ইতিবাচক-নেতিবাচক কিছু ঘটনা নিয়ে সরগরম ছিল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় © টিডিসি সম্পাদিত
শেষ হতে চলেছে ২০২৫ সাল। শোনা যাচ্ছে নতুন বছরের পদধ্বনি। দেশের প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও (ইবি) ইতিবাচক-নেতিবাচক উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা ঘটেছে, যা নিয়ে সরগরম ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ। সেসব আলোচিত ঘটনার কথা তুলে ধরেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস প্রতিনিধি ওয়াসিফ আল আবরার।
শিক্ষার্থীদের ঘরবন্দী করতে প্রশাসনের কৌশলের আশ্রয়
বছরের শুরুতেই গভীর রাতে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের চলাচল ঠেকাতে ‘সান্ধ্য আইন’ জারির পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে শিক্ষার্থীদের বিরোধিতার কারণে তা বাস্তবায়ন করতে না পেরে রাতের ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ঘোরাফেরা বন্ধে ভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নেয় ইবি প্রশাসন। এ সময় রাত ১২টার মধ্যেই প্রক্টরিয়াল বডির লিখিত নির্দেশনা না থাকলেও ‘ওপরের স্যারদের নির্দেশে’ দোকানপাট বন্ধ করে দিতে শুরু করে নিরাপত্তাকর্মীরা। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি জায়গায় স্কুল-কলেজের মতো বিধিনিষেধ ভালোভাবে নেয়নি শিক্ষার্থীরা। সান্ধ্য আইনের জালে শিক্ষার্থীদের আটকাতে না পেরে ভিন্ন কৌশলে শিক্ষার্থীরা যাতে বের হলেও কোথাও বসে চা বা অন্যকিছু খেতে না পারেন এবং বাধ্য হয়ে ধীরে ধীরে বের হওয়াই ছেড়ে দেয়, সেই ব্যবস্থা করে প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্যই তা করা হয়েছিল বলে জানান প্রক্টর।
সমকামিতার মিথ্যে অভিযোগে খালেদা জিয়া হলের ছাত্রীর বিরুদ্ধে
গত ২১ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের খালেদা জিয়া হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বহিরাগত এক নারীর সঙ্গে সমকামিতায় জড়িত থাকার অভিযোগে এক ছাত্রীকে বিকেল ৪টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় হল প্রশাসন। বহিরাগত ওই নারী বেআইনিভাবে হলে থাকেন এবং মাঝেমধ্যে আবাসিকে ওই ছাত্রীর সঙ্গে সমকামিতায় লিপ্ত হন বলে উল্লেখ করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়ে ওই নারীকে সোপর্দ করা হয়। তবে, হল প্রশাসনের পক্ষে থানায় দেওয়া লিখিত অভিযোগে অভিযোগকারী হিসেবে উল্লেখিত এক শিক্ষার্থী জানান, তিনি এক সপ্তাহ ধরে বাড়িতে রয়েছেন এবং অভিযুক্তদের এত দিন শুধু সন্দেহ হয়েছে, তবে নিজ চোখে কিছু দেখেননি। ফলে বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়। এদিকে, হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে কক্ষের ছাত্রীরা তাদের আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পায় এবং বিষয়টি হল কর্তৃপক্ষকে অবগত করে বলে জানানো হলেও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অভিযুক্ত শিক্ষার্থী তখন পরীক্ষার হলে ছিলেন, হাতেনাতে ধরার বিষয় টা অসত্য এবং ওই শিক্ষার্থী চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এ ঘটনায় হল প্রশাসন একটি কমিটি করলেও তার পরবর্তী সময়ে আর কোনো আপডেট পাওয়া যায়নি।
শীতের রাতে আইন ও আল ফিকহ বিভাগের মারামারিতে উত্তপ্ত ক্যাম্পাস
