ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
এক বিভাগ, একই ফল— এবার একসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন তিন বন্ধু
- রাকিব হোসেন, ইবি
- প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৪, ০৯:৪৬ AM , আপডেট: ১৯ মে ২০২৪, ০৩:৩৮ PM
বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন বন্ধু নাঈম হোসেন, মামুনুর রশিদ ও সুমন আলী। তারা তিনজনই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। একসঙ্গে ক্লাস, পড়ালেখা ও চলাফেরা ছিল এ তিন বন্ধুর। তাদের তিনজনের ফলাফলও একই। তিনজনই বিবিএতে পেয়েছেন ৩.৮৪ সিজিপিএ ও এমবিএতে পেয়েছেন ৩.৯৩ সিজিপিএ।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পৃথক তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণায় ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ পেয়েছেন তারা। স্বপ্ন জয়ের প্রস্তুতিও শুরু করেন একসঙ্গে। তিন বন্ধুর এমন পরিকল্পিত সাফল্যে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন তারা। তাদের এমন সাফল্যে খুশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও।
সুমন আলী ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস অ্যাট এল পাসোতে (পিএইচডি ইন ফাইন্যান্স), মামুনুর রশিদ ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস অ্যাট সান আন্তোনিও (পিএইচডি ইন ফাইন্যান্স) এবং নাঈম হোসেন ইউনিভার্সিটি অফ নিউ অরলিন্স (পিএইচডি ইন ফাইন্যান্সিয়াল ইকোনোমিকস) বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব কার্যক্রমেও একসঙ্গে দেখা যেত এ তিন বন্ধুকে। তারা তিনজনে একসঙ্গে অনার্স তৃতীয় বর্ষ থেকে শুরু করেন গবেষণা কার্যক্রম। এমবিএ শেষ করার আগেই তাদের তিন বন্ধুরই বিভিন্ন জার্নালে বেশ কয়েকটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। তিনজনই আইইএলটিএসে ৬.৫ এর ওপর ও জিআইয়ে ৩০০-এর ওপর স্কোর তুলেছেন। পরে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করেন তারা। সুযোগ মেলে যুক্তরাষ্ট্রের তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে।
নাইম হোসেন বলেন, আমাদের এমন সাফল্যে আমার সবাই অনেক বেশি খুশি। আমাদের এমন অর্জন মানুষ এত ভালোভাবে মূল্যায়ন করবে, ভাবতে পারিনি। আরও ভালো লাগে এটা ভেবে যে, আমাদের অনার্স থেকে শুরু করে এই পর্যন্ত সবকিছু কেমন যেন আল্লাহ মিলিয়ে দিয়েছেন। একটার পর একটা ধাপ যে এত সুন্দরভাবে এগিয়ে নিতে পেরেছি, তা আজ বুঝতে পেরে ভালো লাগছে।
আরেক শিক্ষার্থী মামুনুর রশিদ বলেন, আমাদের জন্য এই সাফল্যটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ বাংলাদেশ থেকে খুব কম শিক্ষার্থীই আছেন, যারা সরাসরি আমেরিকার ফাইন্যান্সের পিএইচডির সুযোগ পান। সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয় হলো তিন বন্ধুর একসাথে পিএইচডি শুরু করা, যেখানে আমরা তিনজনই একসাথে অনার্স চতুর্থ বর্ষ থেকে গবেষণা শুরু করেছি। আমরা এই চ্যালেঞ্জিং জার্নিতে সফল হয়েছি।
নিজেদের সাফল্যের দিনেও পেছনের কারিগরদের স্মরণে রেখেছেন নাইম। তিনি বলেন, আমাদের এই সফলতার পেছনে সুপারভাইজার ড. মো. বখতিয়ার হাসান স্যারের অবদান সবচেয়ে বেশি। বখতিয়ার হাসান স্যার আমাদেরকে হাতেকলমে যেভাবে গবেষণা শিখিয়েছেন, আমি হলফ করে বলতে পারি দেশে এরকম সুপারভাইজার খুব কমই পাওয়া যাবে।
শিক্ষক বখতিয়ারের অবদানের কথা উল্লেখ করে নাইম আরও বলেন, উনি সবসময় আমাদেরকে অনুপ্রেরণা যোগাতেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানের গবেষকদের সাথে গবেষণা করার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন। এ ছাড়া আমার বন্ধুরাও আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে নাইম বলেন, আকাশ সমান স্বপ্ন দেখি। আল্লাহর রহমত থাকলে স্বপ্ন জয় করতে পারবো। একজন ভালো শিক্ষক হতে চাই, যেখানে আমি আমার গবেষণা জ্ঞানকে কাজে লাগাতে পারব। আমি চাই আমার দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে গবেষণাবিমুখী সংস্কৃতি, সেটাকে সমূলে উৎপাটন করে গবেষণার বীজ বপন করতে।
যারা এমন স্কলারশিপ পেতে চান তাদের উদ্দেশ্যে নাইম বলেন, আমেরিকায় ফুল-ফ্রি স্কলারশিপে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাওয়ার জন্য অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে লেগে থাকতে হবে। শুধু মেধাবী হলেই হবে না, ধৈর্য ধরে লেগে থাকা ও পরিশ্রমের মানসিকতা থাকতে হবে। যেটা আমাদের তিনজনেরই ছিল। আমাদের প্রত্যেকেই একাধিকবার আইইএলটিএস এন্ড জিআরই পরীক্ষা দিতে হয়েছে। কারণ প্রথমবারে আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাইনি। এমনকি আমাকে তিনবার জিআরই দিতে হয়েছিল। যেটা ধৈর্য ও আর্থিক সামর্থ্যেরও ব্যাপার।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষক ড. বখতিয়ার হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, তারা খুব বেশি পরিশ্রম করেছে। আর আমার জায়গা থেকে আমি সাধ্যমতো দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তাদের রেজাল্ট শুনে আমি অনেকটা অবাক হয়েছি। তাদের সফলতায় আমি আনন্দিত। আগামীতে তাদের এ সাফল্যের ধারা অব্যাহত থাকুক।