তাহাজ্জুদ নামাজের সময়-নিয়ত-সুরা নিয়ে ৫ প্রশ্ন: শায়খ আহমদুল্লাহ’র উত্তর
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৫৩ AM
একজন মুসলমানের দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা ফরজ। আর এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের উপর ফরজ করেছেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার আগে মহানবীর (সা.) ওপর তাহাজ্জুদ নামাজ আবশ্যক ছিল। তিনি জীবনে কখনও তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া থেকে বিরত হননি। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ নামাজ হলো তাহাজ্জুদের নামাজ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ কায়েম করুন, এটা আপনার এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়, আপনার প্রতিপালক আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে (সূরা বনী ইসরাইল: ১৭)। এই তাহাজ্জুদের নামাজ কিভাবে, কখন পড়তে হয় তা নিয়ে আমাদের অনেকের প্রশ্ন রয়েছে। তাহাজ্জুদ বিষয়ে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন, ইসলামিক ব্যক্তিত্ব শায়খ আহমাদুল্লাহ।
তাহাজ্জুদের নিয়ত
তাহাজ্জুদের নামাজের নিয়ত কি নফলের নিয়তে করতে হবে নাকি সুন্নতের নিয়তে?
উত্তর হলো যে কোনো নিয়তে সালাত আদায় করলে হয়ে যাবে। রাসূল (সা:) কখনো তাহাজ্জুদ ছাড়তেন না, নিয়মিত আদায় করতেন এজন্য এটিকে সুন্নত নামাজ বলা যেতে পারে। ফরজ সালাতের অতিরিক্ত যত সালাত আছে সবগুলোকে সুন্নত বলা যায়। আর নফল বলা হয় সুন্নতেরও বাইরে মানুষ একান্ত নিজের ইচ্ছে যেটা আদায় করে তাকে। সুতরাং সেই বিবেচনায় তাহাজ্জুদকে সুন্নত নামাজও বলা যায়। আবার ফরজ নামাজের বাইরে এটাকে নফলও বলা হয়ে থাকে তবে, সুন্নত বলা অধিকতর উত্তম।
আরও পড়ুন: ২০২৬ সালের ঈদুল ফিতরের সম্ভাব্য তারিখ জানা গেল
নিয়ত মানে সংকল্প বা মনের ইচ্ছা। আপনি যে নামাজেই পড়েন না কেন সে নামাজের ইচ্ছা করাই সে নামাজের নিয়ত!
তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত পড়তে হয়?
তাহাজ্জুদের নামাজ অন্যান্য নামাজের মতোই। এর বিশেষ কোনো নিয়ম নেই। তবে, এক সাহাবী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এমন সময় আসলেন যখন তিনি খুতবা দিচ্ছিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, রাতের সালাত কীভাবে আদায় করতে হয়? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দু'রাকা'আত দু'রাকা'আত করে আদায় করবে। (সহীহ বুখারী: ৪৭৩)।
সুতরাং আমরা দু'রাকা'আত করে আদায় করবো৷ তবে, যত লম্বা সূরা পড়া যায়, ধীরে পড়া যায় ততই উত্তম। নির্দিষ্ট কোনো সূরা বা নিয়ম নেই। তবে, আম্মাজান আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসে এবং অন্যান্য সময় এগার রাকা'আতের অধিক সালাত আদায় করতেন না। তিনি চার রাকা'আত সালাত আদায় করতেন। তুমি সেই সালাতের সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্য সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করো না। তারপর তিনি তিন রাকা'আত (বিত্ব) সালাত আদায় করতেন। (সহীহ বুখারী: ১১৪৭)। আপনারা লম্বা সময় নিয়ে তাহাজ্জুদ পড়ার চেষ্টা করবেন। রাসূল (সা:) ৮ রাকাত পর্যন্ত পড়েছেন বলে আমরা জানতে পারি।
এশার পর তাহাজ্জুদ পড়া যাবে কি?
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইশার পর দুই বা ততোধিক রাকাত নামাজ পড়ে নেয়, সে তাহাজ্জুদের ফজিলত লাভ করবে।’ এশার সালাতের পর থেকে ফজরের আগ মুহুর্ত যে নামাজ পড়া হয় সেটিকেই তাহাজ্জুদ বলা হয়। এশার নামাজ পরে কেউ যদি দু'রা'আত, চার রাকা'আত এভাবে নামাজ আদায় করে সেটিও রাতে দাঁড়িয়ে সালাত আদায়ের কাতারে পড়বে। এটি তাহাজ্জুদ দের ফজিলত পাওয়া যাবে তবে, তাহাজ্জুদ বাস্তবায়িত হবে ভোর রাতে, রাতের শেষ প্রহরে কিংবা একটু ঘুমিয়ে উঠে আদায় করলে।
তাহাজ্জুদে কোন সূরা পড়তে হয়?
তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য আলাদা করে কোনো সূরা নেই। যেকোনো সূরা দিয়েই তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা যায়। তবে তাহাজ্জুদ নামাজ দীর্ঘ সময় ধরে পড়া উত্তম। যদি দীর্ঘ সূরা মুখস্থ না থাকে তবে ছোট সূরা কয়েকবার করেও পড়া যায়।
তাহাজ্জুদ সালাতের ফজিলত
আল্লাহর নৈকট্যলাভ ও দোয়া কবুলের শ্রেষ্ঠ সময় রাতের শেষ প্রহর। শায়খ আহমাদুল্লাহর মতে, তাহাজ্জুদ নামাজের অনেক ফজিলত রয়েছে। এর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়, বান্দা ও আল্লাহর মধ্যে সম্পর্ক গভীর হয়, শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এবং রাতের শেষ প্রহরে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার সুযোগ তৈরি হয়। তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব হয়। এই নামাজ বান্দাকে আল্লাহর সবচেয়ে কাছে নিয়ে যায়। রাতের শেষ ভাগে আল্লাহ বান্দাদের ডাক শোনেন এবং তাদের ডাকে সাড়া দেন। রাতের শেষ প্রহরে আল্লাহ বান্দাদের তাঁর কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ দেন, যা তাহাজ্জুদের মাধ্যমে পূরণ করা যায়। এছাড়া মানুষকে শয়তানের কুমন্ত্রণা ও প্রভাব থেকে রক্ষা করে।
তোমরা রাতের সালাত আদায় কর। কেননা এটা তোমাদের পূর্ববর্তী যুগের নেক লোকদের অভ্যাস, তোমাদের পালনকর্তার নৈকট্য দানকারী, পাপ সমূহ মোচনকারী এবং গুনাহর কাজ থেকে বাধা দানকারী। (তিরমিযী ৩৬৪৯)।