বুয়েট শিক্ষক দম্পতি

ছাত্রজীবনে কথা বলতেন না, শিক্ষকজীবনে ভালোবেসে বিয়ে

বায়েজীদ-মাশিয়াত
বায়েজীদ-মাশিয়াত  © সংগৃহীত

কথায় আছে কপালের লিখন না যায় খণ্ডন । তেমনটাই ঘটলো বুয়েটের শিক্ষক দম্পতি বায়েজীদ বাতেন ও মাশিয়াত হোসেন দম্পতির বেলায়। নয়তো ছাত্র জীবনে যাকে অপছন্দ করতো কর্মজীবনে তার সাথেই কেন জড়াবে! প্রথমে অপছন্দ তারপর ভালো লাগা থেকে ভালোবাসা এরপর বিয়ে। কিন্তু কাকতালীয় ব্যাপার হলো দুজন একসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডিও করছেন।

বুয়েটের প্রথম বর্ষেই বায়েজীদ বাতেনের পরিচয় হয় গুরুগম্ভীর এক ব্যাচমেটের সঙ্গে। নাম মাশিয়াত হোসেন। প্রথম দেখাতে দুজনেরই দুজনকে খুব অপছন্দ হয়েছিল। মনে হয়েছিল, অপরজন অনেক অহংকারী।

আরও পড়ুন: দশ টাকার নোটে পাওয়া নাম্বারে পরিচয়, সুখে আছেন সোহেল-রওশন

পুরকৌশল বিভাগে একই ব্যাচে পড়তেন। একজন আরেকজনের নামটাও জানতোনা। ৪ বছরের মধ্য কোনদিন কথাও হয়নি। বন্ধুদের মাধ্যমে বায়েজীদ জানতে পারে মাশীয়াত খুব রাগী ছিলো তবে অনেক চুপচাপ। অন্যদিকে বায়েজীদ তার উল্টা। সব সময় হাসি-খুশি, উচ্ছলতায় মেতে থাকতো। একজনের আবার আরেকজনের এই স্বভাব পছন্দ করতোনা। এজন্য নিজেদের মধ্য কখনো সখ্যতা গড়ে উঠেনি।

দুজনকে দুজনার যদি অপছন্দ একসময় ভালোবাসায় পরিণত হয়। তবে ভালো লাগার শুরুটা নিয়ে মাশিয়াত বলেন, আমরা দুজন একসঙ্গে বুয়েটের শিক্ষক হিসেবে চাকরি পাই। কলিগ হওয়ার পর তো আর কথাবার্তা না বলে উপায় নেই। একটু অনিচ্ছার সঙ্গেই এগিয়ে গেলাম। এরপর বন্ধুত্ব হয়ে যায়। ভালোবাসা কখন হয়েছে, জানি না। তবে বন্ধুত্ব থেকেই সব শুরু।

এ বিষয়ে বায়েজীদের বক্তব্য, শিক্ষক হিসেবে নতুনভাবে অনেক কিছু শিখতে হয়। টিচার রুমে একা যেতে মাশিয়াতের মধ্যে একটা ভয় কাজ করত। তাই আমরা একসঙ্গে যেতাম সব সময়। এভাবেই বরফ গলতে শুরু করে।

বায়েজীদ একবার ভিয়েতনাম গেলে মজা করেই তাঁর কাছে খুব দামি এক জোড়া জুতা উপহার চেয়েছিলেন মাশিয়াত। দুজনই জানতেন, এত দামি জুতা কেনার সামর্থ্য বায়েজীদের নেই। কিন্তু জুতা আনতে না পারলেও একই ব্র্যান্ডের পারফিউম ঠিকই এনেছিলেন বায়েজীদ। এ উপহার কিনতে গিয়ে তাঁর নাকি ফ্লাইট ছুটে যাওয়ার জোগাড় হয়েছিল। এসব ছোটখাটো ঘটনা থেকেই ভালোবাসার শুরু।

আরও পড়ুন: হাতের ভর দিয়ে পড়াশোনা করেই আলিম পাস করলেন স্মৃতি

এই ভালোবাসার শুরুটা ছাত্রজীবনে হয়নি বলে খুশি তারা। কারণ তখন সম্পর্ক হলে হয়তো বেশিদিন টিকতোনা বলে অকপটে স্বীকার করলেন মাশিয়াত। তবে শিক্ষকতা জীবনে প্রেম করতে এসে অনেক ভয় কাজ করেছে। নিজেরদের প্রেম লুকিয়ে রেখেছেন সবার থেকে। শিক্ষকরা, শিক্ষার্থীরা জানলে কি বলবে সেই ভয়টা কাজ করেছে সব সময়।

বিয়ের পর উচ্চশিক্ষার জন্য দুজন একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু সত্যই যে একসঙ্গে ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটিতে সুযোগ পেয়ে যাবেন, ভাবতেই পারেননি। দুজনই বেড়াতে ভালোবাসেন। পড়াশোনার ভীষণ চাপের মধ্যেও ছয় মাস আগে থেকে একেকটা ভ্রমণের পরিকল্পনা শুরু করেন।

বায়েজীদ বলেন, যেহেতু দুজন দুজনের কাজের চাপটা বুঝি, তাই জীবনটা অনেকখানি সহজ হয়ে গেছে।


সর্বশেষ সংবাদ