৫৯তম শিক্ষা দিবস

গণমুখী বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার দাবিতে ছাত্র ইউনিয়নের সমাবেশ

৫৯তম শিক্ষা দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সমাবেশ
৫৯তম শিক্ষা দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সমাবেশ  © টিডিসি ফটো

একই ধারার গণমুখী বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার দাবি জানিয়ে ৫৯তম শিক্ষা দিবস উপলক্ষে ছাত্র সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, চট্টগ্রাম জেলা সংসদ। শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকালে চট্টগ্রামের ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল খালেক মিলনায়তনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ছাত্র ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক ইমরান চৌধুরীর সঞ্চালনায় এবং সভাপতি এ্যানি সেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ছাত্র ইউনিয়ন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি গৌরচাদ ঠাকুর অপু, চট্টগ্রাম জেলার সহ-সাধারণ সম্পাদক খালিদ মিরাজ, সাংগঠনিক সম্পাদক টিকলু দে, কোতয়ালী থানার সাধারণ সম্পাদক অয়ন সেন গুপ্ত, পাহাড়তলী থানার সাধারণ সম্পাদক নিশান রায়, শুভ নাথ, সাজ্জাতুর জামান অভি, মো. মোস্তফা প্রমূখ।

সমাবেশে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক রণজিৎ কুমার দে এবং ছাত্র ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলার প্রাক্তন সভাপতি ও চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস, ট্রেড ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলার সহঃ সাধারণ সম্পাদক দিলীপ নাথ। সাংস্কৃতিক ইউনিয়ন, চট্টগ্রাম জেলার জাতীয় সঙ্গীত ও সংগঠন সঙ্গীতের পরিবেশনের মাধ্যমে সমাবেশ শুরু হয়।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘হেফাজত সহ মৌলবাদী সংগঠনের পরামর্শে শিক্ষাকে চুড়ান্তভাবে সাম্প্রদায়িকীকরণ করা হয়েছে যা ৬২’র শিক্ষা আন্দোলনের শহীদের রক্তের সাথে বেইমানির সামিল। বৃটিশ ও পাকিস্তান উপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠই তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য যে শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলো, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ৫০ বছর পরেও সেই ব্যবস্থার কোন পরিবর্তন ঘটেনি। কারণ, আমাদের দেশের ক্ষমতার শীর্ষে যারা অবস্থান করেছে তারা প্রতিনিধিত্ব করেছে সে সময়কার মতো এদেশের ধনিক গোষ্ঠী এবং তাদের তাদের বিদেশী বন্ধু মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের। তারা চায় শুধুমাত্র তাদের সন্তানরাই শিক্ষিত হয়ে উঠুক, তারাই দেশের কর্ণধার হোক। সেই কারণেই শিক্ষাকে গরীব, মেহনতি ও সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের নাগালের বাইরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সমাজ জীবনে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের মধ্যে বৈষম্য বাড়ার সাথে সাথে শিক্ষা ক্ষেত্রেও বৈষম্য বাড়ছে।’

বক্তারা শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘শিক্ষা আজকে এসি ক্লাস রুমে লাখ টাকায় বিকিকিনি হচ্ছে। আজকে করোনা পরিস্থিতিতে যেখানে অনেক শিক্ষার্থীর পরিবারে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে, সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বেতন-টিউশন ফি আদায়ের ক্ষেত্রে ন্যূনতা ছাড় দিচ্ছে না। সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ী, সরকারি চাকরিজীবীসহ নানা শ্রেণীর মানুষের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হলেও ‘অলাভজনক’ বিবেচনায় শিক্ষা ও শিক্ষার্থীগণ বিবেচনার বাইরেই থেকে গিয়েছে।’

‘আজকে অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে বৈষম্যের চূড়ান্ত রূপ পরিলক্ষিত হচ্ছে শিক্ষাক্ষেত্রে। ইন্টারনেট ও প্রযুক্তিগত সুবিধার বাইরে থাকা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রান্তিক শিক্ষার্থীরা আজ অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে পারছে না। অনেক পরিবারের যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরায় সেন খানে অনলাইন ক্লাস যেন বিলাসিতা। অনেকেই পরিবারের হাল ধরতে গিয়ে পড়ালেখাই ছেড়ে দিয়েছেন। বাড়ছে শিক্ষিত বেকারের হার। পদ্মা সেতু-মেট্রো রেলের মত মেগা প্রকল্পের গল্পে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের অনিশ্চিত শিক্ষা জীবনের চিত্র। সর্বোপরি করোনা মহামারির এই পরিস্থিতিতে ‘টাকা যার, শিক্ষা তার’ এই অঘোষিত নীতিই যেন কার্যকর হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য।’

সমাবেশ থেকে ছাত্র নেতৃবৃন্দ ৫ দফা দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো- ১. সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের টিকা প্রদান করে পর্যায়ক্রমে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দাও, ২. ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান কর, ৩. দ্রুত ২০২০-২১ সেশনের স্নাতক ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ এবং সেশনজট রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ কর, ৪. করোনাকালে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেতন ফি মওকুফ কর, ৫. সকল শিক্ষকদের জাতীয়করণ কর।

সমাবেশ থেকে সিআরবিতে সকল বাণিজ্যিক স্থাপনা বাতিলের দাবি জানিয়ে একটি মিছিল সিআরবি এলাকা প্রদক্ষিণ করে।
সমাবেশে গণসঙ্গীত ও কবিতা পরিবেশন করেন উদীচী , প্রমা, মিলেনিয়ার্স, কলরব।


সর্বশেষ সংবাদ