গত ১ ফেব্রুয়ারি বাসে সিট ধরাকে কেন্দ্র করে মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ এবং আল ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কুষ্টিয়া থেকে ক্যাম্পাসে আগত ডাবল ডেকার সানন্দা বাসের দ্বিতীয় তলায় সিট ধরাকে কেন্দ্র করে প্রথমে আল ফিকহ বিভাগের ১৯-২০ বর্ষের শিক্ষার্থী রাকিব এবং আইন বিভাগের ১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের সুমন বাগবিতণ্ডা থেকে হাতাহাতিতে জড়ায়। বাসটি ক্যাম্পাসে পৌঁছালে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক তোপের মুখে তাদের প্রক্টর অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। সময় প্রক্টরিয়াল বডি ও উপস্থিত শিক্ষকেরা উভয় পক্ষের কথা শুনে অভিযুক্ত রাকিবকে বকাঝকা করে ভুক্তভোগী সুমন ও তার মায়ের কাছে ক্ষমা চাইতে বলেন। রাকিব তা মেনে নিয়ে সুমন ও তার মায়ের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চায়। ক্ষমা চাওয়ার পরে প্রক্টর তাদের দুজনকে কোলাকুলি করিয়ে দেন। গেটের বাইরে অপেক্ষমাণ শিক্ষার্থীরা প্রক্টর অফিসের সিদ্ধান্ত শুনে তা না মেনে প্রতিবাদ জানালে উভয় বিভাগের শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে প্রক্টরসহ দুই বিভাগের অন্তত ১০ জন আহত হয়।
৪০ শিক্ষার্থী নিয়ে উল্টে গেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়া শহর থেকে ক্যাম্পাসে আসার পথে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কুষ্টিয়ার বিত্তিপাড়া নামক স্থানে প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থী বহনকারী একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উলটে যায়। শিক্ষার্থীরা জানান, বাসে ৩৫ থেকে ৪০ জন শিক্ষার্থী ছিলেন, বেশির ভাগই ঘুমাচ্ছিলেন। ক্যাম্পাসে আসার সময় চালকও ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে বাসটি চালাচ্ছিলেন। বিত্তিপাড়ার দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছালে হঠাৎ বাসের একজন মামা বলে চিৎকার করে ওঠে। এ সময় শিক্ষার্থীরা দেখতে পান, বাসটি রাস্তার বাঁ দিকে থেকে ডানে গিয়ে গড়িয়ে ধান ক্ষেতের মধ্যে উলটে যাচ্ছে। তবে বাসের গতি তুলনামূলক কম হওয়ায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি৷
রেজিস্ট্রার পদ নিয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে তুমুল হট্টগোল
এ বছরের ৪ মার্চ রেজিস্ট্রার পদে পদায়নকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নকীব নসরুল্লাহর কার্যালয়ে তুমুল হট্টগোলে জড়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো ভিসি-প্রক্টর-সহকারী প্রক্টর এবং ছাত্রনেতারা। ৩ মার্চ উপাচার্যের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রেজিস্ট্রার হিসেবে একজন শিক্ষককে নিয়োগের দাবি জানায়। পরদিন মেগা প্রকল্প পরিচালক নওয়াব আলীর সঙ্গে এক মিটিং চলাকালে বাইরে হট্টগোল করেন বিএনপি ও জামায়াতপন্থী কর্মকর্তারা। পরবর্তীতে প্রক্টরিয়াল বডি নওয়াব আলীকে ভিসি অফিস থেকে নিয়ে যাওয়ার পর ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ ও সদস্যসচিব মাসুদ রুমি মিথুনের নেতৃত্বে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ভিসির কার্যালয়ে প্রবেশ করে। সেখানে আগে থেকে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি, ট্রেজারার, প্রক্টর ও জিয়া পরিষদের সভাপতি সেক্রেটারি।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগকে কেন্দ্র করে বাগবিতণ্ডায় জড়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি ও প্রক্টর। ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদের নেতৃত্বাধীন গ্রুপ রেজিস্ট্রার পদে কর্মকর্তা ওয়ালিদ হাসান পিকুলের নাম প্রস্তাব করলে প্রক্টর তাদের কাছে আরও কয়েকজনের নাম প্রস্তাব চান। এই নিয়ে প্রক্টর ও প্রো ভিসি তর্কে জড়ান। এ সময় প্রোভিসি ড. এম এয়াকুব আলী প্রক্টর ড. শাহীনুজ্জামানকে ‘জামায়াত’ আখ্যা দিলে দুজনের মধ্যে উচ্চবাচ্য সৃষ্টি হয়। ভিসি অফিসের হট্টগোলের শব্দ পার্শ্ববর্তী আমতলা পর্যন্ত পৌঁছালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা দৌড়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে প্রবেশ করলে তুমুল হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। এসময় কার্যালয়ের ভেতরে ভিসি, প্রো-ভিসি, ট্রেজারার, প্রক্টর এবং ছাত্র নেতারাও উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় করে। এছাড়াও প্রো-ভিসির সাথে প্রক্টর ড. শাহীনুজ্জামান ও সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. ফকরুল ইসলামের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। ঘটনার পরের দিন বিকেলে রেজিস্ট্রার পদে ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল হককে নিয়োগ দেন উপাচার্য ড. নকীব নসরুল্লাহ।
