি গ্রহণ করা যেতে পারে, তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে সতর্ক থেকে সীমিত করা উচিত। সচেতন থাকলে প্রযুক্তির সুবিধাও নেওয়া যাবে, আবার নিজের ব্যক্তিগত তথ্যের ওপরও থাকবে নিয়ন্ত্রণ।


সর্বশেষ সংবাদ