‘ক্যাম্পাস নিয়ে করো না আহামরি আশা, খুন হয় এই ক্যাম্পাসে, লাশ থাকে পুকুরে ভাইসা’

শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদী এবং সতর্কতামূলক আগমনি বার্তা
শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদী এবং সতর্কতামূলক আগমনি বার্তা  © টিডিসি ফটো

‘হে নবীন, ক্যাম্পাস নিয়ে করো না আহামরি আশা, খুন হয় এ ক্যাম্পাসে, লাশ থাকে পুকুরে ভাইসা’ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে এভাবেই একটি প্রতিবাদী এবং সতর্কতামূলক আগমনি বার্তা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। 

গত ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আল কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে হলের পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় সাজিদের খুনিদের দ্রুত গ্রেফতার, হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি এবং নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে ক্যাম্পাস জুড়ে দেয়াল লিখন করেছে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ভবন থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অ্যাকাডেমিক ভবন এবং অন্যান্য জায়গায় দেয়াল লিখন কর্মসূচি পালিত হয়।

সাজিদের স্মরণে হত্যার বিচার দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্রতিবাদী স্লোগানে দেয়াল ভরিয়ে দেয়। তন্মধ্যে ‘শহীদ সাজিদ হত্যার বিচার চাই’, ‘পরের লাশটা আপনি নয়তো?’, ‘স্যার, আর কোনো সাজিদের লাশ পড়বে না তো?’, ‘আসলাম পড়তে, ফিরলাম লাশ হয়ে’, ‘তুমি কে আমি কে, সাজিদ সাজিদ’, ‘সাজিদ হত্যার তদন্ত কতদূর?’, "আমার ভাই মরলো কেন, প্রশাসন জবাব দে” এবং ‘সাজিদ ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’ অন্যতম।

আরও পড়ুন: খুবির একই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আরেক ছাত্রী’র যৌন হয়রানির অভিযোগ

দেয়াল লিখনকারী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘সাজিদ হত্যার এক মাস পেরিয়ে গেলেও ঘুণে ধরা প্রশাসন এখনো অপরাধী শনাক্ত করতে পারেনি। গ্রাফিতিটা করা হয়েছে মূলত সাজিদকে যেন আমরা কোনোভাবেই ভুলে না যাই। ক্যাম্পাস প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ঘটনা ঘটে থাকে যার আড়ালে সাজিদের ইস্যুকে চাপা পরে যেতে পারে। সেটা যাতে না হয় তাই গ্রাফিতিগুলো করা। এসব গ্রাফিতি বা লেখনীগুলো দেখে যেন সবার মনে পড়ে যে, সাজিদের খুনি এখনো বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং সাজিদ এখনো সুবিচার পায়নি। ক্যাম্পাসের প্রতিটি দেওয়ার লাল রঙে রাঙিয়ে যাবে যতদিন না আমরা সাজিদের হত্যার ন্যায়বিচার পাচ্ছি।’

দেয়াল লিখন বা গ্রাফিতি অঙ্কনের মতো ক্ষেত্রে নাম প্রকাশে তারা কেন অনিচ্ছুক তা জানতে চাইলে বলেন, গ্রাফিতি জিনিসটা করা হয় মূলত লোকচক্ষুর আড়ালে। কাউকে কোন কিছু না জানিয়ে হঠাৎ করেই কোন কিছু বিষয়ে প্রতিবাদমূলক বার্তা দেয়া গ্রাফিতি বা দেয়াল লিখনির অন্যতম উদ্দেশ্য। গ্রাফিতির এই ধর্ম ও চেতনার আদর্শেই এই গ্রাফিতি করেছি। এছাড়াও ক্যাম্পাসের বর্তমান যে পরিবেশ পরিস্থিতিতে আমরা নিজেদেরকে নিরাপদ বোধ মনে করছি না। প্রশাসন যে ১৭৫ একরে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবেন, সেই আস্থাও রাখতে পারছি না। তাই সঙ্গতকারণেই আমাদের নাম হাইলাইট হোক সেটা চাচ্ছি না। 

সাজিদ হত্যার তদন্তের অগ্রগতি জানতে চাইলে ইবি থানার ওসি মো. মেহেদী হাসান বলেন, সাজিদ হত্যার ব্যাপারে আমরা সব এঙ্গেল থেকেই কাজ করছি। সাজিদের মোবাইল পাসওয়ার্ড দিয়ে লক করা ছিল যা আমরা খুলতে পারিনি। সেটা খুলে তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন মেসেজ আদান-প্রদানের তথ্য, কোন মেসেজ ডিলেট হয়ে থাকলে তা উদ্ধারের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল কিন্তু এখনো আমরা তার রিপোর্ট হাতে পাইনি। আগামী সপ্তাহে এটি দেওয়া কথা রয়েছে। তদন্তের কার্যক্রম অব্যাহত আছে তবে এখনও উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি হয়নি। হত্যার জট খুলতে আরো কয়েকটা দিন সময় লাগবে।

প্রসঙ্গত, গত ১৭ জুলাই বিকেলে শাহ আজিজুর রহমান হলের পুকুর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আল কোরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাজিদ আবদুল্লাহর ভাসমান লাশ উদ্ধার করে শিক্ষার্থীরা। প্রথমে পানিতে ডুবে মৃত্যুর ধারণা করা হলেও ফরেনসিক রিপোর্টে জানা যায় সাজিদকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। তারপর থেকেই সাজিদ হত্যার বিচার ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে আন্দোলন করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে প্রশাসনের কাছে সরকারের উচ্চপর্যায়ের তদন্ত সংস্থার মাধ্যমে তদন্তের সুপারিশ করে প্রশাসনের গঠিত ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি। 


সর্বশেষ সংবাদ