কে হচ্ছেন ইবির পরবর্তী উপাচার্য?

  © ফাইল ফটো

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার চার দশক পেরিয়েছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠটি। ইবিতে এ পর্যন্ত ১২ জন উপাচার্য দায়িত্ব পালন করেছে। এর আগে ১১ জন উপাচার্যের কেউই মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, আর্থিক অনিয়মসহ নানা অভিযোগের দায়ে উপাচার্য পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হয়েছে তাদের।

১২তম উপাচার্য হিসেবে প্রথম বারের মতো পূর্ণ মেয়াদ শেষ করতে যাচ্ছেন বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-উর রশিদ আসকারী। আগামী ২০ আগস্ট শেষ হচ্ছে উপাচার্যের মেয়াদ। একইসঙ্গে ট্রেজারারের মেয়াদও শেষ হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক আসনে পরবর্তীতে কে বসতে যাচ্ছেন তা নিয়ে ইতিমধ্যে বেশ জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। আবারও কি বর্তমান উপাচার্য দ্বিতীয় মেয়াদে থেকে যাবেন? নাকি আসবে নতুন কোন মুখ?

সূত্র মতে, ইবি উপাচার্যের পদ পেতে ডজন খানেক সিনিয়র শিক্ষক দৌড়ঝাঁপসহ নানা তদবিরে নেমেছেন। এদিকে, অধ্যাপক ড. আসকারীরও দ্বিতীয়বার উপাচার্য হওয়ার জন্য চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কোষাধ্যক্ষ ড. সেলিম তোহার নাম গতবারই উপাচার্য প্রার্থীর তালিকার শীর্ষে ছিল। এবারও উপাচার্য হওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন ড. সেলিম তোহা। সেই সঙ্গে দুই মেয়াদে উপ-উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করা অধ্যাপক ড. শাহীনুর রহমান এবারও চেষ্টা করছেন এই পদে আসার জন্য।

যেহেতু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মানেই সরকারের উচ্চমহলের আশীর্বাদ। সেহেতু দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্য হিসেবে থাকতে পারবেন কি বর্তমান উপাচার্য— প্রশ্নটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সিনিয়র অধ্যাপকের সঙ্গে কথা বলেছে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র একজন অধ্যাপক জানান, উপাচার্য নিয়োগ পাওয়ার পর ড. আসকারী সবার কাছে প্রিয় পাত্র ছিলো। তবে একটা সময় বিভিন্ন কারণে তার থেকে পিছু হাঁটতে শুরু করে তার কাছের শিক্ষকরা। তাকে ঘিরে একটি চক্র গড়ে উঠে। যার কারণে তিনি একসময় প্রচন্ড রকমে পর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন।

ইবির এ অধ্যাপক জানান, এ সুযোগে তাকে ব্যবহার করে তার কাছের শিক্ষক-কর্মকর্তারা নানা অনিয়ম দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। তবে এর মাঝে তিনি ক্যাম্পাসের অবকাঠামোগত উন্নয়নও করেছেন এটা কথা সত্য। সরকার যদি মনে করেন তাহলে তাকে দিবেন, অথবা অন্য কাউকে দিতে পারেন।

তাবে আসকারী দ্বিতীয় মেয়াদে আসলে তার জন্য ক্যাম্পাসে সময়টা বেশ কঠিন হবে বলেই মনে করেছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র এ অধ্যাপক মনে করেন, তার পাশে থাকা শিক্ষকদের অনেকের নামে নিয়োগ বাণিজ্য, নারী কেলেঙ্কারীর, টেন্ডার বণিজ্যসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে তার জন্য দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্য হওয়া কঠিন হয়ে পড়তে পারে।

এদিকে উপাচার্য গ্রুপের শিক্ষকরা মনে করেন, উপাচার্য যে উন্নয়ন করেছেন সে জন্য তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে আসতে পারেন। তবে তারাও নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেন নি। তাদের মতে, তিনি শিক্ষার্থীবান্ধব অনেক কাজ করেছেন।

বঙ্গবন্ধু পরিষদের একাংশের সম্পাদক আবু হেনা মোস্তফা জামাল হ্যাপী জানান, বর্তমান উপাচার্যের কার্যক্রম, কাজের স্বচ্ছতা, উন্নয়নের ধারা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বর্তমান উপাচার্যকে যদি সরকার পুনরায় নিয়োগ দেন তাহলে সিদ্ধান্তটি সময় উপযোগী হবে। সেটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষার্থীদের জন্য মঙ্গলজনক হবে। তবে সরকার যাকে উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব দিবেন আমরা তাকে সহযোগিতা করবো।

এদিকে উপাচার্য গ্রুপের দাবি, উপাচার্য অনেক কাজ করেছেন তবে তিনি শিক্ষার্থীদের বিপক্ষেও অনেক কাজ করেছেন। তিনি ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে ৩ হাজার থেকে ভর্তি ফি তিনগুল বৃদ্ধি করে ১৩ হাজার করেন। এর ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলন গড়ে তোলে। এজন্য শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ রয়েছে তার প্রতি।

শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম জানান, হুট করে আমাদের সেশন থেকে এক লাফে নামে-বেনামে তিনগুণ ভর্তি ফি বৃদ্ধি করাটা অন্যায় ছিলো। আমরা মধ্যবৃত্ত ঘরের সন্তান হয়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মত খরচ বহন করে চালানো পরিবারের পক্ষে কঠিন। আমরা চাই এমন উপাচার্য আসুক যিনি শিক্ষার্থীবান্ধব হবেন।

এদিকে, বিভিন্ন লবিং মেইনটেন করে তাকে যে শিক্ষকরা অধ্যাপক ড. হারুন-উর রশিদ আসকারীকে উপাচার্য পদে বসাতে চেষ্টা করেছিলেন বলে জনশ্রুতি আছে তারাই এবার তার বিরোধিতা করছে বলে জানা গেছে। তাই পুনরায় দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্য হিসেবে পদে আসলে বাকি পথ কতটা নির্দিধায় কাটাতে পারবেন সে প্রশ্ন স্বয়ং উপাচার্যপন্থী শিক্ষকদের মাঝেও।


সর্বশেষ সংবাদ