জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
শাখা গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আহ্বায়কসহ ৩ জনের ওপর জবি ছাত্রদলের হামলা
- জবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ০৫:৫৯ PM , আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৫, ০১:৩৯ AM
ছাত্রলীগ পুনর্বাসন করার অভিযোগ তুলে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখার আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদসহ তিনজনকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে জবি শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধে। ঘটনাস্থলে জবি ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন তার পক্ষের লোকজন নিয়ে উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) জবির শহীদ সাজিদ ভবনের সামনে দুপুরের দিকে এ ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন বাগছাস জবি শাখার আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদ ও মুখপাত্র ফেরদৌস শেখ। আরেকজন শিক্ষার্থী ফারুক। তবে ছাত্রলীগের সঙ্গে ফারুকের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে অভিযোগ করছেন শাখা ছাত্রদলের নেতারা।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসানের নেতৃত্বে সংঘটিত হয় এ হামলার ঘটনা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের শাখা সদস্যসচিব শামসুল আরেফিনসহ কয়েকজন নেতা।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জবির বাগছাস শাখার আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদ এক পোস্টে লেখেন, ‘ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদ আমাকে লাথি মেরেছে, সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন তার গ্রুপ নিয়ে জুলাইয়ে বিপ্লবে আহত ফেরদৌস, ফারুকের গায়ে হাত তুলেছে। আমাকে ছাত্রলীগ বলে ট্যাগ দিয়েছে। আমি এর বিচার চাই। ফ্যাসিস্ট বিরোধী লড়াইয়ে ছাত্রদলের হয়ে প্রত্যেকটি হরতাল অবোধ অংশ নিয়েছি।’
আরও পড়ুন: এসএসসির ফলাফলে নাটকীয় পতন, নেপথ্যে ‘রাজনীতি’
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী বাগছাস জবি শাখার মুখপাত্র ফেরদৌস শেখ বলেন, ‘আমি একজন জুলাই যোদ্ধা। আমি জুলাই অভ্যুত্থানে গুলির আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছি৷ আমি ৫ তারিখ পর্যন্ত এই ছাত্রদলের সঙ্গে ওতপ্রতভাবে জড়িত ছিলাম। ঢাকায় এমন কোনো প্রোগ্রাম নেই, যেটাতে আমি উপস্থিত হইনি। অথচ আজ ছাত্রদল আমাদের ওপর ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে হামলা করেছে। তারা আমি, আমার সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ কয়েকজন শিক্ষকের ওপরও হামলা চালায়। আমার প্রশ্ন, জুলাই অভ্যুত্থান কি আমরা এ জন্য ঘটিয়েছিলাম, যে ছাত্রলীগের মতো আরেটি গোষ্ঠী ট্যাগ দিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালাতে থাকবে?।’
এ বিষয়ে ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ), জবি শাখার সদস্য মো. তাওহীদুল ইসলাম এক ফেসবুক পোস্টে লিখেন, ‘ছাত্রদলের যেসব কর্মীর ছাত্রত্বই নাই তারা আজ ক্যাম্পাসে রানিং শিক্ষার্থী, যারা জুলাই আন্দোলনে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছে, গুলি খেয়েছে, তাদের ওপর আক্রমণ চালায়। শিক্ষকরা থামাতে গেলে শিক্ষকদের কলার ধরে গালি দেয়, শিক্ষকদের গায়ে হাত দেয়। এ যেন ছাত্রলীগের পুনরাবৃত্তি।’
মারধরের বিষয়ে জবি শাখা ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি ইভান তাহসিব ফেসবুকে নিজ আইডিতে লিখেন, ‘ক্যাম্পাসে ২০২০-২১ সেশনের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী ফারুক জুলাইয়ের গণআন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা আজ ফারুককে ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে আক্রমণ করছে। এমনকি যারা ফারুককে বাঁচাতে এগিয়ে আসছে তাদের ওপরও হামলে পড়ছে, শিক্ষকদের সাথে উগ্র ব্যবহার করছে। এখনো অনেক শিক্ষার্থী ছাত্রদলের আক্রমণের পর সাজিদ ভবনে আটকা পড়ে আছে।’
আরও পড়ুন: ঋতুপর্ণা চাকমা: এক ফুটবলার, এক সংগ্রামী ঢাবি শিক্ষার্থী
তিনি আরও লিখেন, ‘ফারুকের যদি গুরুতর কোনো অপরাধ থেকেও থাকে তার বিচারের দায়িত্ব প্রশাসনের। ছাত্রদলের এই আচরণ ক্যাম্পাসের সকল শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার জন্যে হুমকি। প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’
এ বিষয়ে জুলাই অভ্যুত্থানে সম্মুখ সারির আন্দোলনকারী ও গুম হওয়া জবি শিক্ষার্থী নূর নবী এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘ছাত্রলীগ ধরো, আমিও তোমার সাথে আছি। কিন্তু যদি আন্দোলনকারী কাউকে শুধু ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে মব প্রতিষ্ঠা করতে চাও, তাহলে ভুলে যেও না ওদের কাহিনি, যারা এক সময় ছাত্রদল ও শিবির ট্যাগ দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর যা ইচ্ছা তাই করত।’
এ বিষয়ে জবি শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘তারা (বাগছাস নেতৃবৃন্দ) ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে। রফিক বিন সাদেক রেসাদ নামের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী যে ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিল এবং অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের বিরোধিতা করেছে, আজ বাগছাস নেতৃবৃন্দ তাকে শেল্টার দেওয়ার চেষ্টা করেছে। আমরা হামলা করিনি শুধু তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছি।’