ছাত্রলীগ নেতাদের বিমান বিলাস

ছাত্রলীগ নেতারা
ছাত্রলীগ নেতারা  © টিডিসি ফটো

সাংগঠনিক সফরে গেলে বিমান ব্যবহার করেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। বিমান থেকে নামার পর বিশাল গাড়ি বহরে যান অনুষ্ঠানস্থলে। রাতে থাকেন বিলাসবহুল হোটেলে। অভিযোগ উঠেছে, এসব ম্যানেজ করতে বাধ্য করেন সংশ্লিষ্ট ইউনিটের নেতাকর্মীদের। বিমানে করে যাওয়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেন নেতারাই। এ নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে তৃণমূল ছাত্রলীগে।

গত ৩০ অক্টোবর দেশের বিভিন্ন ইউনিটের দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া হয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের। এরপরই ৮ নভেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ যান দায়িত্ব প্রাপ্ত দুই নেতা ত্রাণ ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সম্পাদক ইমরান জমাদ্দার এবং উপ মানব সম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক সোলায়মান খান সুজন। ফেসবুকে বিমানে চড়ার ছবি দিয়ে ক্যাপশনে লেখেন, ‘সাংগঠনিক সফরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পথে।’ পাঁচদিনের সফর শেষে ঢাকায় ফেরেন বিমানে করেই। যদিও বিমানে যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ইমরান। তিনি বলেন, আমি যখন চাঁপাইনবাবগঞ্জ যাই তখন রাতে বাসেই গিয়েছি। তবে আসার সময় আমার নিজের খরচেই বিমানের টিকিট কেটেছি। কারণ, ঢাকায় আমার গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি প্রোগ্রাম ছিল। সংগঠনের অনেক প্রোগ্রামেরই কাজ আমার করতে হয়।

আরও পড়ুন- ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মন ভালো নেই

১৩ ডিসেম্বর সাংগঠনিক কাজে হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে যান দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আবদুল্লাহ হীল বারী ও উপ ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান। তারাও বিমানে করে যান সেখানে। পরে বিশাল গাড়ি বহরে করে তারা বিশ্ববিদ্যালয়টিতে যান। মেহেদীর পোস্ট করা ছবির নীচে সহ সভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদ মন্তব্য করেন, আমারও তো দায়িত্বে ছিলাম কই কখনো তো বিমানের যাওয়ার কথা চিন্তা করিনি। জবাবে মেহেদী লিখেন, এমন অনেক কিছুই হবে। যা কেউ ভাবেনি আগে। বিমানে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মেহেদী হাসান বলেন, দিনাজপুরের রাজনীতিতে ইকবাল ভাই আর খালেদ ভাইয়ের দুইটা গ্রুপ আছে। ইকবাল ভাইয়ের কাছে আমি বললাম যে হাতে সময় একটু কম। আমার বিসিএস পরীক্ষা ছিল। এজন্য ইকবাল ভাই বললেন যে, ঠিক আছে আমরা দেখতেছি কিভাবে স্বল্প সময়ে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা যায়। তারপর খালিদ ভাইয়ের পক্ষ থেকে বিমানের টিকিটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

আরও পড়ুন- টিএসসির সব দোকান বন্ধ করে দিয়েছে জবি ছাত্রলীগ

সর্বশেষ বিমানে চড়ে সাংগঠনিক সফরে যান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি শওকতুজ্জামান সৈকত ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ চৌধুরী। ১০ জানুয়ারি ইউএসবাংলার বিএস-১০৩ ফ্লাইটে সকাল ১০টায় চট্টগ্রামে যান তারা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রদীপ চৌধুরী বলেন, এই প্রোগ্রামটা হঠাৎ করে কালকে রাতে জানানো হয়েছে। সময় স্বল্পতার কারণে এজন্য বিমানে করে আসতে হয়েছে। ছাত্রলীগের কথা শুনলে আমার আর কোন কিছু ঠিক থাকে না। ছাত্রলীগের প্রোগ্রামে যেতেই হবে। তিনি বলেন, আমরা যারা ছাত্রলীগ করি তারা খুব সাদামাটা জীবন যাপন করি। আমি এখানে আসার আগে দুই জনকে মেডিকেলে ভর্তি করে আসছি।

ছাত্রলীগ নেতাদের এমন বিমান বিলাসে সংগঠনের ভেতরে-বাইরে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। তৃণমূলের নেতারা বলছেন, ইউনিটগুলোতে কমিটি হয় না দীর্ঘদিন ধরে। নেতাকর্মীরা হতাশ থাকে। কর্মীদের নিয়ে চলতে গেলে হিমশিম খেতে হয়। তারপরও দায়িত্ব প্রাপ্তরা বিমান ছাড়া আসতে চান না। চলার জন্য দামি গাড়ি, দামি হোটেলে থাকতে চান। অনেকটা বাধ্য হয়েই ইউনিটের নেতারা সবকিছুর ব্যবস্থা করেন। নেতাকর্মীরা আরও অভিযোগ করেন, সাংগঠনিক সফরে গেলে যেখানে বিমানের সুবিধা আছে সেখানে বিমান ছাড়া যেতে চান না কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকও।

আরও পড়ুন- কে আগে ফুল দেবে, প্রতিমন্ত্রীর সামনেই ছাত্রলীগ নেতার ঘুষি

এক অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগ নেতাদের বিমানে ওঠার সমলোচনা করেছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সেসময় তিনি বলেছিলেন, আমরা যখন ছাত্র রাজনীতি করতাম তখন আমরা মফস্বলের অনুষ্ঠানে যেতাম বাসে-ট্রেনে করে। কিন্তু আজ সেদিন হারিয়ে গেছে। ছাত্রনেতারা এখন মফস্বলে যেতে বিমানের টিকিট চায়। বিমানে যাওয়ার কথা আমরা কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি। ছাত্রনেতাদের মূল্যবোধ জাগ্রত রাখতে হবে।

এসব বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে একাধিকবার কল দিলেও ধরেননি তারা।


সর্বশেষ সংবাদ