বছরের ৩য় দিনে নববর্ষ উৎসব আয়োজন
বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন তথা বৈশাখ মাসের ১ তারিখে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের রেওয়াজ থাকলেও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে নববর্ষ উৎসব ১৪ এপ্রিলের পরিবর্তে ১৬ এপ্রিল উদযাপন করা হয়। বিষয় টা নিয়ে ব্যাপক ট্রল করেন নেটিজেনরা। আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ক্যাম্পাস ছুটি থাকায় এবং ক্যাম্পাসের অবস্থান শহর থেকে দূরে হওয়ায় ছুটির দিনে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার কম থাকে। তাই ক্যাম্পাস খোলার দিনে আয়োজন করলে অধিকসংখ্যক শিক্ষার্থী উপস্থিত হতে পারবে বলেই এই সিদ্ধান্ত। যদিও পরবর্তী সময়ে বেশ আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজনে নববর্ষ উদযাপিত হয়।
র্যালিতে না যাওয়ার ছাত্রীদের খাবার বন্ধ
১৬ এপ্রিল বাংলা নববর্ষের শোভাযাত্রায় ছাত্রীদের অংশগ্রহণ না করায় খালেদা জিয়া হলের প্রভোস্ট ড. জালাল উদ্দিন হলের ডাইনিংয়ের খাবার সরবরাহ বন্ধ করে দেন। নববর্ষ উপলক্ষে হলটিতে দুপুরে পান্তাভাত, ভর্তা ও রুই মাছ ভাজির বিশেষ আয়োজন করা হয়। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি র্যালিরও পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু আশানুরূপ সংখ্যক শিক্ষার্থী উপস্থিত না হওয়ায় প্রভোস্ট হতাশ হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে দুপুরের খাবার পরিবেশন বন্ধ ঘোষণা করেন এবং রাত ৯টায় সব শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে একটি মিটিং ডাকার নির্দেশ দেন। ফলে শিক্ষার্থীরা দুপুরে কোনো খাবার না পেয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েন। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক ছিল না এবং অনেকের ক্লাস ও পরীক্ষা থাকায় তারা যেতে পারেননি। এ ঘটনায় হল প্রভোস্ট পদত্যাগের আল্টিমেটাম দেয় শিক্ষার্থীরা। তবে, প্রশাসন ও প্রক্টরিয়াল বডির সহযোগিতায় সে যাত্রায় পদত্যাগের হাত থেকে বেঁচে যান প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. জালাল উদ্দীন।
গুচ্ছ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের পাশে ইবির সব ছাত্র সংগঠন
জিএসটি গুচ্ছভুক্ত ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে আগত ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি তথ্য সহায়তা কেন্দ্র স্থাপন ও আবাসনের ব্যবস্থাসহ নানা উদ্যোগ নিয়ে দেশব্যাপী প্রশংসা কুড়িয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলো। প্রধান ফটকের উভয় পাশে ক্রিয়াশীল ৭টি ছাত্র সংগঠনের জন্য প্রশাসনের বরাদ্দকৃত স্টল গুলোতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে শহীদ আবু সাঈদ তথ্য কেন্দ্র, শাখা ছাত্রদলের শহীদ ওয়াসিম সহায়তা কেন্দ্র ও শহীদ মুগ্ধ পানি কর্ণার, ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়ন, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের শহীদ ওসামা হেল্প ডেস্ক, জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়া ও খেলাফতে মজলিস ভর্তিচ্ছুদের সহায়তায় বুথ স্থাপন করে। এতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীদের তথ্য সরবরাহ, ফুল ও উপহার প্রদান, ইমারজেন্সি ওষুধ, সুপেয় পানির ব্যবস্থা ও অভিভাবকদের জন্য বিশ্রাম, শরবতের ব্যবস্থা করা হয়।
ডেইলি ক্যাম্পাস সাংবাদিকের ওপর জোটবদ্ধ হামলা
গত ২৯ এপ্রিল দিবাগত রাতে শাহ আজিজুর রহমান আবাসিক হলের সিটে থাকাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের প্রতিনিধি ওয়াসিফ আল আবরাররের ওপর হামলা চালায় শাখা ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মী এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শাখা সমন্বয়কদের একটি অংশ। এ ঘটনায় আবরারকে রক্ষা করতে গিয়ে লাঞ্ছিত ও আহত হয় সমন্বয়কদের অপর অংশ, দুই সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। ঘটনার জেরে ছাত্রশিবির ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশের সাথে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়া ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অপরাংশের দফায় দফায় হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। মাথার পেছনে উপর্যুপরি আঘাতে জ্ঞান হারালে আবরারকে প্রথমে ইবি মেডিকেল ও পরে সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এর আগেও রমজান মাসে ছাত্রশিবিরের ছাত্র আন্দোলন সম্পাদক জাকারিয়া তাকে দুই দফায় ফোন দিয়ে থ্রেট দেয়। নিরাপত্তাহীনতা বোধ করায় ভুক্তভোগী সাংবাদিক বিষয়টি প্রক্টর ও ভিসিকে লিখিত ভাবে জানালেও তারা ব্যবস্থা নেয়নি। এ ঘটনায় বিভিন্ন পক্ষের সংশ্লিষ্টতা থাকলেও পরবর্তীতে ভুক্তভোগী সাংবাদিকের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয় ইবি প্রশাসন।
সমকামিতাসহ নানান অভিযোগে সেই শিক্ষক হাফিজ চাকরিচ্যুত
গত ৩০ জুন শিক্ষার্থীদের কথার অবাধ্য হলে ইন্টারনাল নম্বর কম দেওয়া, ক্লাসে মেয়েদের জামা কাপড় নিয়ে কটূক্তি, বাজারের মেয়ে বলে গালিগালাজ, ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে হেনস্তা, ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে মারার ও ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার হুমকি দেওয়া ও সমকামিতার অভিযোগ ওঠা ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক হাফিজুল ইসলামকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়। এর আগে, শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রথমে তার বাৎসরিক ১ (এক)টি ইনক্রিমেন্ট/ধাপ বাতিল করা হয় এবং গত বছরের ২২ ডিসেম্বর থেকে ১ বছরের বাধ্যতামূলক ছুটি প্রদান করা হয়। প্রশাসনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে শিক্ষার্থীদের তুমুল আন্দোলনের মুখে ব্যাপক তদন্তের জন্য গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ গত ৩১ মে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ২৬৮তম (সাধারণ) সভার ৭ নং সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়।
মেসেঞ্জারে দিতেন কুরুচিপূর্ণ মেসেজ, সাড়া না দিলে আনসেন্ট করতেন ইবি শিক্ষক
গত জুলাইয়ে বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আজিজুল ইসলাম বিরুদ্ধে নারী শিক্ষার্থীদের চেম্বারে ডেকে কুপ্রস্তাব দেওয়া, হয়রানি, গভীর রাতে ফোনকল এবং বিবাহিত মেয়েদের ক্লাসে দাড় করিয়ে দাম্পত্য জীবন, স্বামীর সাথে বোঝাপড়া নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করাসহ বাজে ইঙ্গিতের অভিযোগে লিখিত অভিযোগ দেয় ২২ নারী শিক্ষার্থী। অভিযোগপত্রে শিক্ষার্থীরা বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষক আজিজুল ইসলাম মেয়েদের গভীর রাতে কল দিয়ে বিরক্ত করেন। বিশেষ করে তিনি ম্যাসেঞ্জারে কল দেন যাতে ফোনকল রেকর্ড করা না যায়। নিজেকে মেয়েদের বন্ধু হিসেবে পরিচয় দিয়ে ক্লোজ হতে চান, ম্যাসেঞ্জারে কল দেওয়া, নানারকম উত্যাক্তকারী ম্যাসেজ দেবার পর সাড়া না পেলে তিনি প্রমাণ মুছতে ম্যাসেঞ্জার থেকে সকল মেসেজ আনসেন্ট করে দেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে বিভাগের কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
