প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ১১ বছর যাবৎ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ
- নেত্রকোনা প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২৩, ০৯:৪৩ PM , আপডেট: ০৪ জুন ২০২৩, ১০:৪৯ PM
নেত্রকোনার এক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ১১ বছর ধরে বিদ্যালয়ের অর্থ নয়-ছয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রধান শিক্ষক মো. আক্কাছ উদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রতিবছর অভিযোগ করা হলেও তদন্তের নামে তা ধামাচাপা পড়ে যায়। এ বছরও বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি হয়েছে। কিন্তু এখনও তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি। মো. আক্কাছ উদ্দিন নেত্রকোনার মদন উপজেলার মদন শহীদ স্বরণীকা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন।
হাওরাঞ্চল মদন উপজেলার নারী শিক্ষার একমাত্র বিদ্যালয়ল এটি। তার বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ নিয়ে নয়-ছয়ের বিষয়টি উল্লেখ করে একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ সারওয়ার জাহান গত ৫ মাস আগে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত একটি অভিযোগ দেন। জেলা প্রশাসক অভিযোগটি আমলে নিয়ে মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দেন।
একই সূত্রে গত ৬ এপ্রিল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল বারীকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি তদন্ত কমিটি। প্রতি বছরের মতো এবারও কি তদন্তের নামে অদৃশ্য কারণে ধামাচাপা পড়ে যাবে প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম, দুর্নীতি? এমন প্রশ্ন জনমনে।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, মো. আক্কাছ উদ্দিন ২০১১ সালে মদন শহীদ স্মরণীকা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এর আগে তিনি উপজেলার বাললী-বাঘমারা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সে সময়েও বিদ্যালয়ের অর্থ নিয়ে নয়-ছয়সহ নানা অনিয়মের কারণে স্থানীয়দের চাপে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। পরে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে ২০১১ সালে মদন শহীদ স্মরণীকা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন আক্কাছ উদ্দিন।
১১ বছরে মাত্র দুই বার নিজের পছন্দ লোকজন দিয়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করেন আক্কাছ উদ্দিন। যোগদানের পর থেকেই বিদ্যালয়ের অর্থ নিয়ে নয়-ছয় করার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। তারই প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের পরিদর্শক বিদ্যালয়ের আয় ব্যয়ের তদন্তে আসেন। অনিয়ম প্রমাণিত হলেও প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে কোন রকম ব্যবস্থা নেয়নি শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের পরিদর্শক।
পরে বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাতের বিষয় উল্লেখ করে ২০১৮ সালে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তোতা মিয়াসহ অভিভাবক সদস্যরা বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সেই সময়ে তদন্ত কমিটি অর্থ নয়-ছয় করার প্রমাণ পাওয়ায় বিভাগীয় অডিট ও মনিটরিং করার সুপারিশ জানান। কিন্তু অদৃশ্য কারণে তা ধামাচাপা পড়ে যায়।
এসকল দুর্নীতি নিয়ে এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আক্কাছ উদ্দিনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করলে বিষয়টি সামনে আসে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে বিদ্যালয়ে তদন্ত আসেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শক। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরির্দশককে ঘুষ দেওয়ার হিসাব দেখিয়ে বিদ্যালয়ের দুই লক্ষ টাকা আত্মসাত করেন প্রধান শিক্ষক আক্কাছ উদ্দিন। ছাড়া বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের জন্য পুরাতন ভবনটি ১ লক্ষ ১৩ হাজার টাকায় নিলামে বিক্রি করা হয়।
সেই টাকা পূবালী ব্যাংক মদন শাখায় বিদ্যালয়ের একাউন্টে জামা দেওয়ার জন্য রেজুলেশন করেন বিদ্যালয় কমিটি। ব্যাংকের দেওয়া তথ্যমতে সেখান থেকে ১৩ হাজার আত্মসাত করেছেন তিনি। আবার জমা দেওয়া টাকা থেকে ভুয়া স্বাক্ষরে ব্যাংক থেকে ৩০ হাজার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করেন প্রধান শিক্ষক আক্কাছ উদ্দিন। এর সাথে বিদ্যালয়ের ক্রয়কৃত আসবাবপত্র নিজ বাড়িতে নিয়ে গেছেন বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে।
অভিযোগকারী শিক্ষক মোহাম্মদ সারোয়ার জাহান বলেন, প্রধান শিক্ষক আক্কাছ উদ্দিন তার নিজ ক্ষমতা বলে বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাতসহ নানা অনিয়ম করে যাচ্ছেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ক্ষুন্ন হওয়ার ফলে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় ছেড়ে অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে। প্রধান শিক্ষকের অর্থ কেলেঙ্কারী বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।
বিদ্যালয়ের অর্থ নিয়ে নয়-ছয় ও অনিয়ম দূর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে মদন শহীদ স্মরণীকা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আক্কাছ উদ্দিন বলেন, আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগ সম্পর্কে কিছু বলতে চাই না। অভিযোগটি তদন্ত করার জন্য কমিটি হয়েছে। যারা তদন্ত করছে তারাই বলবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান মদন উপজেলা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফিকুল বারী বলেন, প্রধান শিক্ষক আক্কাছ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগটি তদন্ত করা হচ্ছে। প্রধান শিক্ষক সময় চাওয়ায় তদন্তের স্বার্থে তাকে সময় দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহ আলম মিয়া বলেন, আমি মদন উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি। প্রধান শিক্ষকের অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কমিটি হয়েছে বিষয়টি এখন অবহিত হয়েছি। প্রতিবেদন পেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।