শারীরিক প্রতিবন্ধকতা হার মানেনি আরিফের অদম্য ইচ্ছাশক্তির কাছে
- এম এ আরাফাত ভূঞা, ফেনী প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৫৭ PM , আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:০৯ PM
আকাশছোঁয়া স্বপ্ন ও অদম্য ইচ্ছাশক্তির কাছে হার মেনেছে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার মাতুভূঞা ইউনিয়নের মোমারিজপুর গ্রামের ইসমাইল কাজী বাড়ির মৃত মোহাম্মদ ইব্রাহিমের ছেলে কাজী আরিফুর রহমানের (৩১) জীবন এই কথার উদাহরণ।
চার বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট আরিফ স্থানীয় ছিদ্দিক নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। একে একে সব স্তর পেরিয়ে তিনি ২০২০ সালে ফেনী সরকারি কলেজ থেকে এমবিএ সম্পন্ন করেন।
জানা গেছে, জন্মগতভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধী আরিফের উচ্চতা মাত্র তিন ফুট। হাত ও পা বিকলাঙ্গ হওয়ায় ছোট একটি রিকশায় চলাচল করেন। নিজের শারীরিক এই প্রতিবন্ধকতার কারণে তবুও তিনি থেমে থাকেননি। সম্প্রীতি তিনি হিসাববিজ্ঞানে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তবে চাকরির জন্য অনেক চেষ্টার পরেও ব্যর্থ হয়ে নিজের উদ্যোগে একটি কম্পিউটার ট্রেনিং ও কোচিং সেন্টার চালু করেছেন।
নিজের উদ্যোগ প্রসঙ্গে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে আরিফ বলেন, চাকরির জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। সবার কাছ থেকে শুধু অবহেলা পেয়েছি। তাই বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে শেষ সম্বল জমিটুকু বিক্রি করে কম্পিউটার ট্রেনিং ও কোচিং সেন্টার খুলেছি। তবে সরকার যদি আমাকে একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে আমার এই যাত্রা আরও সহজ হবে।
আরও পড়ুন: ‘সবই আছে, শুধু তুই নেই রে বন্ধু!’
আরিফের প্রথম বিদ্যাপীঠ ছিদ্দিক নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চন্দন কুমার ভৌমিক। তিনি বলেন, আরিফ প্রতিবন্ধী হলেও তার অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও কঠোর পরিশ্রম তাকে শিক্ষার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে সাহায্য করেছে।
চন্দন কুমার ভৌমিক, আরিফের শিক্ষা জীবনের প্রথম পথচলা শুরু হয়েছিল এই বিদ্যালয়ে। ছোটবেলা থেকেই সে ছিল অত্যন্ত মনোযোগী এবং অধ্যবসায়ী। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও সে কখনও হাল ছেড়ে দেয়নি। আরিফ যেমন প্রাথমিক স্তরে সাফল্য অর্জন করেছে, তেমনই উচ্চশিক্ষায়ও নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছে।
তিনি আরও বলেন, একজন শিক্ষার্থীর জীবনে ইচ্ছাশক্তি এবং কঠোর পরিশ্রম কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ আরিফ। সমাজের উচিত তার মতো প্রতিভাবান তরুণদের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা।
আরিফের এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আবু তাহের বলেন, আরিফ আমাদের গ্রামের একজন সংগ্রামী পুরুষ। শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও জীবনযুদ্ধে তিনি কখনো পিছু হটেননি। প্রথম দিকে, সে বাড়ি বাড়ি টিউশনি করে নিজের পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। আজ তিনি নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
আরেক বাসিন্দা খুরশিদ আলম বাপ্পি বলেন, ছোট থেকে আরিফ ভাইকে দেখেছি, যিনি তার অদম্য ইচ্ছাশক্তি দিয়ে নিজেকে সমাজের মূল ধারায় টিকিয়ে রেখেছেন। এটি সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক। সমাজে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মূল ধারায় সম্পৃক্ত করতে এবং তাদের নেতৃত্ব গ্রহণের উপযোগী করে গড়ে তুলতে যে-সব প্রতিষ্ঠান কাজ করে, তাদের কাছে আমার আবেদন আরিফ ভাইয়ের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়।
দাগনভুঞা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আরিফের যোগ্যতা অনুযায়ী উপজেলা বা জেলা পর্যায়ে কাজ দেয়ার সুযোগ থাকলে তাকে বিবেচনা করা হবে। পাশাপাশি সমাজসেবা অধিদপ্তরের কোনো সহায়তা প্রয়োজন হলে তা নিশ্চিত করতে আমরা সুপারিশ করব।