সাজিদ আব্দুল্লাহ হত্যাকাণ্ড
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বছরের সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে ১৭ জুলাইয়ে। এদিন বিকেলে শাহ আজিজুর রহমান হলের পুকুর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাজিদ আবদুল্লাহর ভাসমান লাশ উদ্ধার করে শিক্ষার্থীরা। প্রথমে পানিতে ডুবে মৃত্যুর ধারণা করা হলেও ফরেনসিক রিপোর্টে জানা যায় সাজিদকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। লাশ উদ্ধারের পর ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি প্রশাসনের কাছে সরকারের উচ্চপর্যায়ের তদন্ত সংস্থার মাধ্যমে তদন্তের সুপারিশ করে। এটি হত্যাকাণ্ড নিশ্চিত হওয়ার পরে তদন্তের দায়িত্ব যায় সিআইডির কাছে। দীর্ঘ ৫ মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। তবে শিক্ষার্থী, বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও শিক্ষকবৃন্দ বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করছে, হত্যার তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ায় বিলম্ব হওয়ায় ক্ষোভ ও নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে সবার মধ্যে।
ছাত্র সংসদ ইকসু গঠনের জোরালো পদক্ষেপ
দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ গঠনের উদ্যোগ নেয় প্রশাসন। নানা পক্ষের আবেদন নিবেদন, স্মারকলিপি প্রদানের পর কাজ না হওয়ায় গত ২২ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীরা মিলে ‘ইকসু গঠন আন্দোলন’ নামে একটি নতুন প্লাটফর্মের সৃষ্টি করে এবং কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে বলে ঘোষণা দেয়। এরপর দিন, বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসির করিডোরে ক্যাম্পাসের সব ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে ‘মুভমেন্ট ফর ইকসু’ নামক উন্মুক্ত মিটিং করা হয় এবং ২৫ আগস্ট সাধারণ শিক্ষার্থীরা মিলিত হয়ে 'মার্চ ফর ইকসু' নামক কর্মসূচি পালন করে উপাচার্যের সাথে সাক্ষাৎ করে। এরই ধারাবাহিকতায় ২৭ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইকসু গঠন ও নির্বাচনের গঠনতন্ত্র প্রণয়নে ১১ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটি ১৫ অক্টোবরের মধ্যে ইকসু গঠনতন্ত্র প্রণয়নের ঘোষণা দেন। এরপরে ৩০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭১তম সিন্ডিকেট সভায় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও হল সংসদের গঠনতন্ত্র পাশ করে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ইউজিসিতে প্রেরণ করা হয়।
বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের আগমনে অনুপ্রেরণাময় ইবি
বছরজুড়ে বিভিন্ন সময় দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্বের আগমন ঘটেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। গত ১০ সেপ্টেম্বর সিরাতুন নবী (সা.) উদযাপন উপলক্ষে ইবিতে ‘বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সুন্নাতে রাসুল্লাহ (সা.)’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সিরাত বক্তা হিসেবে উপস্থিত হন আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ। তার পরদিন, ১১ সেপ্টেম্বর ইসলামী ছাত্র আন্দোলন ইবি শাখার উদ্যোগে আয়োজিত ক্যারিয়ার গাইডলাইন ফর ফ্রেশার্স ২০২৫ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হন ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমীর শায়েখে চরমোনাই মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করিম। এরপর ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের দু’দিন ব্যাপী ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানের প্রথম দিনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হন ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ এবং দ্বিতীয় দিন উপস্থিত হন বাংলাদেশের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ ও লেখক অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান।
শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নে ইবি উপাচার্যের নম্বর ২.৪৫
গত ২৩ সেপ্টেম্বর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহর দায়িত্ব গ্রহণের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরিচালিত একটি মূল্যায়ন জরিপে সর্বোচ্চ নাম্বার ১০-এর মধ্যে ২.৪৫ পেয়ে অকৃতকার্য হন ইবি উপাচার্য। ডায়না চত্বরে জরিপ পরিচালনাকারী সংগঠন ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার আন্দোলন’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পরিচালিত এ জরিপে ১০টি বিষয় মূল্যায়নের মধ্যে রাখা হয় যাতে ১ হাজার ৩১২ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বিগত এক বছরে উপাচার্যের কার্যক্রমের আশ্বাস ছাড়া কিছুই মেলেনি। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন, সামাজিক সংগঠন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দাবি জানিয়েছে, কিন্তু সেগুলোর কতটুকু বাস্তবায়িত হচ্ছে- সে প্রশ্ন থেকেই যায়। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন ইবি উপাচার্য।
নারী শিক্ষার্থীদের ‘ল্যাঙটা মাইয়া’ বলা ইবি শিক্ষকের কুরুচিপূর্ণ অডিও ফাঁস
গত ২৮ অক্টোবর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আল কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের তৎকালীন সভাপতি অধ্যাপক ড. নাসির উদ্দীন মিঝির নারী শিক্ষার্থীদের পোশাক নিয়ে করা কুরুচিপূর্ণ একটি অডিও ফাস হয়। চার মিনিট ছয় সেকেন্ডের ওই অডিওতে সাজিদ হত্যার বিচারের আন্দোলন’ নিয়ে এক শিক্ষার্থীকে শাসানোর সময় এক নারী শিক্ষার্থীকে ‘ন্যাংটা’ বলে সম্বোধন করতে শোনা যায়। এছাড়াও সাজিদ আব্দুল্লাহকে কোথাকার কোন একটা মৃত পোলা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সে তো চলে গেছে। ন্যাংটা মাইয়া কতগুলো নিয়ে সেখানে দাঁড়ায়। এক মাইয়া নিয়ে গেছে ওখানে। আরেক হাইওয়ান। ও হাইওয়ান নিয়ে গেছে ওখানে। ওটা তো ইনসান না, হাইওয়ান। আমি আল কুরআনের টিচার, আমার সাথে গেছে জিন্সের প্যান্ট পরা, গেঞ্জি পরা মাইয়া। মরে গেছি আমি।’ অডিওটি ভাইরাল হওয়ার পরে দেশব্যাপী নিন্দার ঝড় ওঠে। তার বহিষ্কার চেয়ে পরদিন শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের ডাক দেয়। অভিযুক্ত শিক্ষকও নিজের ভূল বুঝতে পেরে ক্ষমা চান। তবে তার বহিষ্কারের দাবিতে অনড় থাকা শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কথা অনুযায়ী লিখিত অভিযোগ জমা দিলেও প্রশাসন আর কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
আওয়ামীপন্থী ১৯ শিক্ষক ও ১১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রশাসনের ব্যবস্থা, ছাত্রলীগের সনদ বাতিল
গত ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭১তম সিন্ডিকেট সভায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিরোধীতাকারী হিসেবে অভিযুক্ত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ শিক্ষক ও ১১ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একই অপরাধে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত ৩৩ সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও সনদ বাতিলের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। তাদের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কী হবে, তা নির্ধারণ করতে একটি শাস্তি নির্ধারণ কমিটি গঠন করা হয়। এর আগে গত ১৫ মার্চ জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের বিরুদ্ধ ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করতে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করে প্রশাসন। প্রত্যক্ষদর্শী কর্তৃক প্রদত্ত লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ, বিভিন্ন তথ্যচিত্র, ভিডিও এবং পত্রিকার খবরের ভিত্তিতে এসব শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানবিরোধী কার্যকলাপের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ৪৭ পাউন্ডের কেক কান্ডে ভাইরাল ইবি
