নেতাকর্মীদের এড়িয়ে চলছেন ছাত্রলীগের জয়-লেখক

আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য
আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য  © সংগৃহীত

বেশ কিছুদিন ধরেই নেতাকর্মীদের এড়িয়ে চলছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। নিজেদের অনুসারী ছাড়া সংগঠনের অন্য নেতাকর্মীদের ভালো চোখে দেখেন না তারা। সেই সঙ্গে সাংবাদিকদের কলও ধরছেন না তারা। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, সম্মেলনের দাবি ও সমালোচনা এড়াতে এমন কৌশল অবলম্বন করেছেন ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা।

শোভন-রাব্বানী বহিষ্কার হওয়ার পর ছাত্রলীগের দায়িত্ব পান আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। সেসময় তারা প্রোটোকল ছাড়াই বাইকে ঘুরতেন। থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে। বর্তমানে তারা বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে থাকছেন বলে অভিযোগ করেছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।

জানা যায়, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সম্মেলন, জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি, বর্ধিত সভা নিয়ে চাপে আছেন ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব। আধিপত্য ধরে রাখতে তারা হল সম্মেলন, জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটিগুলো ধীর গতিতে করছেন। আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কথাও শুনছেন না তারা। এছাড়া অন্য নেতাদের তোপের মুখে পড়ার ভয়ে কেন্দ্রীয় বর্ধিত সভার আয়োজন করছেন না জয়-লেখক।

আরও পড়ুন- গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়েও প্রকাশ্যে ছাত্রলীগের ৫ নেতা

একাধিক কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে অনেকটা নিষ্ক্রিয় অবস্থায় আছে ছাত্রলীগ। নিয়মিত মধুর ক্যান্টিনে আসেন না কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। অনুসারীদের বাইরে ছাত্রলীগের অন্য নেতাকর্মীদের খোঁজ রাখেন না তারা। এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কমিটির বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলা ইউনিটগুলোর কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও দ্রুত কমিটি দেয়া হচ্ছে না। আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা ডেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সম্মেলন করার নির্দেশ দিলেও সেটি মানছেন না ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতা। পদপ্রত্যাশীরা দ্রুত হল সম্মেলন না হলে জয়-লেখককে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাঞ্চিত করার হুমকিও দিয়ে রেখেন।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস বলেন, হল সম্মেলনের জন্য আমরা সবসময়ই প্রস্তুত। কেন্দ্র থেকে যখন চাইবে তখনই সম্মেলন করা হবে। 

সম্প্রতি রোকেয়া হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফাল্গুনী দাসের মামলায় কেন্দ্রীয় দুই নেতাসহ মোট ৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামিরা- কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও শামসুন নাহার হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়াসমিন শান্তা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের সভাপতি বেনজীর হোসেন নিশি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ জালাল, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সংস্কৃতিবিষয়ক উপ-সম্পাদক শেখ তানসেন এবং সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মো. এনামুল হক। তারা সবাই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের অনুসারি।

এ ঘটনা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তাদের অভিযোগ, ফাল্গুনী দাস সাংগঠনিকভাবে এ ঘটনার বিচার চাইলেও সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের গাফিলতির কারণেই বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা বলেন, সভাপতি প্রতিদিন মধুর ক্যান্টিনে না আসলেও নিয়মিতই ক্যাম্পাসে আসেন। সাধারণ সম্পাদক তো তাও আসেন না। অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকেন তারা। যার কারণে সকালে একটু বেলা করে ঘুম থেকে উঠেন। সে কারণে হয়তো অনেক সময় কল ধরতে পারেন না।

আরও পড়ুন- ৩১ বছর ধরে বন্ধ নির্বাচন, চাকসু এখন ‘বিয়ের ক্লাব’

মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে তড়িঘড়ি করে প্রেস রিলিজের মাধ্যমে কমিটি দেয়াকে ভালো চোখে দেখছেন না অন্যান্যা কেন্দ্রীয় নেতারা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সংগঠনের সহ সভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদ লিখেন, মেয়াদ ফুরিয়ে এলেই তড়িঘড়ি করে সর্বত্র কমিটি দেওয়া শুরু হয়ে যায়। দু'বছরের জায়গায় চার বছর ছিলেন অথচ তখন কোন খেয়াল ছিলো না কেন। তাহলে যাবার বেলায় কেন আর এর পেছনে কারণই বা কি থাকতে পারে? যাদের সাথেই আমার কথা হয়েছে সবাই আমাকে একটি কথাই জোর দিয়ে বলেছেন। তাদের কথা হলো, যত বেশি কমিটি দিবেন ততোই তো নেতাদের পকেট ভারি হওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া এগুলো হলো তাদের শেষ সময়ে এসে কিছু কামিয়ে নেওয়ার ফন্দি ফিকির মাত্র। নইলে সম্মেলন নাই, স্বচ্ছতা নাই, জবাবদিহিতা নাই এভাবে কমিটি করা কেন। রাতের অন্ধকারে, নেতার ড্রোয়িংরুমে বসে। নিশ্চয়ই এটা ডাল মে কুচ কালা হ্যায়। আর যদি টাকই না নিবেন তাহলে মাদকাসক্ত, বয়স নেই, বিবাহিত এবং বিএনপি জামাতের পরিবারের ছেলেদের নেতা বানাবেন কেন।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন বিষয়ে নেতাদের বক্তব্যের দরকার হলেও তাদের কল করে পাওয়া যায় না। মেসেজ করে রাখলেও তারা রিপ্লাই দেন না।

এসব বিষয়ে জানতে গত কয়েকদিন ধরে সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে চেষ্টা করেও পাওয়া যায় নি।


সর্বশেষ সংবাদ