শেষ সময়েও অভিযোগের শেষ নেই

আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য
আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য  © ফাইল ছবি

আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পর শুরুর দিকে সংগঠনের কর্মকাণ্ডে বেশ সক্রিয় ছিলেন। নতুন দায়িত্বগ্রহণের পর সংগঠনের কর্মকাণ্ড নিয়ে কর্মীদের মাঝে আশার সঞ্চার করেছেন এ দুই নেতা। অনেক সিনিয়র নেতাও তাদের দায়িত্বের প্রশংসা করেছেন। কিন্তু ধীরে ধীরে এ প্রশংসা দুর্নামে রুপ নিয়েছে। এখন শেষ সময়ে এসে যেন শীর্ষ এ দুই নেতার বিরুদ্ধে নেতাকর্মীদের অভিযোগের পাহাড় জমেছে।

অভিযোগ আছে, নেতাকর্মীদের নিয়ে জয়-লেখকের নিয়মিত মধুর ক্যান্টিনে না বসা, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের বৈঠক না করা, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে ছাত্রলীগ নেতা ও সাংবাদিকদের ফোন না ধরা। এছাড়া বিভিন্ন জেলায় বিতর্কিতদের কমিটিতে পদায়ন করার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগের প্রায় একশত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতার সঙ্গে কথা হয় দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের। তারা জানিয়েছেন, দায়িত্ব পাওয়ার পর শীর্ষ এ দুই নেতাকে বিভিন্ন সমস্যা এবং প্রয়োজনে ফোনে পাওয়া যায় না। এমনকি আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা ফোন দিলেও তারা ফোন ধরেন না। এছাড়া, বিভিন্ন বিষয়ে সাংবাদিকরা ফোন দিলেও তারা ঠিকমতো যোগাযোগ করে না।

তাদের অভিযোগ, দলীয় কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে জয়-লেখক অন্যান্য নেতাদের মতামত নেন না। ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলার কমিটি ঘোষণা করেন। এসবের মাধ্যমে তাদের স্বৈরাচারী মনোভাব ফুটিয়ে উঠেছে।

আরও পড়ুন: নেতাকর্মীদের এড়িয়ে চলছেন ছাত্রলীগের জয়-লেখক

নেতাকর্মীরা জানান, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কমিটি ঘোষণার পর থেকে নিয়মিত মধুর ক্যান্টিনে আসেন না শীর্ষ এ দুই নেতা। মাঝেমধ্যে আসলেও বেশিক্ষণ সময় দেন না। এরফলে নেতাকর্মীরা তাদের বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে পারেন না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংগঠনটির এক সাংগঠনিক সম্পাদক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিভিন্ন জায়গায় কমিটি দেয়ার ক্ষেত্রে বিতর্কিতদের পদায়ন করা হয়েছে। সম্প্রতি লেখকের নিজস্ব উপজেলা মনিরামপুরে ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে বিতর্কিতদের পদায়ন করার অভিযোগ উঠে। যার কারণে ওই উপজেলার ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা লেখককে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে বিবৃতি দেয়। এছাড়া, বিভিন্ন জেলা-উপজেলা কমিটিতে অছাত্র এবং বিতর্কিতদের কমিটিতে পদায়ন করা হয়েছে।

এক ফেসবুক পোস্টে সংগঠনটির সহ-সভাপতি সৈয়দ মুহাম্মদ আরিফ হোসেন বলেন, ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতার অসঙ্গতি নিয়ে যতই কথা বলি, তারা ততই বেপরোয়া হয়ে ওঠে। সর্বশেষ কয়টি জেলা কমিটি গঠন নিয়ে বিতর্ক উঠছে সবচেয়ে বেশি। অষ্টম শ্রেণী পাস করা একটা ছেলে জেলা ইউনিটের শীর্ষ নেতা হয়। এছাড়া বানিজ্যের কথা নাই বলি। সংগঠনকে নিলামে তোলা হয়েছে। চাঁদ রাতের মতো বেচা-কেনা চলছে। প্রতিবাদ করার কেউ নেই। সবাই নেতা হওয়ার স্বপ্নে বিভোর। প্রতিবাদ করলে নাকি নেতা হওয়া যায় না।