৪৭তম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে বর্ণাঢ্য উদযাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরই অংশ হিসেবে ৪৭ পাউন্ডের কেক কেটে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করে ইবি প্রশাসন। তবে, কেক কাটার সময় একদল শিক্ষার্থীর কাড়াকাড়িতে মুহূর্তের মধ্যেই উধাও হয়ে যায় ৪৭ পাউন্ডের কেকটি৷ এদিন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নিজ তত্ত্বাবধানে ৪৭ পাউন্ডের কেকটি ছোট ছোট টুকরায় কেটে রাখছিলেন। এসময় মুহুর্তের মধ্যেই উপস্থিত শিক্ষার্থীরা থাবা মেরে এবং কাড়াকাড়ি করে কেক নিতে থাকেন। কেক নেওয়ার সময় তাদের ধাক্কাধাক্কির একপর্যায়ে কেকের টেবিলটিও ভেঙে যায়৷ তারপর অনেককে মাটিতে পড়ে যাওয়া সেই টেবিলে লেগে থাকা কেকও মুঠোভরে তুলতে দেখা যায়। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছড়িয়ে পড়লে তা ভাইরাল হয়ে যায়। দেশব্যাপী ট্রলের শিকার হয়ে লজ্জায় মাথা কাটা যাওয়ার অবস্থা হয় ইবি শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড হালচাল
বছর জুড়ে আলোচনায় ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকটের বিষয়টি। সংকট নিরসনে ৫৯ পদে বিজ্ঞপ্তি দিলেও ইউজিসির ছাড় না পেয়ে ৬ টি পদে নিয়োগ দেয় প্রশাসন। তবে ৯ অক্টোবরের প্রথম নিয়োগ বোর্ডেই ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগে শিক্ষক হিসেবে ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে - এমন অভিযোগ তুলে প্রতিবাদ জানায় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। ১০ অক্টোবর সকালে ল অ্যান্ড ল্যান্ড এডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা চলাকালে বিভিন্ন স্লোগান দেওয়ার পাশাপাশি ছাত্রলীগের দোসর কাওকে নিয়োগ না দেওয়ার দাবিতে উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেয় ছাত্রদল। আবার, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৬টি বিভাগে শিক্ষক পদোন্নতি (নিয়োগসহ) বোর্ডের জন্য সদস্য ও বিশেষজ্ঞ সদস্য মনোনয়ন দেওয়া হয় যেখানে মিলেমিশে বিএনপি-জামায়াত-আওয়ামী-বামপন্থী ১৮০ অধ্যাপক জায়গা পান যাদের একটি বড় অংশ চিহ্নিত আওয়ামী মতাদর্শের শিক্ষক। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসে সংবাদ প্রকাশের পর বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এছাড়া সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাকে পাশ কাটিয়ে ইবি আইআইইআর এর শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে সদস্য হিসেবে উপস্থিত হন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. হোসেইন আল মামুন। মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের ব্যাপারে তিনি জানান, সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত ই সঠিক।
সড়ক সংস্কারে মহাসড়ক অবরোধ
