আবু বকর হত্যাকাণ্ড
শেখ হাসিনাসহ ঢাবির তৎকালীন ভিসিকে বিচারের আওতায় আনার দাবি
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:০৭ PM , আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:১৩ PM

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী আবু বকর ছিদ্দিকের হত্যাকাণ্ডে ‘সুপ্রিম রেসপনসিবল অথরিটি হিসেবে’ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, আইজিপি নুর মোহাম্মদ, ডিএমপি কমিশনার এ কে এম শহিদুল হক, রমনা জোনের ডিসিকে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানিয়েছে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ।
এ ছাড়া ঢাবির তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ও প্রক্টর ড. কে এম সাইফুল ইসলাম ‘আবাসিক হলে পুলিশ প্রবেশ করিয়ে শহিদ আবু বকর সিদ্দিককে হত্যা ও অন্য ছাত্রদের নির্যাতনের পরিস্থিতি তৈরি করায়’ তাদেরও শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে ছাত্রসংগঠনটি।
আজ মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি উত্থাপন করেন পরিষদের নেতারা।
আরও পড়ুন: গুচ্ছে থাকছে ২০ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসির গেট ছাড়লেন শিক্ষার্থীরা
লিখিত বক্তব্য পাঠ করে ৯ দফা দাবি উত্থাপন করেন পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ।
বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের ৯ দফা দাবিসমূহ হলো—
১. শহীদ আবু বকর সিদ্দিক হত্যা মামলা রিওপেনিং করতে হবে, তথা শুরু থেকে মামলার আবেদন, অভিযুক্ত আসামি ও সাক্ষী নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
২. মামলায় শাহবাগ থানার তৎকালীন ওসি রেজাউল করিমসহ হামলায় জড়িত সব পুলিশ সদস্যকে আসামি করতে হবে।
৩. শহীদ আবু বকর হত্যার সুপ্রিম রেসপনসিবল অথরিটি হিসেবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, আইজিপি নুর মোহাম্মদ, ডিএমপি কমিশনার এ কে এম শহিদুল হক ও রমনা জোনের ডিসিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
আরও পড়ুন: রাবিতে হিজাব পরে শিক্ষার্থীদের মিছিল, পাঁচ দাবিতে স্মারকলিপি
৪. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ও প্রক্টর ড. কে এম সাইফুল ইসলাম আবাসিক হলে পুলিশ প্রবেশ করিয়ে শহীদ আবু বকর সিদ্দিককে হত্যা ও অন্য ছাত্রদের নির্যাতনের পরিস্থিতি তৈরি করায় তাদেরও শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
৫. ২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাতে সংঘর্ষে লিপ্ত নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদেরসহ বিগত ১৬ বছর নির্যাতন নিপীড়নে জড়িত নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিচারে কমিশন গঠন করতে হবে।
৬. শহীদ আবু বকরকে স্মরণে স্যার এ এফ রহমান হলের সামনে স্মৃতি মিনার তৈরি করতে হবে।
৭. শহীদ আবু বকর সিদ্দিকের পরিবারকে ১০ কোটি টাকা ক্ষতি পূরণ দিতে হবে।
৮. শহীদ আবু বকরের পরিবারের সদস্যদের সরকারি খরচে ভিআইপি মর্যাদায় হজ করাতে হবে।
৯. শহীদ আবু বকরের পরিবারের সদস্যদের আজীবন ফ্রি চিকিৎসা ও গণপরিবহনে চলাচলের বন্দোবস্ত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সাংগঠনিক প্রধান মো. শফিউর রহমান, সদস্যসচিব হাসান মোহাম্মদ আরিফ, সহকারী সদস্য সচিব ডা. মাসুম বিল্লাহ ও সদস্য মামুনুর রশিদ, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের সদস্য সচিব ফজলুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম নূর শাফায়েতুল্লাহ ও সদস্যসচিব মুহিব মুশফিক খান এবং বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক মো. আরিফুল ইসলাম প্রমুখ।
আরও পড়ুন: নিখোঁজ দুই শিক্ষার্থীর সন্ধান চান ইবি শিক্ষার্থীরা
জানা গেছে, ২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে স্যার এফ রহমান হলে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের গোলাগুলিতে মাথায় গুলিবিদ্ধ হন আবু বকর। টানা দুই দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ৩ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন মেধাবী এই ছাত্র। ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত ১০ ছাত্রকে নামমাত্র সাময়িক বহিষ্কার করেই দায় সাড়ে।
আবু বকর ছিদ্দিক হত্যা মামলায় ২০১২ সালের ২৬ নভেম্বর ছাত্রলীগের ১০ নেতাকর্মীকে আসামি করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। শাহবাগ থানার দেওয়া অভিযোগপত্রে আটজনকে আসামি করা হয়েছিল।
এর আগে ২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের তখনকার হল শাখার সভাপতি সাইদুজ্জামান ফারুক ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান মোল্যা গ্রুপের সংঘর্ষের সময় তিনি আহত হন। মৃত্যুর দুই মাস পর ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষার্থী আবু বকরের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের সমাপনী পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। তাতে প্রথম হয়েছিলেন তিনি।
দীর্ঘ ১৪ মাস মামলার কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর ২০১১ সালের ২৯ এপ্রিল মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলার অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এতে ছাত্রলীগের স্যার এ এফ রহমান হল শাখার সভাপতি সাইদুজ্জামান ফারুককে প্রধান আসামি করে ছাত্রলীগের আট নেতাকর্মীর নামে মামলা দায়ের করা হয়।
আরও পড়ুন: তেজগাঁও কলেজ সরকারি করার দাবিতে স্মারকলিপি
মামলায় অভিযুক্ত অন্য আসামিরা হলেন এনামুল হক, মনসুর আহমেদ রনি, আবু জাফর মো. সালাম, মফিদুল ইসলাম খান, রকিব উদ্দিন, মেহেদী হাসান ও তৌহিদুল খান তুষার। আসামিদের সবাই হল ও ক্যাম্পাস ছেড়েছেন।
প্রসঙ্গত, টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার গোলাবাড়ী গ্রামের দিনমজুর রুস্তম আলী ও রাবেয়া খাতুনের সন্তান আবু বকর। তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের পঞ্চম সেমিস্টারে প্রথম স্থান লাভকারী ছাত্র। থাকতেন স্যার এফ রহমান হলের ৪০৪ নম্বর কক্ষে।