অভিযোগের কাঠগড়ায় চার নেতা, ‘ক্যাম্পাসছাড়া’ ছাত্রলীগের ক্যাম্পাসে ফেরা স্বাভাবিক হবে তো?
- শিহাব উদ্দিন
- প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২৪, ০৮:২৯ PM , আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২৪, ০৯:৪১ AM
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পাশাপাশি আগামী দিনে সরকার সমর্থিত এই ছাত্র সংগঠনের রাজনৈতিক কার্যক্রম কীভাবে চলবে— তা নিয়েও তৈরি হয়েছে নানামুখি চ্যালেঞ্জ। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সহিংসতায় জড়ানো এবং পরবর্তীতে শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে বিতাড়নের পর থেকেই এই প্রশ্ন।
সূত্রের তথ্য, কোটা আন্দোলনের শুরুর দিকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ মহল থেকে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে ছাত্রলীগকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হলেও তাতে ব্যর্থ হয়েছে সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। প্রশ্ন উঠেছে তীব্র আন্দোলন চলাকালীন তাদের (ছাত্রলীগ) রাজনৈতিক স্ট্র্যাটেজি নিয়েও। এ নিয়ে দল ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের কাছ থেকে ইতোমধ্যেই তিরস্কার শুনতে হয়েছে শীর্ষ নেতাদের। ক্যাম্পাস নতুনভাবে রাজনীতি করার আগে আত্মসমালোচনার পরামর্শও দিয়েছেন কেউ কেউ। দাবি রয়েছে আন্দোলনকালীন সময়ের ভূমিকা তদন্তেরও। শুধু তাই নয়, কর্মীদের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না দিয়ে হল থেকে বের হয়ে যাওয়ায় সংগঠনের চার নেতা তথা সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন এবং সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত-কে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী।
সরেজমিন কোটা আন্দোলনকারীদের দমনে মাঠে নামা এক সহ-সভাপতি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সংঘর্ষ চলাকালীন অন্তত তিনবার ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতকে কর্মীদের সামনে এগিয়ে দিয়ে পেছন থেকে চলে যেতে দেখেছেন তিনি। এর মধ্যে শহীদুল্লাহ্ হল ও মধুর ক্যান্টিন এলাকার ঘটনা দুটি ছিল চোখে পড়ার মত। আর শেষবার মোটর সাইকেলযোগে চম্পট দিয়েছেন ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। বিষয়টি নিয়ে দলের মধ্যেও সমালোচনা রয়েছে। তবে প্রকাশ্যে কেউ কথা বলছেন না।
এ নিয়ে নাম প্রকাশ না করা শর্তে শীর্ষ পর্যায়ে কয়েক নেতার সঙ্গে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের কথা হয়েছে। তারা বলেন, তীব্র আন্দোলনকালীন বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) ২টা পর্যন্ত তারা শীর্ষ নেতাদের থেকে কোনো নির্দেশনা পাননি। কেউ কেউ উল্টো ফোন করে হল ছাড়ার নির্দেশনা পেলেও তা সব পর্যায়ের নেতাকর্মী পর্যন্ত পৌঁছায় শীর্ষ নের্তৃবন্দ। স্বভাবতই সাধারণ শিক্ষার্থীদের হামলার শিকার হতে হয়েছে অনেককে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারধরের শিকার হয়েছেন স্যার এ এফ রহমান, মাস্টারদা' সূর্যসেন হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল ও বিজয় একাত্তর হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা। বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে বিজয় একাত্তর হলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজসহ অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান এবং হলগুলোতে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশনা না পৌঁছায় হামলা-মারধরের শিকার হয়েছেন অনেক নেতাকর্মী।
প্রশ্ন উঠেছে তীব্র আন্দোলন চলাকালীন ছাত্রলীগের রাজনৈতিক স্ট্র্যাটেজি নিয়ে। ক্যাম্পাস নতুনভাবে রাজনীতি করার আগে আত্মসমালোচনার পরামর্শ দিয়েছেন কেউ কেউ। কর্মীদের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না দিয়ে হল থেকে বের হয়ে যাওয়ায় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাবি সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন এবং সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত-কেও কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী।
সংগঠনের সাবেক ও বর্তমান কয়েক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর যাবৎ ক্যাম্পাসগুলোতে একক আধিপত্যের পর হঠাৎ করে এমন বিতাড়নে সমালোচনার মুখে পড়েছে ক্ষমতাসীন দলের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনটি। এ অবস্থায় ক্যাম্পাসে ফিরতে মরিয়া কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। যদিও তা স্বাভাবিক হবে কিনা- এমন প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বৈধ শিক্ষার্থী হলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলেও অবস্থান করতে পারবেন। ক্যাম্পাস যে কেবল কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের তা কিন্তু নয়; ছাত্র রাজনীতি ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য। তবে সুস্থ রাজনৈতিক চর্চার অভাবে ছাত্ররাজনীতি তার জৌলুস হারিয়েছে। ক্যাম্পাসের দখল কিংবা আধিপত্য বিস্তার এ ধরনের চিন্তাভাবনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাসে প্রবেশের ক্ষেত্রে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করা হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। ক্যাম্পাসে শুধু আধিপত্য বিস্তার করেই নয়; ভালো ব্যবহার, ভালোবাসা দিয়েও শিক্ষার্থীদের মন জয় করা যায় বলেও মনে করেন তিনি।
মিছিলের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন
এদিকে শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ক্যাম্পাসগুলো ছেড়ে যাওয়ার বিষয়টিকে বিতাড়ন হিসেবে দেখছে না সংগঠনটি। ছাত্রলীগ বলছে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের আবেগকে ব্যবহার করে ছাত্রদল-শিবির ক্যাম্পাসে যেন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে; সেজন্য তারা সাময়িকভাবে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদেরকে আমিই নিজেই বের হয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছি।’
ছাত্র রাজনীতি ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য। তবে সুস্থ রাজনৈতিক চর্চার অভাবে ছাত্ররাজনীতি তার জৌলুস হারিয়েছে। ক্যাম্পাসের দখল কিংবা আধিপত্য বিস্তার এ ধরনের চিন্তাভাবনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ক্যাম্পাসে শুধু আধিপত্য বিস্তার করেই নয়; ভালো ব্যবহার, ভালোবাসা দিয়েও শিক্ষার্থীদের মন জয় করা যায়।—অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, ঢাবি শিক্ষক
আর ছাত্রলীগ নেতারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ প্রশাসনের ক্যাম্পাস ও হল ত্যাগের নির্দেশনার পর তারা ক্যাম্পাস ছেড়েছেন। তবে তারা এখন ক্যাম্পাসের আশপাশেই অবস্থান করছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ক্যাম্পাসে ফিরতে হাইকমান্ডের নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছেন তারা। নির্দেশনা পেলে সর্বশক্তি দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করবেন তারা। যদিও ছাত্রলীগের অনেক নেতাই বর্তমান পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাসে প্রবেশকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ মনে করছেন। এ অবস্থায় ‘ক্যাম্পাস ছাড়া ছাত্রলীগ কবে ক্যাম্পাসে ফিরবে’ সেই প্রশ্নও উঠেছে।
দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি নিয়ে কাজ করছেন এমন একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বললে তারাও বর্তমান পরিস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে ছাত্রলীগের ক্যাম্পাসে ফেরা কঠিন বলে মনে করছেন। তাদের মতে, দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। এরপরও ছাত্রলীগকে ক্যাম্পাস ছাড়া করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এতে শিক্ষার্থীদের মনোবল বৃদ্ধি পেয়েছে। সুস্থ ধারায় ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে প্রবেশ না করে বল প্রয়োগের চেষ্টা করলে পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে। অথচ চাইলেই এই সংঘাত এড়ানো যেত বলে অভিমত অনেকের। ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী তার ফেসবুকে লিখেছেন, এত সংঘাত, রক্তপাত, রাষ্ট্রীয় সম্পদ আর জানমালের এই অপূরনীয় ক্ষতি... অথচ... চাইলেই তা এড়ানো যেতো...। রক্তপাত এড়ানোর বিষয়ে রাব্বানীর বক্তব্য, ২০১৮ সালের তিক্ত অভিজ্ঞতা আমলে নিয়ে, বাস্তবতা অনুধাবন করে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের দূরদর্শী ও সুবিবেচনাপ্রসূত একটা যৌক্তিক সংস্কারের প্রস্তাবিত রায়ে..., প্রকৃত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিচয় দিয়ে একদম শুরুতেই শিক্ষার্থীদের দাবীর ন্যায্যতার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে, আলোচনার টেবিলে বসে অপরাজনৈতিক শক্তি তথা বিএনপি-জামাতকে এই নজিরবিহীন অরাজকতা-নাশকতার সুযোগ না দিয়ে..., আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আইনের সঠিক প্রক্রিয়া ও কার্যপ্রণালী জেনে শুরুতেই তাতে সম্পৃক্ত তথা পক্ষভুক্ত হয়ে ন্যায়বিচার না পেলে অতঃপর আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিলে...’।
রাব্বানী লিখেন, ‘অনাগত আগামীতে 'যদি কেউ ন্যায্য কথা বলে, আমরা সংখ্যায় বেশি হলেও, একজন যদিও হয় তার ন্যায্য কথা আমরা মেনে নেব'। বঙ্গবন্ধুর এই অমর উক্তিকে আক্ষরিক অর্থে আমলে নিয়ে উত্থাপিত যেকোনো ন্যায্য চাওয়া ও দাবী রাষ্ট্রযন্ত্র তথা যথাযথ কর্তৃপক্ষ একদম শুরুতেই অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে শুনবে, বুঝবে, অনুধাবন করবে এবং বাস্তবতার নিরিখে তা পূরণের সর্বাত্মক চেষ্টা করবে এটাই প্রত্যাশা। স্ট্যাটাসে বিচারবিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে অরাজকতা-নাশকতা ও হতাহতের ঘটনায় জড়িত সকল দুষ্কৃতকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান তিনি।
যে পরিস্থিতিতে ঢাবি ক্যাম্পাস ছাড়ে ছাত্রলীগ
বিভিন্ন ক্যাম্পাস থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত সোমবার (১৫ জুলাই) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পর থেকেই ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনটির নেতাকর্মীদের ওপর শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তার পরদিনই অর্থাৎ মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকেল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিভিন্ন হলে তারা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেন এবং হল ত্যাগে বাধ্য করেন। এর ধারাবাহিকতায় বুধবার থেকে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও সংগঠনটির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যান শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের তীব্র প্রতিরোধের মুখে একে একে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও হলের নিয়ন্ত্রণ হারাতে থাকে ছাত্রলীগ।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল এবং পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল থেকে ছাত্রলীগের নেতারা পালিয়ে যান। একপর্যায়ে জহুরুল হক হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হন প্রভোস্ট। এরপর একে একে মেয়েদের শামসুন নাহার হল, বঙ্গমাতা হল, কুয়েত মৈত্রী হল ও বেগম সুফিয়া কামাল হলও নিয়ন্ত্রণে নেয় সাধারণ ছাত্রীরা। সেই সঙ্গে নিষিদ্ধ করা হয় হল ছাত্র রাজনীতি। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ছাত্রলীগ সর্বশেষ সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের নিয়ন্ত্রণ হারায়। এ হলের ৩৪৩ ও ৩৪৫ নম্বর কক্ষে ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও তার অনুসারীরা থাকতেন।
ছাত্রলীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, নতুন করে ক্যাম্পাসের ভেতর ছাত্র রাজনীতি শুরু করা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা। তবে নানাভাবে ক্যাম্পাসে নিজেদের অবস্থার জানান দিচ্ছেন। রাজধানীর শাহবাগে দিনভর অবস্থানসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ছাত্রলীগ পরিচয় ছাড়াই ক্যাম্পাসে প্রবেশ করার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন জানিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ মর্যাদার এক নেতা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ক্যাম্পাসে প্রবেশ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। তবে যেহেতু ছাত্রলীগও ছাত্র, তাই ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে শিক্ষার্থীদের আক্রোশের মুখে পড়ার সম্ভাবনা কম। তবে যেহেতু আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায়, কাজেই ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ পেতে খুব একটা বেগ পেতে হবে না বলে ধারণা এ নেতার।
ক্যাম্পাস ছাড়ছেন শিক্ষার্থীরা
এ বিষয়ে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, ছাত্রলীগ ক্যাম্পাস ছেড়ে পালানোর মতো কোনো সংগঠন না। দেশের সকল গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্রলীগ। ছাত্রদল-ছাত্রশিবিরের সাথে সংঘাতে গেলে অনেক সাধারণ শিক্ষার্থীর প্রাণ যেতে পারত। সেজন্য আমরা সংঘাতে যাইনি। ছাত্রদল-শিবির যেন আমাদের ব্যবহার করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য আমরা আগে হল ছেড়েছি।
নতুন চ্যালেঞ্জ প্রশাসন কর্তৃক ‘মেধার ভিত্তিতে সিট’ বরাদ্দ
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের পর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মূলত এরপরই বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের জরুরি এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়, হল খোলার পর মেধার ভিত্তিতে সিট বরাদ্দ করে শিক্ষার্থীদের হলে ওঠানো হবে। শুধু তাই নয়, এ সময় বহিরাগত কাউকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ ও অবস্থান না করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ও জাতীয় রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র এবং এখানে ক্ষমতাসীনদের ছাত্র রাজনীতির মূল হাতিয়ার ‘সিট’। প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের সিটকে পুঁজি এবং গণরুম তৈরি করেই চলে এখানকার ছাত্ররাজনীতি। প্রশাসনের মাধ্যমে সিট বরাদ্দ হলে সেই ধারায় ভাটা পড়বে বলে ধারনা করছেন অনেকে।
সামগ্রিক বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সরকার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিন্ডিকেটের সভা করে আনুষ্ঠানিকভাবে হল ছাড়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দেশের আইন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশনা মেনেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হল ছেড়েছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের ক্যাম্পাসে আমরাই থাকব। শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরাই থাকবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ও হলে প্রবেশ করবে। আমরা আমাদের পরীক্ষার হলে ফিরে আসব, আমরাই হলগুলোতে থাকব। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্রলীগের একাত্মতা ছিল। ছাত্রলীগের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের যে সেতুবন্ধন ছিল, সেটি আগের মতোই থাকবে।