গত ৩০ নভেম্বর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক সংস্কারের দাবিতে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থী ও ছাত্রনেতারা। ঘটনায় দীর্ঘ ৪ ঘণ্টা পরে এই মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এসময় গেটের উভয় পাশে প্রায় ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। আটকা পড়ে যাত্রীবাহী বাস এবং উত্তরবঙ্গ থেকে আসা বিভিন্ন পণ্যবাহী ও মালবাহী ট্রাক। বারংবার সড়ক দূর্ঘটনা এবং বিভিন্ন পক্ষের দাবির প্রতি আশ্বাস জ্ঞাপন করেই দায়সারা প্রশাসনকে সড়ক সংস্কারে বাধ্য করতেই এই কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। পরে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রোকনুজ্জামান, কুষ্টিয়ার সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ মনজুরুল করিম এবং ঝিনাইদহের সড়ক বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী ও স্টাফ অফিসার আহসানুল কবির উপস্থিত হন। প্রশাসনের আশ্বাসের পরে স্থানীয় প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উপস্থিতিতে সড়ক অবরোধ তুলে নেয় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের পদত্যাগ
গত ৭ ডিসেম্বর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ না করায় প্রশাসনের দেওয়া বিভিন্ন কমিটির দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন ইবির বিএনপিপন্থী তিন শিক্ষক নেতা। ওই তিন শিক্ষক হলেন জিয়া পরিষদের কেন্দ্রীয় মহাসচিব অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন, ইউট্যাব ইবি শাখার সভাপতি অধ্যাপক ড. তোজাম্মেল হোসেন এবং সাদা দলের আহবায়ক অধ্যাপক ড. এ কে এম মতিনুর রহমান। হঠাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন প্রভাবশালী শিক্ষক নেতার একযোগে পদত্যাগের ঘটনায় বিভিন্ন মহলে নানা আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়। হুট করেই তিন প্রভাবশালী শিক্ষক নেতার এমন সিদ্ধান্তে অদৃশ্য চাপে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিজয় দিবসের খাবারের টোকেন জালিয়াতি
গত ১৬ ডিসেম্বর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে লালন শাহ হল প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ খাবারে (হল ফিস্ট) টোকেন জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। হল প্রশাসনের উদ্যোগে বানানো টোকেনের মত হুবহু প্রিন্ট করা নকল টোকেন দেখিয়ে খাবার নিয়ে যায় কয়েকজন অজ্ঞাত শিক্ষার্থী। আসল ও নকল টোকেনের পার্থক্য তাৎক্ষণিকভাবে বুঝতে না পারায় খাবার বিতরণের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরাও খাবার দিয়ে দেন৷ কিছুক্ষণ পরেও মূলত জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। দুই টোকেনের পার্থক্য সহজে বোঝা না যাওয়ায় মূলত বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয় বলে জানা যায়। ফলে টোকেন থাকা সত্ত্বেও কয়েকজন শিক্ষার্থী খাবার না পেয়ে অপেক্ষায় ছিলেন। পরে অতিরিক্ত খাবার থেকে প্যাকেট করে তাদের সরবরাহ করা হয়।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান চেয়ার প্রতিষ্ঠা
গত ২১ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ১৯তম অনুষদীয় সভায় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জীবনাদর্শন, মতাদর্শ, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশসহ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাস, ঐতিহ্য রক্ষার্থে ও তার প্রতি সম্মান জানিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান চেয়ার’ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। পরবর্তীতে একাডেমিক কাউন্সিলে আলোচনা ও সিন্ডিকেটের অনুমোদনের প্রেক্ষিতে এই চেয়ার প্রতিষ্ঠিত হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান একদিকে যেমন স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন, অপরদিকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাঁর সম্মানার্থে তাঁর নামে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে চেয়ার প্রতিষ্ঠা করাই ছিলো সবচেয়ে যৌক্তিক দাবি। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান চেয়ার অনুমোদনের পরপরই একজন স্বনামধন্য অধ্যাপক, বিশিষ্ট গবেষক ও মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষককে এ চেয়ারে নিয়োগ দেওয়া হবে।