সংগঠনটির সাবেক কমিটির পর ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সংগঠনের সিনিয়র সহ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়কে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর প্রায় ৪ মাস পর ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি  সংগঠনটির ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের ভারমুক্ত করে পূর্ণাঙ্গ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করেন।

ভারমুক্ত হওয়ার পর সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য সাবেক কমিটির একই পথে হাঁটা শুরু করেন। তাদের বিরুদ্ধেও কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকা নেতাদের দায়িত্ববণ্টন, জেলা কমিটি প্রদান না করা, কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সমন্বয়হীনতাসহ নানা অভিযোগ উঠে। কিন্তু তারা বিভিন্ন ইস্যু দেখিয়ে এসব বিষয় কৌশলে এড়িয়ে চলেন।

সংগঠনটির শীর্ষ এ দুই নেতার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে তাদের জীবনযাত্রায়ও আসে পরিবর্তন। বিলাসবহুল জীবন বেছে নিয়েছেন তারা। দায়িত্ব পাওয়ার আগে শীর্ষ এ দুই নেতা থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে। চলাফেরার জন্য ব্যবহার করতেন বাইক। কিন্তু দায়িত্ব পাওয়ার পর ব্যবহার পর হল ছেড়ে উঠেন বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে, ব্যবহার করেন প্রায় অর্ধ কোটি টাকা দামের প্রাইভেট কার।

আরও পড়ুন: প্রেস রিলিজে সরব, বাস্তবে নিরব জয়-লেখক!

এ বিষয়ে সংগঠনটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, তারা যেসব করতেছে এটা আসলে খুবই দুঃখজনক। এসব শুনলে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। আজকে তাদের কর্মকান্ডে নেতাকর্মীরা হতাশ। ইদানিং তারা অনেক জেলায় কমিটি ঘোষণা করেছে প্রেজ রিলিজের মাধ্যমে। সম্মেলন ছাড়া কমিটি ঘোষণা করা কোনভাবেই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ঠিক হতে পারে না।

রাব্বানী আরও বলেন, ছাত্রলীগের যে ঐতিহ্য রয়েছে তা ম্লান হতে চলেছে। তাদেরকে প্রধানমন্ত্রী নিজেই দায়িত্ব দিয়েছেন। কিন্তু তারা দায়িত্ব পাওয়ার পর নেতাকর্মীদের কোন মতামত গ্রহণ করে না। মধুর ক্যান্টিনে আসে না। বিভিন্ন জেলার কমিটি দিতে আর্থিক লেনদেনেরও অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এসব শুনলে আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়।

তাদের এসব অভিযোগের বিষয়ে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় গণমাধ্যমকে বলেন, যোগ্যতার বিচারেই আমরা নেতৃত্ব নির্বাচন করি। সেখানে আর্থিক লেনদের প্রশ্নই আসে না। কেউ যদি বলে কমিটি দেয়ার ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেন হচ্ছে, আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে কেউ নেতৃত্বে আসছে- তারা যদি এরকম প্রমাণ দিতে পারে আমি সেটি মাথা পেতে নিয়ে দায়িত্ব থেকে সরে যাবো।

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, নতুন নেতৃত্বে যেই আসুক, তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে। এরকম একটা শ্রেণি রয়েছে। এরা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এসব করে থাকে। বিভিন্ন মানুষের এজেন্ডা থাকে এ শ্রেণির বক্তব্যে। এ শ্রেণি চক্র হয়ে পরিকল্পিতভাবে কাজ করছে। আমরা মনে করি, তথ্য-প্রমাণ ছাড়া এ ধরনের অভিযোগ সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে।

এদিকে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২০ সালের ৩০ জুলাই। ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই কমিটি গঠিত হয় সংগঠনটির। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ দুই বছর অতিক্রম করেছে। সর্বশেষ গত মে ১০ ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিকে সম্মেলনের নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। খুব শিগগিরই সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করে আওয়ামী লীগের দপ্তর সেলে জমা দেয়ার নির্দেশ দেন তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence