ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মন ভালো নেই

ছাত্রলীগের লোগো
ছাত্রলীগের লোগো  © সংগৃহীত

রাত পোহালেই ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ৭৪ বছরে পা দিবে ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনটি। অতীতে জাঁকজমকভাবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হলেও এবার সেই আমেজ নেই। নেতাকর্মীদের মাঝেও নেই উচ্ছ্বাস। কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতাদের গাফিলতিতে এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ নেতাকর্মীদের।

ছাত্রলীগের এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে কোন প্রস্তুতি সভা করেনি সংগঠনটি। কেন্দ্রীয় অন্যান্য নেতাদের সাথে শলা-পরামর্শও করেনি বলে অভিযোগ উঠেছে। তারা বলছেন, কেন্দ্রীয় কমিটির কারো সাথে আলোচনা না করেই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দায়সারা প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে শীর্ষ দুই নেতা। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনে গঠন করা হয়নি কোনো কমিটি। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন নেতাকর্মীরা। ফলে জৌলুস হারিয়েছে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে সামনে রেখে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদেরকে যতটা আনন্দিত থাকার কথা ছিল বর্তমানে তার সম্পূর্ণই বিপরীত অবস্থা বিরাজমান। এর কারণ হচ্ছে ছাত্রলীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক। ওনারা দুজন স্বজনপ্রীতি এবং নিজস্ব বলয়ের মাধ্যমে সংগঠন পরিচালনা করছেন। সংগঠনের সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে তারা আমলেই নিচ্ছেন না। 

আরও পড়ুন- কেন্দ্রের অনিচ্ছায় আটকে আছে হল সম্মেলন

ছাত্রলীগের মোট সাংগঠনিক ইউনিট ১২১টি। এর মধ্যে গত চার বছরে কমিটি হয়েছে মাত্র ২৬টির। বাকি প্রায় সব ইউনিটই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে। নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে এবং প্রটোকল পাওয়ার লোভে কমিটিগুলো দেননি বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এমন অভিযোগ পদ-প্রত্যাশীদের। সংগঠনের এক নম্বর ইউনিট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরও মেয়াদ শেষ হয়েছে দুই বছর আগে। ২০১৬ সালের ১৩ ডিসেম্বর সর্বশেষ হল কমিটি গঠন করে ছাত্রলীগ। কয়েক দফা উদ্যোগ নিয়ে হল সম্মেলন বা কমিটি কোনটাই করতে পারেনি শাখা ছাত্রলীগ। শাখা ছাত্রলীগের নেতারা এর জন্য দায়ী করছেন কেন্দ্রের দুই শীর্ষ নেতাকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হল শাখার একজন পদ প্রত্যাশী বলেন, দীর্ঘদিন থেকে হল রাজনীতি করে আসছি। কিন্তু এখনো আমাদের নামের আগে কোনো পদ জোটেনি। এভাবে আর কতদিন পদহীন থাকবো। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন চলছে কিন্তু মনে কোনো আনন্দ পাচ্ছিনা।

২০১৮ সালের ১১-১২ মে ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের পর সভাপতি হিসেবে রেজোয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে গোলাম রাব্বানীকে দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু নানা বিতর্কে জড়িয়ে পদ হারান তারা। ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্যকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক করা হয়। পরে ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি তাদের পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাদের মেয়াদও শেষ হয়েছে।

আরও পড়ুন- নেতাকর্মীদের এড়িয়ে চলছেন ছাত্রলীগের জয়-লেখক

শুরুতে জয়-লেখক প্রটোকল ছাড়াই চলাফেরা করতেন। থাকতেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে। পরে তারাও শোভন-রাব্বানীর পথে হাঁটেন। হল ছেড়ে উঠেছেন বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে। ব্যবহার করেন দামি গাড়ি।

এদিকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে প্রতিবারই সরগরম থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন। কিন্তু এবার সেই পরিবেশ নেই। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর পোস্টারও করা হয় মাত্র একদিন আগে।

আরও পড়ুন- গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়েও প্রকাশ্যে ছাত্রলীগের ৫ নেতা 

এসব বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সোহান খান বলেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর যে কর্মসূচি গ্রহণ করি তার আগে সাধারণত সাধারণ সভা বা প্রস্তুতি সভার আয়োজন করা হয়ে থাকে। এই সভাগুলোতে সিদ্ধান্ত হয় যে সারা বাংলাদেশের কোন ইউনিট কিভাবে কাজ করবে, কী কী কর্মসূচি থাকবে, কিভাবে মিছিল নিয়ে আসবে, এরকম যাবতীয় দিকনির্দেশনা এই সভা থেকে দেয়া হয়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার হল যে, সম্মেলনের ভয়ে উনারা প্রস্তুতি সভাটাও করেননি এবার।

সার্বিক বিষয়ে জানতে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে বারবার কল করা হলেও তারা রিসিভ করেন নি।


সর্বশেষ সংবাদ