হাতে ভর দিয়েই আলিম পাস করলেন স্মৃতি

স্মৃতি
স্মৃতি  © টিডিসি ফটো

দুই পা ছাড়াই জন্মেছেন আবেদা আঞ্জুম স্মৃতি। কখনো হামাগুড়ি দিয়ে আবার কখনো মায়ের কোলে চড়ে নিয়মিত ক্লাস করে পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন অদম্য এই শিক্ষার্থী। ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভবানীপুর নামাপাড়া গ্রামের মৃত আবদুল আওয়ালের মেয়ে আবেদা আঞ্জুম স্মৃতি এবার আলিম পরীক্ষায় ভবানীপুর ফাজিল সিনিয়র মাদরাসা থেকে জিপিএ ৩.৭৯ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।

আরও পড়ুন: উত্তীর্ণের চেয়ে আসন বেশি, তবুও শঙ্কা উচ্চ শিক্ষায়

দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট স্মৃতি। মা সুফিয়া খাতুন গৃহিণী। ভাইয়েরা কৃষিকাজ করেন, বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছেন। অভাব-অনটনের সংসারেই তার বেড়ে ওঠা। দেড় বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছে। মা সুফিয়া খাতুনের কোলে চড়ে পিইসি ও জেডিসি পাস করেছে।

স্মৃতি জানান, তার পা না থাকলেও স্কুলে যাওয়ার তীব্র ইচ্ছা ছিল ছোটবেলা থেকেই। শারীরিক অক্ষমতার জন্য পরিবার, স্বজন ও প্রতিবেশীরা তার পড়াশোনা নিয়ে কিছুটা সংশয় প্রকাশ করলেও তার কখনো মনে হয়নি সে পারবে না। মাত্র দেড় বছর বয়সে বাবাকে হারালেও জীবন যুদ্ধে হারতে নারাজ তিনি। শারীরিক সীমাবদ্ধতার মধ্যেই ছোটবেলায় সিদ্ধান্ত নেন, লেখাপড়া করে বড় হবেন। মায়ের সহযোগিতায় শুরু হওয়া তার সেই জীবনসংগ্রাম এখনো অব্যাহত। স্মৃতি বয়স যখন চার, মায়ের কোলে চড়ে বাড়ির পাশে কান্দানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়া শুরু করেন। সেই স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণি শেষ করে দাখিল ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন কান্দানিয়া কচুয়া বাজার দাখিল মাদ্রাসায়।

প্রতিদিন সকালে মা সুফিয়া খাতুন মেয়ে স্মৃতিকে কোলে করে বাড়ির পাশের সড়কে ভ্যান-রিকশায় তুলে দিতেন। মাদরাসা ছুটির পর দুপুর অথবা বিকেলে আবারও সড়কে গিয়ে মেয়ের জন্য অপেক্ষা করতেন। এভাবে জেডিসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৫০ এবং দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ ৩.৯৪ পেয়ে পাস করেন স্মৃতি। হাতের ওপর ভর দিয়ে চলা স্বপ্নবাজ স্মৃতি লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার প্রতিজ্ঞা করেন। সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে বাড়ি থেকে চার কিলোমিটার দূরে ভবানীপুর ফাজিল সিনিয়র মাদ্রাসায় আলিমে ভর্তি হন তিনি। আলিম পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পেয়েছেন জিপিএ ৩.৭৯ ।

আরও পড়ুন: ফুল কিনে রাস্তা পার হতে গিয়ে প্রাণ গেলো যুবকের

উচ্ছ্বসিত আবেদা আঞ্জুম স্মৃতি বলেন, আলিম পাস করতে পেরে খুব আনন্দ লাগছে। সেইসঙ্গে সংশয়ের কথা ভেবে কষ্টও লাগছে। অভাবের এই সংসারে শেষ পর্যন্ত উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারব তো?

তিনি বলেন, দরিদ্র পরিবারে জন্ম, তার মধ্যে শারীরিক প্রতিবন্ধী। ইচ্ছা আছে লেখাপড়া শেষ করে চাকরি করব। কিন্তু কৃত্রিম পা আমার কাছে স্বপ্নের মতো। কিন্তু এই স্বপ্ন পূরণের সামর্থ্য আমাদের নেই।

মাদ্রাসার অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মাওলানা মোবারক আলী জানান, স্মৃতি যথেষ্ট মেধাবী শিক্ষার্থী। অমানবিক কষ্ট করে পড়াশোনা করেছে। হার না মানা স্বপ্নবাজ মেয়ে স্মৃতির আলিম পাসে আমরা সবাই খুব আনন্দিত। 


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence