কারও বিপদ দেখলে ছুটে যাওয়া মুগ্ধের জীবন থেমে গেল কোটা আন্দোলনে

মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ
মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ  © সংগৃহীত

কোটা সংস্কার আন্দোলনে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। গত ১৮ জুলাই রাজধানীর উত্তরায় পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান মুগ্ধ। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। ভালো খেলোয়াড়, গায়ক, সংগঠক হিসেবে গত চার বছর ধরে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন ক্যাম্পাসে। গণিতে স্নাতক শেষ করে গত মার্চে ঢাকায় আসেন। এমবিএতে ভর্তি হন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে (বিইউপি)।

মৃত্যুর মাত্র ১৫ মিনিট আগে ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন সড়কে ছোটাছুটি করছেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে হাতে পানি ভর্তি বাক্স ও বিস্কুট নিয়ে ছুটছেন মুগ্ধ। ছাত্রদের ডেকে ডেকে বলছেন, ‘পানি লাগবে কারও, পানি’? ভিডিওতে দেখা গেল, অনেকেই তাঁর কাছ থেকে পানি পান করছেন। কাঁদানে গ্যাসের ঝাঁজালো ধোঁয়ায় বেশ কয়েকবার চোখ মুছতে দেখা গেল মুগ্ধকে।

জানা গেছে, মুগ্ধর গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। জন্ম ১৯৯৮ সালে উত্তরায়। দাফন হয়েছে এখানেই। উত্তরার ইসলামিক এডুকেশন সোসাইটিতে প্রাথমিক এবং উত্তরা হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করেন। ২০১৯ সালে ভর্তি হন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে। লেখাপড়ার পাশাপাশি ফুটবল খেলোয়াড়, গায়ক, গিটারিস্ট ও সংগঠক হিসেবে সুনাম ছিল তাঁর। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান শিক্ষা সমাপনী-২০২৩-এর কনভেনর ছিলেন। ছিলেন স্কাউট গ্রুপের ইউনিট লিডার। শ্রেষ্ঠ সংগঠক হিসেবে বাংলাদেশ স্কাউটস থেকে ‘ন্যাশনাল সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছিলেন।

তিন ভাইয়ের মধ্যে মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ ও মুগ্ধ ছিলেন যমজ। বড় ভাই মীর মাহমুদুর রহমান দীপ্ত বলেন, পরিবারে সবার আদরের ছিল মুগ্ধ। ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করত সে। এমবিএর পাশাপাশি দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষার জন্য আইইএলটিএস করছিল।

মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বলেন, ‘আমাদের তিন ভাইয়ের মধ্যে মায়ের সবচেয়ে বেশি খেয়াল রাখত মুগ্ধ। সব সময় মাকে দেখেশুনে রাখত। ফ্রিল্যান্সিং করে নিজের খরচ চালাত। মা এখনও কাঁদছেন। বাবা চুপচাপ হয়ে গেছেন।’

ওই দিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে মুগ্ধর সঙ্গে থাকা বন্ধু নাইমুর রহমান আশিক বলেন, ‘কারও বিপদ দেখলে সব সময় ছুটে যেতেন মুগ্ধ। উত্তরায় ছাত্রদের ওপর হামলা হচ্ছে শুনে অন্য বন্ধুদের নিয়ে ছুটে যান তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। ওই দিন অনেককেই হাসপাতালে নিয়ে গেছি আমি ও মুগ্ধ। বিকেল ৬টার দিকে ছাত্রদের মাঝে পানি ও বিস্কুট দিয়ে সড়ক ডিভাইডারে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম।

হঠাৎ রাজউক কমার্শিয়ালের সামনে থেকে পুলিশ গুলি করতে করতে এগিয়ে এলে সবার সঙ্গে আমরাও দৌড় দিই। হঠাৎ দেখি গুলি লাগায় সড়কে পড়ে গেছে মুগ্ধ। তাঁর কপালে গুলি লেগে ডান কানের নিচে দিয়ে বেরিয়ে যায়। ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence