‘পরিকল্পিত’ শুরুর দু’বছরের চেষ্টাতেই অ্যাডমিন ক্যাডার বুয়েটের প্রসূন
- মামুন হোসাইন, ভোলা প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২৫, ০২:৪৪ PM , আপডেট: ৩১ আগস্ট ২০২৫, ০৭:৫০ AM
মো. নাঈম আকবর প্রসূন। ৪৪তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। এটি ছিল তার ক্যাডার পছন্দ তালিকার প্রথম পছন্দ। তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। সম্প্রতি নিজের সাফল্যের গল্প ও চাকরিপ্রার্থীদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ নিয়ে মুখোমুখি হয়েছেন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের। তার কথাগুলো শুনেছেন—মামুন হোসাইন।
আপনার বিসিএস ক্যাডার হওয়ার অনুভূতি জানতে চাই
ছোটবেলা থেকেই আমার মা-বাবার স্বপ্ন ছিল আমি বিসিএস ক্যাডার হব, দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করব। সে থেকেই বিসিএস ক্যাডার হবার স্বপ্ন আমার মনে গেঁথে গিয়েছিল। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ভাই ও আপুরা যখন বিসিএস ক্যাডার হবার পরে তাদের সফলতার গল্প শোনাতেন, তখন তা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ অবশেষে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।সৃষ্টিকর্তার অশেষ অনুগ্রহে আমি আমার প্রথম পছন্দে নির্বাচিত হয়েছি, এটি সত্যিই আমার জীবনের অন্যতম বড় প্রাপ্তি। এই সফলতার পেছনে আমার অধ্যবসায়, আত্মবিশ্বাস, ধৈর্য এবং সবচেয়ে বেশি অবদান আমার পরিবার বিশেষ করে আমার বাবা-মায়ের।
আপনার বিসিএস প্রস্তুতির শুরুটা কেমন ছিল? কবে থেকে নিয়মিত পড়াশোনা শুরু করেছিলেন?
আমি ২০১৯ সালে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করি। পাশ করার পর থেকেই ইচ্ছা ছিল কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরে চাকরি করা। সেই লক্ষ্যেই কয়েকটি পরীক্ষায় অংশ নিই। কিন্তু এরপরই আসে ২০২০ সালের করোনা মহামারি। ওই সময় চাকরির সার্কুলার একেবারেই কমে আসে। এই সময়টায় আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদে নিয়োগের জন্য কোচিং শুরু করি, যদিও বিভিন্ন কারণে তা শেষ করা সম্ভব হয়নি। ২০২১ সালে আমি ৪১তম ও ৪৩তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নিই, তবে সেভাবে প্রস্তুতি না থাকায় উত্তীর্ণ হতে পারিনি। সত্যি বলতে, তখন বিসিএস আমার মূল লক্ষ্য ছিল না।
আমার প্রস্তুতির নতুন অধ্যায় শুরু হয় ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে। ৪৪তম বিসিএসকে কেন্দ্র করে পরিকল্পিতভাবে প্রিলিমিনারির প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি এবং আলহামদুলিল্লাহ, ওই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। এরপর পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে লিখিত পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিই এবং ২০২২ সালের ডিসেম্বরে পরীক্ষায় অংশ নিই। লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয় ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে। ফল হাতে পাওয়ার পর থেকেই আমি ভাইভার জন্য নিজেকে পরিপূর্ণভাবে প্রস্তুত করতে শুরু করি।
প্রিলি , লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার প্রস্তুতিতে কী ধরনের পার্থক্য ছিল?
