খাওয়া এবং ঘুম ছাড়া বাকি সময় পড়াশোনায় করেছি: ঢাকা মেডিকেলে চান্সপ্রাপ্ত মুনিয়া
- আরফান আলী, শেরপুর জেলা প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:৩৫ PM , আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:৩৭ PM
২০২৫–২৬ শিক্ষাবর্ষের মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে জাতীয় মেধায় ১৫৫তম স্থান অর্জন করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তাবাসসুম শামস মুনিয়া। তিনি শেরপুর সরকারি কলেজ, শেরপুর থেকে চলতি বছর এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।
মুনিয়া শেরপুর সদর উপজেলার মধ্য শেরি উত্তর শিংপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তার পিতা মো. শামস ই রাব্বী পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার এবং মাতা মোর্শেদা বেগম গৃহিণী। তিন ভাই–বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। এর আগে ২০২০–২১ শিক্ষাবর্ষে তার বড় বোন সুমাইয়া শামস রুহি শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ, সিরাজগঞ্জে ভর্তির সুযোগ পান।
নিজের সাফল্য, প্রস্তুতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে কথা বলেছেন তাবাসসুম শামস মুনিয়া। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শেরপুর জেলা প্রতিনিধি আরফান আলী।
আপনার সাফল্যের পেছনের গল্প শুনতে চাই:
মুনিয়া বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমার ইচ্ছা ছিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। কিন্তু বাবা–মায়ের ইচ্ছা ছিল আমি ডাক্তার হই। ২০২০ সালে বড় বোন যখন মেডিকেলে চান্স পায়, তখন মনে হয়—পরিবারে দুইজন ডাক্তার থাকলে ভালো হবে। তখন থেকেই ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছাটা ধীরে ধীরে শক্ত হয়। এরপর লক্ষ্য ঠিক করে পুরো মনোযোগ দিয়ে প্রস্তুতি নিতে শুরু করি।
আপনার পড়াশোনার রুটিন কেমন ছিল?
তিনি বলেন, খাওয়া আর ঘুমানোর সময় ছাড়া বাকি সময় প্রায় পুরোটাই পড়াশোনার মধ্যে থাকতাম। নির্দিষ্ট ঘণ্টা ধরে হিসাব করতাম না, তবে প্রতিদিন নিয়মিত পড়ার চেষ্টা করেছি। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি পাঠ্য বইয়ে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে কেমন ফলাফল ছিল?
মুনিয়া জানান, এসএসসি ও এইচএসসি দুইটিতেই জিপিএ-৫ ছিল। আমি নিয়মিত পড়াশোনা করতাম, তবে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় যে পরিমাণ পরিশ্রম করেছি, সেটি ছিল একেবারে ভিন্ন মাত্রার।
প্রস্তুতির জন্য কোনো কোচিংয়ে ভর্তি হয়েছিলেন?
তিনি বলেন, মেডিকেল ভর্তি প্রস্তুতির জন্য উন্মেষের শেরপুর ব্রাঞ্চে কোচিং করেছি। সেখানে নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি। এর বাইরে আর কোনো কোচিং করিনি।
পড়াশোনার সময় মোবাইল বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করতেন?
মুনিয়া বলেন, আমার নিজের কোনো মোবাইল ফোন বা ফেসবুক আইডি ছিল না। কারো সঙ্গে যোগাযোগের প্রয়োজন হলে আম্মুর ফোন ব্যবহার করতাম। এতে পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ ধরে রাখা অনেক সহজ হয়েছে। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর আম্মুর ফোনে আমার একটা ফেসবুক আইডি খুলেছি।
চিকিৎসা পেশায় আগ্রহ কীভাবে তৈরি হলো?
তিনি বলেন, বড় বোন মেডিকেলে পড়াশোনা করছে—এটা আমাকে অনেক অনুপ্রাণিত করেছে। পাশাপাশি বাবা–মায়ের ইচ্ছাও ছিল আমি ডাক্তার হই। ধীরে ধীরে বুঝতে পারি, মানুষের সেবার সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য এই পেশাটাই সবচেয়ে উপযুক্ত।
পরবর্তীতে মেডিকেলের কোন স্পেশালিটিতে যাওয়ার ইচ্ছা?
মুনিয়া বলেন, স্পেশালিটি পরবর্তী পড়াশোনার ওপর নির্ভর করে। তবে আমার গবেষণার দিকে যাওয়ার ইচ্ছা আছে। বিশেষ করে ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য রোগ নিয়ে গবেষণা করে এমন কিছু করতে চাই, যাতে গরিব মানুষও সহজে চিকিৎসা পায়।
যারা ভবিষ্যতে মেডিকেলে ভর্তি হতে চায়, তাদের জন্য কী পরামর্শ দেবেন?
তিনি বলেন, পড়াশোনা করতে হবে—এর কোনো বিকল্প নেই। তবে আগে নিজের মনকে বুঝতে হবে, আমি সত্যিই ডাক্তার হতে চাই কিনা। স্বপ্নটা নিজের হলে পড়াশোনার কষ্টটা আর কষ্ট মনে হবে না। পাশাপাশি পড়াশোনার চাপের মধ্যে নিজের যত্ন নেওয়াটাও খুব জরুরি।
মুনিয়ার মা মোর্শেদা বেগম বলেন, তার তিন সন্তানই শান্ত স্বভাবের। বড় মেয়ে ডাক্তারি পড়াশোনা করছে, এবার ছোট মেয়েও মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। ছোট ছেলেকেও ডাক্তার বানানোর স্বপ্ন দেখেন তিনি। সন্তানদের জন্য সবার কাছে দোয়া কামনা করেন তিনি।