তবে কি এবার জিপিএ-৫ কমছে?

শিক্ষার্থী
শিক্ষার্থী  © ফাইল ছবি

চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমতে পারে বলে আভাস মিলেছে। পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রের মান, উত্তরপত্র মূল্যায়নে কড়াকড়ি এ প্রবণতার মূল কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

একাধিক শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগের তুলনায় এ বছর খাতা মূল্যায়নে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কেননা এবার পরীক্ষকদের খাতা মূল্যায়নে ‘সহানুভূতির’ নম্বর দেওয়ায় নিষেধ করা হয়েছিল। কোনো প্রশ্নের উত্তর সঠিক না হলে তাতে নম্বর না দেওয়ারও নির্দেশনা ছিল। যার ফলে সামগ্রিক ফলেই এর প্রভাব পড়েছে। 

জানা গেছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পাসের হার ও জিপিএ-৫ বেশি দেখানোর জন্য পরীক্ষকদের নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হত। শিক্ষার্থী খাতায় যাই লিখুক না কেন পরীক্ষকদের নম্বর দেওয়ায় বাধ্য করা হত। এমনকি কেউ যদি পরীক্ষায় ২০ নম্বর পেতেন তাহলে তাকে পাস করিয়ে দেওয়া এবং যে ৭০ পেলে জিপিএ-৫ দেওয়ার অলিখিত নিয়ম ছিল। এর মূল কারণ ছিল পাসের সংখ্যা এবং জিপিএ-৫ বেশি দেখানো। যেন অভিভাবকদের মন জয় করা যায়।

একাধিক পরীক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষা বোর্ডগুলো পরীক্ষকদের কাছে খাতা বুঝিয়ে দেওয়ার পর প্রধান পরীক্ষকরা তাদের আরেক দফা উদারভাবে খাতা মূল্যায়নের জন্য চাপ দিতেন। শিক্ষার্থীরা ফেল করলে পরীক্ষকদের শাস্তি পেতে হবে বলেও হুমকি দেওয়া হতো। ফলে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের খাতা গুরুত্ব দিয়ে মূল্যায়ন করতেন না। প্রাপ্যতার অতিরিক্ত নম্বর খাতায় দিয়ে দিতেন। আব্দুল ওয়াহাব নামে এক শিক্ষক বলেন, নম্বর বাড়িয়ে দেওয়াই যেন রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছিল বিগত সরকারের সময়ে। এ বছর সেটা থেকে বেরিয়ে এসে খাতা দেখেছেন তারা; যেটা শুধু জিপিএ নয়, সামগ্রিক ফলেও প্রভাব ফেলতে পারে।

পরীক্ষকরা জানান, পাবলিক পরীক্ষায় নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো শিক্ষার্থী ২০ নম্বরের বেশি পেলে তাকে পাস করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। ৩০-এর বেশি পেলে ৪০ বানিয়ে ‘সি’ গ্রেড, ৪০-এর বেশি পেলে ৫০ বানিয়ে ‘বি’ গ্রেড, ৫০-এর বেশি পেলে তা ৬০ বানিয়ে ‘এ মাইনাস’, ৬০-এর বেশি পেলে তাকে ৭০ বানিয়ে ‘এ’ গ্রেড, এবং ৭০-এর বেশি নম্বর পেলে সব সময় চেষ্টা থাকে তাকে জিপিএ ৫, অর্থাৎ ৮০ নম্বর দেওয়ার। তবে এবার এ অলিখিত নিয়ম বাস্তবায়ন করা হয়নি। 

জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা সমন্বয় বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির আহবায়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার বলেন, খাতা মূল্যায়নে আমরা উদার বা কঠোর নই, বরং বাস্তবতার ভিত্তিতে সঠিক মূল্যায়নের ওপর জোর দিচ্ছি। বেশি জিপিএ-৫ নয়, বরং ভালো মানের শিক্ষার্থী তুলে আনা আমাদের লক্ষ্য।

শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি আর আবরার বলেছেন, ‘ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে রেজাল্ট প্রকাশের কারণে অতীতে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রকৃত মূল্যায়ন না হওয়ায় তাদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে। পরীক্ষায় পাশের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি জিপিএ-৫ এর সংখ্যাও বেশি পরিমাণে দেখানো হয়েছে। আমরা এবার জিপিএ-৫ নয়,  প্রকৃত মেধার মূল্যায়ন দেখতে যাচ্ছি।’

যেভাবে দেখা যাবে এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষার ফল
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হবে দুপুর ২টায়। আর ফল জানা যাবে অনলাইন ও এসএমএস—উভয় মাধ্যমেই। এসএসসি পরীক্ষার্থীরা www.educationboardresults.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে নিজের ফল দেখতে পারবে। মোবাইল থেকে ফল জানতে মেসেজ অপশনে গিয়ে লিখতে হবে — SSC [বোর্ডের প্রথম তিন অক্ষর] [রোল নম্বর] 2025—এবং পাঠাতে হবে ১৬২২২ নম্বরে (যেমন : SSC Dha 123456 2025)।

দাখিল পরীক্ষার্থীরা www.bmeb.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে ‘অনলাইন সেবা-১’ কর্নার থেকে ‘দাখিল পরীক্ষা ২০২৫’ অপশন সিলেক্ট করে জেলা ও কেন্দ্রভিত্তিক ফল দেখতে পারবে। এছাড়া www.educationboardresults.gov.bd-এ গিয়েও রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে ব্যক্তিগত ফল জানা যাবে। মোবাইল থেকে ফল পেতে লিখতে হবে — Dakhil MAD [রোল নম্বর] 2025—এবং তা পাঠাতে হবে ১৬২২২ নম্বরে (যেমন : Dakhil MAD 123456 2025)।

ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন শুরু কাল
চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল আজ বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দুপুর ২টায় প্রকাশ করা হবে। ফলে সন্তুষ্ট না হওয়া শিক্ষার্থীরা আগামীকাল শুক্রবার থেকে পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করতে পারবেন। আবেদন চলবে ১৭ জুলাই পর্যন্ত। আবেদনের পদ্ধতি শিক্ষাবোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট ও টেলিটকের মাধ্যমে জানা যাবে। 

ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন যেভাবে
কেবল টেলিটকের মাধ্যমে ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করতে পারবেন পরীক্ষার্থীরা। এর জন্য মোবাইলের ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে RSC লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে, স্পেস দিয়ে যে বিষয়ের ফল পুনর্নিরীক্ষণ করতে চান তার বিষয় কোড লিখতে হবে। যদি একাধিক বিষয়ের ফল পুনঃনিরীক্ষা করতে চান সেক্ষেত্রে কমা দিয়ে বিষয়কোড লিখে তা ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। প্রতি পত্রের জন্য আবেদন ফি হবে ১৫০ টাকা।


সর্বশেষ সংবাদ