নর্থ সাউথের ঘটনায় ৩২৫ শিক্ষকের উদ্বেগ, সংস্কারের দাবি

মূলবোধ আন্দোলন
মূলবোধ আন্দোলন  © সংগৃহীত

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কুরআন অবমাননার ঘটনায় দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের ৩২৫ জন শিক্ষক গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আজ বুধবার (৮ অক্টোবর) ‘মূলবোধ আন্দোলন’ ব্যানারে তারা এক যৌথ বিবৃতিতে এ দাবি জানান।

বিবৃতিতে শিক্ষকেরা বলেন, ‘আমরা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজের শিক্ষকবৃন্দ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অপূর্ব পাল কর্তৃক পবিত্র কুরআনুল কারিম অবমাননার জঘন্য ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করছি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, ওই শিক্ষার্থী সচেতনভাবে এবং আত্মতৃপ্তির ভঙ্গিতে দীর্ঘক্ষণ কুরআন পদদলিত করেছে ও নিজেই ভিডিও ধারণ করে তা প্রচার করেছে। এটি কেবল ধর্মীয় অবমাননা নয়- এটি একাডেমিক ও নৈতিকতার সীমা অতিক্রম করা এক ঘৃণ্য অপরাধ।’

শিক্ষকেরা আরও উল্লেখ করেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি, দেশের অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পরোক্ষভাবে ইসলাম চর্চাকে নিরুৎসাহিত করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক এক্টিভিটির (যেমন স্পোর্ট, ইয়োগা, সাইকোলজিক্যাল কাউন্সিলিং ইত্যাদি) জন্য নির্দিষ্ট এক্সপার্ট বা কোচ নিয়োগ দেয়া হলেও মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত নামাজের স্থানে ইসলামিক স্কলার বা ইমাম নিয়োগ তো অকল্পনীয় বিষয়ের মতো। 'প্রেয়ার রুম' নামে একট কমন স্পেস থাকে যেখানে থিউরিটিক্যালি যে কোন ধর্মাবলম্বী উপাসনা করতে পারে। একদিকে ক্লাসে হাদীস বা ইসলামী চিন্তার উদাহরণ আনায় শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করার ঘটনা ঘটছে, অন্যদিকে এলজিবিটি বা জেন্ডার আইডেন্টিটির মতো আইন বিরোধী ও সমাজ বিধংসী কনসেপ্ট পড়ানো হচ্ছে।’

আরও পড়ুন: অপূর্ব পালকে স্থায়ী বহিষ্কার করল নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়

‘এই প্রেক্ষাপটে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ভয়াবহ কুরআন অবমাননার ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন অপরাধ নয়, বরং এটি দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা একটি কাঠামোগত ইসলামোফোবিয়ার প্রতিফলন। ঘটনার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত থাকলেও ধারণকৃত ভিডিওতে কার্যকরভাবে কাউকে বাধা দিতে দেখা যায়নি-যা প্রশাসনিক ও নৈতিক ব্যর্থতার সুস্পষ্ট প্রমাণ।’

শিক্ষকরা সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিবৃতিতে বলেন, ‘একই সঙ্গে আমরা সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে বাধ্য হচ্ছি। ইতোপূর্বে রাখাল রাহা কর্তৃক ইসলাম অবমাননার প্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোন ভূমিকা পরিলক্ষিত হয়নি, উল্টো Cyber Security Ordinance, ২০২৫ এ ধর্ম অবমাননার শাস্তিকে কমিয়ে আনা হয়েছে। কিছুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রেবিল নামক একজন চরমপন্থী ট্রান্সজেন্ডার ইসলামী মূল্যবোধের পক্ষে অবস্থান গ্রহণের জন্য দুইজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে হত্যার হুমকি ও উস্কানি দেয় এবং এই ধারা সে অব্যাহত রেখেছে। তার বিরুদ্ধে থানায় জিডি করা সত্ত্বেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অদ্যাবধি কোনো কার্যকর আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এই রাষ্ট্রীয় ও প্রশাসনিক অব্যবস্থা ও নীরবতা ইসলামবিদ্বেষীদের আরও দুঃসাহসী করে তুলেছে।’

শিক্ষকরা দাবি করেছেন, ‘ইউজিসিকে ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। নর্থ সাউথ সহ সকল প্রাইভেট ভার্সিটির প্রশাসনিক কাঠামো ও একাডেমিক পরিবেশে বিদ্যমান ইসলামোফোবিক ধারা নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে চিহ্নিত ও সংস্কার করতে হবে। সেক্সুয়াল হ্যারেজমেন্টের মত ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধেও পলিসি গ্রহণ করতে হবে। মুসলিম শিক্ষার্থীদের সম্মানজনকভাবে নামাজ, ইসলাম চর্চা ও ধর্মীয় স্বাধীনতার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি ক্যাম্পাসে নির্ধারিত ইমাম সহ মসজিদ বা স্বতন্ত্র 'নামাজের ঘর' নিশ্চিত করতে হবে।’

আরও পড়ুন: মধ্যরাতে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ছাত্রকে আটক করেছে পুলিশ

বিবৃতিতে আরও আহ্বান জানানো হয়েছে, ‘আমরা আহহ্বান জানাচ্ছি- কুরআন অবমাননার ঘটনায় দোষী ব্যক্তির সর্বোচ্চ আইনানুগ শাস্তি নিশ্চিত করার সাথে সাথে ইসলামবিদ্বেষী প্রচার এবং মুসলিমদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যেন শূন্য সহনশীলতার নীতি গ্রহণ করা হয় এবং রাষ্ট্র যেন ইসলামোফোবিক প্রবণতাকে প্রশ্রয় না দিয়ে যথাযথ আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগের মাধ্যমে কাঠামোগত ইসলাম-বিদ্বেষ নির্মূল করে সমাজে আস্থা ফিরিয়ে আনে।’

বিবৃতিপ্রদানকারী ৩২৫ জন শিক্ষকের মধ্যে রয়েছেন ৭৬ প্রফেসর, ৫২ অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, ৮৩ অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, ১০৯ লেকচারার এবং ৫ অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর। উল্লেখযোগ্য শিক্ষকদের মধ্যে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সৈয়দা লাসনা কবির, অধ্যাপক ড. এম ওলিউর রহমান; বুয়েটের অধ্যাপক ড. এম এম কারিম; বুটেক্সের অধ্যাপক ড. মো মাসুম; চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোঃ এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী, অধ্যাপক ড. মো আতিয়ার রহমান; শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামীমা তাসনীম; রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তারেক মুহাম্মদ তওফিকুর রহমান; জাহাঙ্গীর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক শামিমা নাসরিন জলি; ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডা মো আসাদুর রহমান; কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. আরিফ মোর্শেদ খান এবং আইইউবি সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মাদ সরোয়ার হোসেনসহ অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ।

বিবৃতির সম্পূর্ণ তালিকা পাওয়া পেতে এ লিঙ্কে ক্লিক করুন।


সর্বশেষ সংবাদ