প্রিলিমিনারি এবং লিখিত পরীক্ষার ক্ষেত্রে গণিত, বিজ্ঞান, মানসিক দক্ষতা, ইংরেজি এ বিষয়গুলোতে গুরুত্বারোপ করেছি। অন্যান্য বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে আমি অ্যানালাইসিস করে বুঝে পড়াশোনা করার ট্রাই করেছি। না বুঝে মুখস্থ করার অভ্যাস কখনো সফলতা বয়ে আনে না। বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির ক্ষেত্রে আমি প্রচুর দৈনিক পত্রিকা পড়তাম এবং ইউটিউবে ভিডিও দেখার মাধ্যমে আত্মস্থ করার চেষ্টা করতাম। বিসিএস এর লিখিত এবং ভাইভা পরীক্ষায় ভালো করার জন্য নিয়মিত বাংলা এবং ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা পড়ার কোন বিকল্প নেই। আমার স্ট্রং জোন ছিল গণিত, বিজ্ঞান, ইংরেজি ও মানসিক দক্ষতা। এসব বিষয়ে আত্মবিশ্বাস ধরে রেখেই এগিয়ে গিয়েছি। পত্রিকা পড়া, বিশ্লেষণধর্মী অধ্যয়ন এবং মক ভাইভা ছিল প্রস্তুতির নিয়মিত অংশ।
ক্যাডার চয়েজ আপনি কীভাবে দিয়েছিলেন? কোন বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে ক্যাডার চয়েজ দেওয়া উচিত?
আমার ক্যাডার চয়েজ লিস্টের প্রথমে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার ছিল। সামাজিক মর্যাদা, অবস্থান, গ্রহণযোগ্যতা, প্রমোশনসহ অন্যান্য আর্থিক সুবিধাদির কথা চিন্তা করেই আমি প্রশাসন ক্যাডার প্রথমে দিয়েছি চয়েজ লিস্টের। দেশের রুট লেভেলের সমস্যাগুলো সরেজমিনে অবলোকন করা, জনসাধারণের সেবামূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়া, দেশের পলিসি মেকিং সরাসরি ভূমিকা রাখা প্রভৃতি কারণ আমি প্রশাসন ক্যাডার প্রথমে দিয়েছি। পররাষ্ট্র ও পুলিশের প্রতি আগ্রহ তেমন ছিল না বলে চয়েজলিস্টে রাখিনি। প্রশাসন >ট্যাক্স >অডিট এভাবে ছিল আমার চয়েজ লিস্ট।
ভবিষ্যতে যারা বিসিএস ক্যাডার হতে চান, তাদের জন্য আপনার কী পরামর্শ থাকবে?
চাকরির প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে আমি বলব বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে চাইলে অসীম ধৈর্যশীল হতে হবে। শুধু মুখস্থ বিদ্যার মাধ্যমে বিসিএসের এই মহাসমুদ্র পাড়ি দেয়া সম্ভব নয়,এজন্য দরকার যথোপযুক্ত পরিকল্পনা,পরিশ্রম করার মানসিকতা, অ্যানালাইসিস সহকারে মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া। নিয়মিত দৈনিক পত্রিকা পাঠের পাশাপাশি অবসর সময়ে প্রচুর লেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। দেশ ও ও বহির্বিশ্বের খুঁটিনাটি তথ্য প্রবাহ সম্পর্কে আপ টু ডেট ও স্বচ্ছ ধারণা রাখতে হবে।
তবে আমি মনে করি, জীবনের জন্য বিসিএস; বিসিএস এর জন্য জীবন নয়। বিসিএস পরীক্ষায় সফলতা লাভ করতে হলে আপনাকে ধৈর্য এর চরম পরীক্ষা দিতে হবে। বিসিএস পরীক্ষার পাশাপাশি নন ক্যাডার সহ অন্যান্য সরকারি চাকরির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা যেতে পারে। এছাড়া বর্তমানে বাংলাদেশে প্রাইভেট সেক্টরেও প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। বিসিএস পরীক্ষায় সফলতার হার খুবই কম, আপনি একজন ভাল প্রার্থী হয়েও অকৃতকার্য হতেই পারেন। তার মানে এই নয় যে আপনার জীবন মূল্যহীন হয়ে পড়েছে।সর্বদা বিকল্প চিন্তা করা এবং নিজেকে প্রস্তুত রাখা বাঞ্ছনীয়।