মাস না পেরোতেই ৫ বর্তমান-সাবেক শিক্ষার্থীকে হারাল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:২৮ PM
এক মাসেরও কম সময়ে দুজন সাবেকসহ ৫ শিক্ষার্থীকে হারিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। রোগ-শোক, দুর্ঘটনা আর হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন তারা। অল্প সময়ের ব্যবধানে এত শিক্ষার্থী হারিয়ে শোকে শোকে স্তব্ধ হয়ে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের ‘জাঁকজমকপূর্ণ’ আয়োজনও এবার হয়েছে ম্লান।
জানা গেছে, গত ৩ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা হাসিবুর রহমান অসুস্থ হয়ে মারা যান। এরপর যেন থামছেই না জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্যুর মিছিল। একে একে মারা গেছেন ইতিহাস বিভাগের ২০১৮–১৯ সেশনের শিক্ষার্থী সানজিদা ইসলাম, পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭–১৮ সেশনের শিক্ষার্থী জোবায়েদ হোসেন, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০০৮–০৯ সেশনের শিক্ষার্থী আবুল কালাম এবং হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ২০০৫–০৬ সেশনের শিক্ষার্থী মানজুরা আক্তার। এ সময় মানজুরা আক্তারের সঙ্গে তার ১০ বছরের মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকাও মারা যায়।
তথ্য বলছে, ৩ অক্টোবর পুরান ঢাকার স্টার কাবাবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের সঙ্গে রাতের খাবার খাওয়ার সময় হার্ট অ্যাটাক করেন হাসিবুর রহমান। এরপর দলের নেতাকর্মীরা তাকে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসিবুর রহমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।
৫ দিনের ব্যবধানে ৮ অক্টোবর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ইতিহাস বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী সানজিদা ইসলাম। তিন দিন আগে তার ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। সানজিদা ইসলাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
এরপর গত ১৯ অক্টোবর টিউশন করাতে গিয়ে খুন হন পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭–১৮ সেশনের শিক্ষার্থী জোবায়েদ হোসেন। তিনিও শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। আলোচিত এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, পুরান ঢাকার আরমানিটোলার নুরবক্স লেনের ১৫ নম্বর রৌশান ভিলা নামের বাসায় টিউশন করাতে গেলে তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। বর্ষা নামের এক ছাত্রীকে তিনি পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান পড়াতেন। পুলিশ জানায়, বর্ষা ও তার প্রেমিক মাহির ২৫ দিন আগে হত্যার পরিকল্পনা করে। ১৯ অক্টোবর বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটের দিকে তারা জোবায়েদকে অন্ধকার সিঁড়ির নিচে ডেকে নিয়ে যায় এবং মাহির ও তার বন্ধু আয়লান মিলে তাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে।
৫ দিন পর গত ২৪ অক্টোবর জানা গেছে, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) ১১ কর্মকর্তা পরিবারসহ টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে যাওয়ার সময় সুনামগঞ্জ সিলেট সড়কের শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাগলা বাজার সংলগ্ন ইনাতনগর এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ২০০৫–০৬ সেশনের শিক্ষার্থী মানজুরা আক্তার। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশের খাদে উল্টে পড়া বাসের নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার। একই সাথে মারা যায় মানজুরা আক্তারের ১০ বছরের মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকা।
এদিকে গতকাল রবিবার (২৬ অক্টোবর) রাজধানীর ফার্মগেটে মেট্রোরেলের পিলার থেকে বিয়ারিং প্যাড (স্প্রিং) ছিটকে পড়লে তাতে চাপা পড়ে নিহত হন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০০৮–০৯ সেশনের শিক্ষার্থী আবুল কালাম। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের সামনে ফার্মগেট মেট্রো স্টেশনসংলগ্ন এলাকায় ৪৩২ ও ৪৩৩ নম্বর পিলারের মাঝামাঝি স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, মেট্রোরেলের পিলার থেকে খুলে পড়া বিয়ারিং প্যাডটি আবুল কালামের ঘাড়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি ফুটপাথে লুটিয়ে পড়েন। তার নাক ও মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই শরীর নিথর হয়ে যায়। এরপর সেই বিয়ারিং প্যাডটি পাশের একটি দোকানের কাঁচ ভেঙে ফেলে। এতে দোকান মালিক আমির আহত হন এবং বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ২০ অক্টোবর ছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। কিন্তু আগের দিন সন্ধ্যায় জোবায়েদ হোসেন খুনের পর তাৎক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের আয়োজন স্থগিত করে প্রশাসন। ঘোষণা দেওয়া হয়, আজ ২৭ অক্টোবর এ আয়োজন হবে। কিন্তু দিবসটিতে কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকছে না। এমনকি দিবসটি উপলক্ষে করা আলোকসজ্জাও খুলে ফেলা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, আগে যেভাবে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল, এবার তা থাকছে না। কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হবে না।