ইবির নতুন উপাচার্যের কাছে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা
- রেদওয়ান রাকিব, ইবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০২০, ০১:৩৫ PM , আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২০, ০৫:৩৫ PM
দীর্ঘ একমাস বিশ্ববিদ্যায়ের সর্বোচ্চ পদটি শূন্য থাকার পর গত ২৯ সেপ্টেম্বর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্য নিয়োগ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের অনুমোদনক্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত) ড. শেখ আব্দুস সালামকে আগামী চার বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
গত ৪ অক্টোবর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দায়িত্বগ্রহণ করেছেন। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবক হলেন উপাচার্য। পরিবারের অবর্তমানে শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় অভিবাবক ও আশ্রয়স্থল হলেন তিনি। আর অভিভাবকের কাছে নিজেদের কিছু প্রত্যাশা থাকে। এ মতামত জানতে ইবি’র বিভিন্ন বিভাগের ছয় জন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলেছে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি। মতামতে শিক্ষার্থীদের চাওয়া পাওয়ার সাথে সাথে আগামীর দক্ষ জনবল তৈরির লক্ষ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের করণীয় ও আগামীর সম্ভাবনার দিক তুলে ধরেছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ফারজানা ইয়াসমিন মিম বলেন, ‘সকল প্রকার দূর্নীতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা কঠোর হাতে দমন করে একটি গনতান্ত্রিক নিরপেক্ষ ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩তম উপাচার্য স্যারের কাছে। আর সেই সঙ্গে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে আন্তর্জাতিকীকরণের লক্ষ্যে ক্যাম্পাসের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমকে অব্যাহত রেখে সেশনজটমুক্ত, শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ এবং সুস্থ সংস্কৃতির প্রানকেন্দ্র বিনির্মাণে উপাচার্য মহোদয়ের সুদৃষ্টি কামনা করছি।’
‘ল’ অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী নুসরাত মাহাজাবিন বলেন, ‘একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান অভিভাবক উপাচার্য। পিতা-মাতার অবর্তমানে সকল শিক্ষার্থীর আশ্রয়স্থল তিনি। তার কাছে চাওয়া, তিনি যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরাপদ রেখে আন্তর্জাতিক মানের দক্ষ কারিগর হিসেবে গড়ে তোলার পথ সুগম করে দেন। সেজন্য গবেষণাক্ষেত্রে প্রসারের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক ই-মেইলসহ আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে পড়াশোনার পরিবেশ আধুনিককরণে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি।’
গণিত বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী রাফসান বুলবুল বলেন, ‘শিক্ষা, সংস্কৃতি, খেলাধুলার অনন্য এক সংমিশ্রণ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। সাংবাদিকতাই এ গুণগুলোকে মেলে ধরতে প্রধান ভূমিকা পালন করে। স্যারের মেধা-মনন এবং সৃজনশীলতার সর্বোত্তম ব্যাবহার পাবে শিক্ষার্থীরা। তবে সবকিছুর ঊর্ধ্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করছে সেশনজটের থাবা। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সেশনজটের ভয়াল থাবা থেকে মুক্ত করতে পারলে বিশ্ববিদ্যালয় তার অভ্যন্তড়ীণ এবং বাহ্যিক সৌন্দর্য বজায় রাখবে।’
ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সোহেল রানা বলেন, ‘দায়িত্বের পালাবদলে বেড়েছে আমাদের প্রত্যাশার পালা। বিশ্ববিদ্যালয়কে সঠিকভাবে পরিচালনার প্রধান কাজ হলো শ্রেণীকক্ষকে সঠিকভাবে পরিচালনা করা। আমরা দেখে আসছি বিভিন্ন বিভাগে শ্রেনীকক্ষে শিক্ষার্থীদের অন্তরায় হলো নম্বর ফাঁদে পড়া। অনেক শিক্ষার্থীদের অভিযোগ স্যারদের পছন্দের শিক্ষার্থীদের বেশি নম্বর প্রদান, তাদের ক্লাস না করেও এটেন্ডেন্স মার্ক দেয়া। পক্ষান্তরে মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভালো লিখেও কাঙ্খিত নম্বর না পাওয়া বড় একটি সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। উপচার্যের কাছে প্রত্যাশা এ নম্বর ফাঁদ থেকে আমরা মুক্তি চাই।’
বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ওয়াহিদা আশা বলেন, ‘বর্তমান সময়টা নারীদের জন্য খুবই কঠিন। পাবলিক বাস, রাস্তা ঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমনকি নিজ বাসায়ও নিরাপদ নেই নারীরা। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ও খুব বেশি পিছিয়ে নেই এ তালিকায়। প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের জন্য অভয়ারণ্য হবেন সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্যে কাছে এটাই প্রত্যাশা।’
লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মিনহাজুল হক রুমন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ভাবনায় শিক্ষার্থী বান্ধব হওয়া উচিৎ। তাই শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন ও পরিবহন সংকট, ছাত্র সংসদ গঠন, নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা প্রদানসহ সাংস্কৃতিক চর্চার চারণ ভুমি হিসেবে গড়ে তোলার আশা ব্যক্ত করছি।’
এদিকে শিক্ষার্থীদের এসব প্রত্যাশার পরিপ্রেক্ষিতে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আব্দুস সালাম বলেন, ‘প্রত্যেকটা শিক্ষকের উচিৎ শিক্ষার্থীদের সাথে নিবিড় কানেক্টিবিটি রাখা। শিক্ষার্থীরা আমাদের সন্তান সমতুল্য তারা ভুল করবে, না বুঝেই করবে। তাদেরকে গাইডলাইন দেয়া, বুঝানো, নতুন নতুন স্বপ্ন তৈরি করা এগুলোই সাধারণত শিক্ষকদের কাজ। আর সেই কাজটা করার জন্য আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাবো। তাদের ন্যায্য দাবি, তাদের প্রত্যাশা পুরণে আমার দিক দিয়ে আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি থাকবেনা আমি এতটুকু বলতে পারি। বাকিটুকু পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে।’