বঙ্গবন্ধু মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন: খুবি উপাচার্য

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান  © টিডিসি ফটো

খুবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান বলেছেন, একাত্তরে স্বাধীনতাকামী এ দেশের সাধারণ, নিরস্ত্র লাখ লাখ মানুষকে পাক দখলদার বাহিনী তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস এবং শান্তিবাহিনীর সহায়তায় হত্যা, গুমসহ মা-বোনদের সম্ভ্রম হানি করেছে। যারা এর সাথে জড়িত এবং সম্পৃক্ত ছিলো তাদের বিচারের জন্য বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে কোলাবোরেটরস আইন এবং ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেন। এটি ছিলো যথাযথ এবং এই আইনে বিচার কাজ শুরু হয়ে কয়েকটি রায়ও কার্যকর হয়েছিল।

শুক্রবার বিকেলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে ‘মুক্তিযুদ্ধকালীন সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা: ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে চলমান বিচার প্রক্রিয়া’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন তিনি।

আইন স্কুলের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইন স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. মো. ওয়ালিউল হাসানাত।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য আরো বলেন, ইতিহাসের সেই কালো অধ্যায় থেকে দেশ ও জাতির উত্তরণ ঘটেছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালে পার্লামেন্টে পাস করে বর্তমান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেন। এর মাধ্যমে ইতিমধ্যে অনেকগুলো মামলার রায় হয়েছে এবং তা কার্যকরের মাধ্যমে জাতি অনেকটা কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। তিনি বলেন, এই ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে আরও মামলার বিচার হবে জাতি সে অপেক্ষায় রয়েছে।

অনুষ্ঠানের মূল আলোচক আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসকিউটর জিয়াদ আল মালুম তার ঘণ্টাব্যাপী বক্তব্যে ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত রাজনৈতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন। পাকিস্তানের দুটি অংশ একটি অপরটি থেকে প্রায় ১৪শ মাইল দূরে থাকলেও এবং এই দুই অংশের মানুষের ভাষা, সংস্কৃতি, শরীরের গঠন ও রং সবেরই পার্থক্য থাকলেও ধর্মের দোহাই দিয়ে পশ্চিমারা আমাদেরকে কেবল শোষণ ও বঞ্চনার হাতিয়ার বানিয়েছিলো। এর পরের ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের রক্তদানের মাধ্যমে বাঙালি জাতির মধ্যে জাতীয়তাবোধের নবজাগরণ ঘটে।

বঙ্গবন্ধুর জাতীর প্রতি অসীম ত্যাগের কথা উল্লেখ্য করে বলেন, বঙ্গবন্ধুর সাহসিকতা, দূরদর্শী নেতৃত্ব, এদেশের মানুষের প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও ভালোবাসায় নেতৃত্ব দিয়ে একটি স্বাধীন দেশ ও জাতি উপহার দিয়েছেন। তিনি বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণহত্যা ঘটে ১৯৭১ সালের ২৫মে এই খুলনার ডুমুরিয়ার চুকনগরে। মাত্র দেড় ঘণ্টায় ১০ হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী ও শিশু ছিলো।

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেখানে পার্লামেন্টে এ আইন পাশ হয়েছে। বাংলাদেশে এই আইসিটি আইন আন্তর্জাতিক মানের এবং এর অধীনে এখন পর্যন্ত যে রায় হয়েছে তা অত্যন্ত স্বচ্ছ। তিনি আইসিটির বিভিন্ন দিক নিয়ে এবং এর বিচার কার্যক্রমের উল্লেখযোগ্য দিক নিয়ে আলোচনা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ডিসিপ্লিনের সাথে আইসিটি আইনসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম এবং আইসিটি মামলার বিচারকার্য পর্যবেক্ষণের সুযোগ প্রদানের বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এছাড়া, আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মো. সারোয়ার জাহান। সভাপতির বক্তৃতায় প্রফেসর ড. মো. ওয়ালিউল হাসানাত বলেন, আইনের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য এ অনুষ্ঠান অত্যন্ত কার্যকর হবে। আইসিটি মামলার আসামী যারা এখনো বিদেশে পালিয়ে আছে তাদের দেশে এনে বিচারকার্য সম্পন্ন করলে জাতি আরো কলঙ্ক মুক্ত হবে।

এছাড়া অনুষ্ঠানে বিভিন্ন স্কুলের ডিন, ডিসিপ্লিন প্রধান, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।


সর্বশেষ সংবাদ