দ্বিতীয় দিনের মতো ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ, নেমেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
প্রকাশ্যে পাথর মেরে হত্যা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৫, ০৬:১১ PM , আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৫, ০৩:৫৯ PM
রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ সোহাগকে প্রকাশ্যে পাথর মেরে নৃশংসভাবে হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করেছেন সারাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। আজ শনিবার (১২ জুলাই) এই বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। এসব বিক্ষোভ থেকে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।
দুপুর ১টার দিকে রাজধানীর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে বিক্ষোভে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। ‘ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষার্থী সমাজ’ ব্যানারে এই বিক্ষোভ হয়। এর আগে দুপুর ১২টার দিকে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভ করেছেন। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভ করেন। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন সরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভে অংশ নেন। তাছাড়া ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা আলাদা আলাদাভাবে বিক্ষোভে অংশ নেন।
জানা যায়, গত বুধবার (৯ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টায় ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯) জনসমক্ষে পিটিয়ে ও পাথর দিয়ে বুক ও মাথা থেঁতলে দিয়ে হত্যা করা হয়। গতকাল শুক্রবার (১১ জুলাই) এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে হত্যাকাণ্ডে যাদের দেখা যায়, তাদের মধ্যে বিএনপির অঙ্গসংগঠন যুবদল ও সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকর্মী শনাক্ত হয়েছে। ফলে এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিএনপির ব্যাপক সমালোচনা চলে। পরে সন্ধ্যা ও রাতে দেশের অন্তত ২৫টি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। এদিকে, আজ শনিবার দ্বিতীয় দিনের মতো ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন তারা। এদিন নেমেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও।
ইডেন কলেজ
ব্যবসায়ী লাল চাঁদ সোহাগকে প্রকাশ্যে পাথর মেরে নৃশংসভাবে হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে শুক্রবার রাতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা। দ্বিতীয় দিন আজ দুপুরের দিকে ফের কর্মসূচি পালন করেন তারা। বেলা ১২টার দিকে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে তারা মানববন্ধন করেন।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনুস খান স্কলার গার্ডেন-১ হলের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নম্বর গেটে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে এবং পরবর্তীতে খাগানের উদ্দেশে রওনা হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘চাঁদা লাগলে চাঁদা নে, আমার ভাইকে ফিরিয়ে দে’, ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘পাথর মেরে সোহাগ খুন, বিএনপি জবাব দে’,‘চাঁদা তুলে পল্টনে, ভাগ যায় লন্ডনে’, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি চলবে না’ সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা এ সময় ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘যুবদলের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, 'আমার ভাই মরলো কেনো, তারেক জিয়া জবাব চাই', 'চাঁদা তুলে পল্টনে, ভাগ যায় লন্ডনে', ‘যুবদলের অনেক গুন, রাস্তাঘাটে মানুষ খুন’, ‘রাস্তাঘাটে মানুষ মারে, ইন্টেরিম কি করে,’ ‘যুবদলের অনেক গুন, পাথর দিয়ে করছে খুন,’ ‘১২৩৪, চাঁদাবাজ দেশ ছাড়’ ইত্যাদি স্লোগান দেয়।
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
দুপুর সাড়ে তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেট থেকে শুরু করে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে আবারও মেইন গেটে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’; ‘যুবদলের অনেক গুণ, পাথর মেরে সোহাগ খুন’; ‘যুবদলের চাঁদাবাজরা, হুঁশিয়ার সাবধান’; ‘যুবদলের সন্ত্রাস, রুখে দেবে ছাত্রসমাজ’; ‘বিএনপির সন্ত্রাসেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’; ‘আমার ভাই মরল কেন? তারেক রহমান জবাব দে’; ‘মিটফোর্ড খুন কেন? তারেক রহমান জবাব দে’; ‘সারা দেশে সন্ত্রাস কেন? বিএনপি জবাব দে’; ‘জ্বালোরে জ্বালো আগুন জ্বালো’ ইত্যাদি বলে স্লোগান দেন।
গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হল চত্বর থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘যুবদলের অনেক গুণ, পাথর মেরে মানুষ খুন’; ‘সন্ত্রাসীদের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’; ‘চাঁদাবাজের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’; ‘চাঁদা তোলে পল্টনে, ভাগ যায় লন্ডনে’; ‘জ্বালাওরে জ্বালাও, চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে আগুন জ্বালাও’; ‘বিএনপির সন্ত্রাস, বন্ধ করো করতে হবে’; ‘বিএনপির অনেক গুণ, ৯ মাসে ১৫৪ জন খুন।’
বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি
দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়টির মেঘনা ভবনের সামনে এ বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়। এ সময় শিক্ষার্থীর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে স্লোগান দেন। পরে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে মিছিল নিয়ে মিরপুর ১২ নম্বর প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালের মেঘনা ভবনের সামনে শেষ হয়।
বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের বিক্ষোভ
এই হত্যার প্রতিবাদ ও বিচার চেয়ে বিক্ষোভ করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি তিতুমীর কলেজ, তেজগাঁও কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ
বেলা ১১টায় সারাদেশে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা ছাত্রশিবির এক বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করেছে। মিছিলটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে তাঁতিবাজার মোড় অতিক্রম করে মিটফোর্ড হাসপাতালে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। পরে মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।