নবী করিম (সা.) শুধু কথায় সীমাবদ্ধ না থেকে কাজে বাস্তবায়ন করেছেন: আহমাদুল্লাহ

আলোচনা সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন শায়খ আহমাদুল্লাহ
আলোচনা সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন শায়খ আহমাদুল্লাহ  © টিডিসি

আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেছেন, শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নবী করিম (সা.)-এর কাজের তুলনা ইতিহাসে বিরল। আমরা তাঁর বহু নীতিকথা শুনি, উদাহরণ দেখি। কিন্তু এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তিনি নিজেই সেই নীতিগুলো জীবনে অনুসরণ করেছেন এবং প্রমাণ করেছেন। তিনি শুধু কথায় সীমাবদ্ধ ছিলেন না, বরং কাজের মাধ্যমে তাদের বাস্তবায়ন করেছেন।

বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সিরাতুন নবী (সা.) উদযাপন উপলক্ষে ইবিতে ‘বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সুন্নাতে রাসুল্লাহ (সা.)’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সিরাত বক্তার আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।

শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, “শ্রমিকদের অধিকার বিষয়ে নবীজি (সা.) ঘোষণাটি যুগান্তকারী ছিল ‘শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগেই তার মজুরি প্রদান করো।’ এ নির্দেশে নিহিত আছে শোষণমুক্ত সমাজ গঠনের মূল পথনির্দেশ। যে জামা তিনি নিজের জন্য কিনতেন, সেটিই তিনি তার চালকের জন্যও কিনতেন; নিজের সন্তানের জন্য পোশাক কিনলে, তার কর্মচারীর সন্তানের জন্যও একই পোশাক নিশ্চিত করতেন। তিনি সমাজে বৈষম্য দূর করতে ছোট থেকে বড় সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এ মুহূর্তে মুসলমানদের মহানবীর রেখে যাওয়া আদর্শের গুণাবলি অর্জন করতে হবে। তা করতে পারলে মুসলমানরা অনেক বড় অর্জন করতে পারত। কিন্তু আমরা এখনো সেটি করতে পারছি না।”

তিনি বলেন, “আমরা ফিলিস্তিনের দিকে তাকাই। সেখানে যে রকম গণহত্যা চালানো হচ্ছে, শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে এবং সেই সব দেশ যারা মানবাধিকার শিক্ষা দেয়, তারাই এই বর্বরতা সমর্থন করছে এটি গভীর চিন্তার বিষয়। কিন্তু কি এমন একটি যুদ্ধ ইতিহাসে ঘটেছে, যা মহানবীর আমলে ঘটেছে, যেখানে একটি শিশুও নিহত হয়েছে? কেউ কি তা দেখাতে পারবেন? প্রশ্ন করা হয়েছে ‘শিশুদের সাথে যুদ্ধের কী সম্পর্ক?’ এই প্রশ্নের মধ্যেই মানবতার মূল সংকেত নিহিত। বর্তমান সমাজে প্রচলিত পুঁজিবাদ ও বৈষম্য যে ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে, তা আমাদের সামনে স্পষ্ট। কিন্তু যদি আমরা মহানবীর আদর্শ ছড়িয়ে দিতে পারি এবং মানুষকে সেই আদর্শে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি, তাহলে সমাজ থেকে সব ধরনের জবরদস্তি, অত্যাচার ও হানাহানি দূর হয়ে যাবে।”

সিরাতুন নবী (সা.) উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও ধর্মতত্ত্ব ও ইসলামি শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড, আ ব ম ছিদ্দিকুর রহমান আশ্রাফীর সভাপতিত্বে ও অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম ও অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমানের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. এয়াকুব আলী, ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি স্বতন্ত্র গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করা হবে, যেখানে মহানবী (সা.)-এর জীবন, আদর্শ ও কর্ম নিয়ে বিশেষভাবে গবেষণা করা হবে। সেই গবেষণার ফলাফলকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া হবে, যাতে মহানবীর শিক্ষা ও নীতিমালা আরও বিস্তৃতভাবে পৌঁছে যায়। বর্তমান বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ আমাদের বিচলিত করছে। তবে এ সমস্যা মোকাবিলার জন্য আমরা প্রায়ই দূরের কিছু খুঁজে বের করার চেষ্টা করি, যা কার্যকর নয়। তিনি জোর দেন পৃথিবীর আনাচকানাচ খুঁজে বেড়াানোর প্রয়োজন নেই। আমরা কি জর্জ বার্নাড শর সেই কথাটি ভুলে গেছি প্রশ্ন ছুড়ে উপাচার্য দৃঢ়তার সাথে বলেন, আমাদের মহানবীর আদর্শ অনুসরণ করলেই সমস্যার সমাধান সম্ভব।’

উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী বলেন, ‘মহানবী (সা.)-এর জীবনভিত্তিক আলোচনাকে আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন। আমাদের লক্ষ্য হতে হবে মানুষকে মহানবীর দর্শনের আলোকে গড়ে তোলা। কারণ, তার জীবন ও শিক্ষা আজও আমাদের জন্য আলোকবর্তিকা, যা অনুসরণ করলে আমরা সমাজে সমতা, শান্তি ও মানবাধিকারের বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হব।’


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!