৪১তম বিসিএসে পুলিশ, ৪৩-এ প্রশাসন ক্যাডার হাবিপ্রবির মাসুদ
- রিয়া মোদক, হাবিপ্রবি
- প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:২২ PM , আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:১৩ AM
বিসিএস নামক সোনার হরিণকে টানা দুইবার বাজিমাত করেছেন দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মো. মাসুদ রানা। ৪১তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডার এবং ৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি। বর্তমানে কর্মরত আছেন জনতা ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার হিসেবে। তার এই ধারাবাহিক সাফল্যে খুশি তার মা-বাবাও।
মাসুদ হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি প্রকৌশল বিভাগে স্নাতক সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইরিগেশন অ্যান্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট নিয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
দু’টি ক্যাডারই বর্তমান সময়ে বেশ আকাঙ্ক্ষিত চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছে। তবে মাসুদ রানা দু’টি ক্যাডার নিয়ে যোগদান বিষয়ে মধুর বিড়ম্বনায় রয়েছেন। শেষমেশ কোনটাকে ‘হ্যাঁ’ বলবেন, কোনটাকে ‘না’ বলবেন—তা নিয়ে রয়েছেন দোলাচলে। কোন ক্যাডারে যোগদান করবেন, জানতে চাইলে মাসুদ বলেন, এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেইনি। একটু ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
মাসুদ বিসিএসের প্রস্তুতি নেন মাস্টার্সের শেষ সেমিস্টার থেকে। তিনি বলেন, প্রস্তুতিটা গোছানো ছিল না খুব একটা। মাস্টার্স শেষের আগেই কোভিডের জন্য বাসায় চলে এসেছিলাম। এর মাঝেই কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর হিসেবে যোগদান করি। এটাই আমার প্রথম চাকরি ছিল।
তিনি বলেন, অফিস টাইমে বই নিয়ে যেতাম। সময় পেলে একটু পড়তাম। এছাড়া মাস্টার্সের রিসার্চ পেপারের কাজও করতে হতো একই সাথে। এরপর জনতা ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার হিসেবে যোগদানের সুযোগ আসে। সেখানে যুক্ত হই। বর্তমানে এখানেই কর্মরত আছি।
ব্যাংকের জবে চাকরির পাশাপাশি পড়াশুনার জন্য সময় বের করাটা খুব কঠিন। বিসিএস জয় করার পেছনে সহ শিক্ষাকার্যক্রমগুলো মাসুদকে বেশ এগিয়ে রেখেছিল বলে মনে করেন তিনি। অনার্সে থাকা অবস্থায় দিনাজপুরের স্কুল পর্যায়ের ম্যাথ অলিম্পিয়াড, সায়েন্স অলিম্পিয়াড—এসবে নিয়মিত অংশগ্রহণ করেছেন।
পরিকল্পনামাফিক প্রস্তুতি এবং এসবে ভালো প্রস্তুতি থাকায় গণিত, বিজ্ঞান ও ইংরেজিতে অন্যদের থেকে এগিয়ে ছিলেন তিনি।
ক্যাডার হিসেবে প্রশাসন প্রথম চয়েজ মাসুদের। তবে মাসুদ বলেন, যার যে ধরনের পেশা পছন্দ, তার সে ধরনের ক্যাডারেই যাওয়া উচিত। কেউ যদি ফোর্স, ইউনিফর্ম এসব পছন্দ হয় তাহলে পুলিশ আগে দেবে। কারো বাইরে জব করার ইচ্ছা থাকলে ফরেইন দেবে। যাদের মাঠপর্যায়ে কাজ পছন্দ তারা প্রশাসন দেবে।
বিসিএস ও ধৈর্য একে অপরের পরিপূরক। ধৈর্য ও অধ্যবসায় নিয়ে কীভাবে পড়াশোনা করলে বিসিএসে এগিয়ে থাকা যায় সে ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছেন মাসুদ। তিনি বলেন, প্রতিটি শিক্ষার্থীর পড়াশোনার ধরন আলাদা আলাদা। তাই ভিন্ন উপায় অবলম্বন করতে হয়। অনার্সে থাকা অবস্থায় ম্যাথ আর ইংলিশে বেসিক ঠিক করে রাখলে অনেক এগিয়ে থাকবে। এরপর বিগত বছরের প্রশ্নগুলো দেখে প্রস্তুতি নিতে হবে।
তিনি বলেন, সবার নিজের সুবিধামতো করে পরিকল্পনা করা উচিত। কারোরই উচিত হবে না অন্য কাউকে অন্ধভাবে অনুসরণ করা। যেভাবে পড়াশোনা করলে নিজের সুবিধা হবে সেভাবেই পড়া উচিত।
সামনে যারা বিসিএস পরীক্ষা দেবেন, তাদের জন্যও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। বিসিএসকে একমাত্র লক্ষ্য না বানানোর পক্ষে মত তার। তার ভাষ্য, সব পেশাই সম্মানের। বিসিএসও চাকরি জন্য একটি পরীক্ষা মাত্র। এটা নিয়ে বেশি মাতামাতি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুব ক্ষতিকর।
‘‘মানসিক প্রস্তুতি এমন হতে হবে যে বিসিএসের জন্য প্রিপারেশন নেব। কিন্তু এই প্রিপারেশন যে শুধু বিসিএসের জন্য কাজে লাগাবো তা না, বরং যেকোনো পরীক্ষা যেমন—ব্যাংক বা অন্যান্য যেকোনো জবের ক্ষেত্রেই সেটা কাজে লাগবে। বিসিএসের প্রস্তুতিটা যেকোনো চাকরির জন্য মূলধন হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।’’
মাসুদ রানার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যতটা সম্ভব স্বচ্ছতার সাথে নিজের দায়িত্বটুকু পালন করবো।